বাম গণতান্ত্রিক জোটের হুঁশিয়ারি : দমন-পীড়ন করে গদি রক্ষা করা যাবে না

আগের সংবাদ

চার কারণে ভ্যাট আদায়ে বিপর্যয়

পরের সংবাদ

উন্নয়নশীল মর্যাদা পেলে থাকবে না রপ্তানিতে নগদ সুবিধা : খোঁজা হচ্ছে বিকল্প সহায়তার উপায়

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আগামী ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি তকমা কাটিয়ে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাবে বাংলাদেশ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশ হলে তখন রপ্তানিতে নগদ সহায়তা কিংবা ভর্তুকি দেয়া যায় না। সংস্থাটির সদস্য হওয়ায় এ নিয়ম মানার বাধ্যবাধকতা রয়েছে বাংলাদেশের।
মূলত এ কারণেই ২০২৬ সালের মধ্যে রপ্তানিতে নগদ সহায়তা বা ক্যাশ ইনসেনটিভ তুলে নেবে সরকার, তবে দেয়া হবে অন্য কোনো সহায়তা। গত আড়াই দশক ধরে চলে আসা সুবিধাটি বাতিল হলে বিকল্প কী ধরনের সহায়তা দেয়া যায়, এখন খোঁজা হচ্ছে তার উপায়। অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে- নগদ সহায়তা বাতিল হলে রপ্তানিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে কিনা, তা নিয়ে একটি সমীক্ষা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি বিকল্প সুবিধাগুলো কী হতে পারে, কাজ করছে সেটি নিয়েও। এ ক্ষেত্রে পরিবহন এবং সেচকাজে জ¦ালানি খরচ কমানো বা অন্য কোনো সুবিধা দেয়া যায় কিনা, ভাবা হচ্ছে সেটিও।
জানা গেছে, গত অর্থবছরে রপ্তানিতে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা নগদ সহায়তা দেয়া হয়। ওই অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয় ছিল ৫ হাজার ২০০ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হারে যা প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান ৪ হাজার ২৬৭ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৪২টি খাত সর্বনি¤œ ১ থেকে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা পাচ্ছে। রপ্তানি আয়ের এফ ও বি (ফ্রেইট অন বোট) মূল্যের বিপরীতে উল্লিখিত হারে নগদ সহায়তা দেয়া হয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ অনেক দেশেই রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দেয়া হয় না। সেই পথেই হাঁটছে বাংলাদেশও। বিশেষ করে ভারত ও ভিয়েতনামে বিকল্প কী ধরনের সুবিধা দেয়া হচ্ছে, তা পরীক্ষা করে দেখছে সরকার। সূত্র জানায়, নগদ সহায়তা বাতিল হলে দেশীয় রপ্তানি খাতে কী ধরনের সম্ভাব্য ঝুঁকি আসতে পারে তা নিয়ে একটি সমীক্ষা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি বিকল্প সুবিধা দেয়ার বিষয়টি নিয়েও কাজ চলছে।
এলডিসি থেকে বের হতে পারলে উজ্জ্বল হবে দেশের ভাবমূর্তি। ক্রেডিট রেটিং উন্নত হওয়ায় সহজ হবে বিদেশি ঋণ পাওয়া। বাড়বে সরাসরি বিদেশি বিনিযোগ বা এফডিআইও। তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ রপ্তানি খাতে। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে বিশ্ববাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে না বাংলাদেশ। এতে তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়বে রপ্তানি আয়।
যদিও এ নিয়ে উদ্বিগ্ন নন স্থানীয় রপ্তানিকারকরা। তারা বলেছেন, বাংলাদেশের বড় বাজার হচ্ছে ইউরোপ। সেখানে ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কসুবিধা পাবে বাংলাদেশ। লম্বা সময় আছে প্রস্তুতি নেয়ার। আর যুক্তরাষ্ট্রে অন্য দেশের সঙ্গে প্রযোজ্য হারে শুল্ক দিয়ে রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। কাজেই উত্তরণ-পরবর্তী রপ্তানি খাত নিয়ে বাংলাদেশের কোনো ভয় নেই। তবে কিছুটা সমস্যায় পড়তে পারে জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া কিংবা ভারতের বাজারে। এসব দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় বাংলাদেশ।
এ ব্যাপারে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, নগদ সহায়তা প্রত্যাহার হওয়া নিয়ে আমরা শঙ্কিত নই। তবে তার দাবি, রপ্তানি ব্যাহত করে এমন বাধাগুলো দূর করার পাশাপাশি কমাতে হবে ব্যবসার খরচ এবং আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় ঘুষ-দুর্নীতি।
বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিমও মনে করেন, নগদ সহায়তা না থাকলে ভয়ের কিছু নেই। তিনি বলেন, আমরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। উচ্চ মূল্যের পোশাক বানানোর দিকে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। পণ্যের বৈচিত্র্যতা আর মূল্যসংযোজন বাড়াতে পারলে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কঠিন হবে না।’
এ ব্যাপারে গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, নগদ সহায়তা উঠে গেলে পোশাক খাতের অসুবিধা হবে না। তবে আরো কিছু খাত আছে, যেগুলো বেশি হারে সুবিধা পাচ্ছে সেসব খাতে প্রভাব পড়তে পারে। এ জন্য ডাব্লিউটিওর সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখে ‘পরোক্ষ সুবিধা’ দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়