বাম গণতান্ত্রিক জোটের হুঁশিয়ারি : দমন-পীড়ন করে গদি রক্ষা করা যাবে না

আগের সংবাদ

চার কারণে ভ্যাট আদায়ে বিপর্যয়

পরের সংবাদ

অবৈধ মোবাইল লেনদেন : গ্রেপ্তার ১৬ > ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে ১ বছরে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) এজেন্ট ব্যবসার আড়ালে গত এক বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ প্রায় ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে। বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়- এসব এমএফএস সেবা ব্যবহার করে হুন্ডি কার্যক্রম চালিয়ে আসা এমন ৫ হাজারের বেশি এজেন্টের সন্ধান পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ঢাকা ও চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ও সাইবার ক্রাইম ইউনিট।
গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে নগদ ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৬৮০ টাকা, ৩টি সিমে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ৪৭ হাজার ২২৯ টাকা ও ৩৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। গত ৪ মাসে তারা ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাচার করেছেন। এ ঘটনায় মোট ৩টি মামলা হয়েছে।
সূত্র বলছে, এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট ও ক্যাশ ইন-আউট পদ্ধতিতে লেনদেন করে থাকে। তবে সিআইডি তদন্তে নেমে জানতে পারে জয় কম্পিউটার নামে চট্টগ্রামের একটি বিকাশ এজেন্ট প্রতিষ্ঠান গত এপ্রিল-আগস্ট মাস পর্যন্ত ৭ হাজার ৮২৫টি লেনদেনের মাধ্যমে সর্বমোট ৬ কোটি ৬ লাখ ২৪ হাজার ৮৫৪ টাকা শুধু ক্যাশ ইন করেছে। যার অধিকাংশই প্রবাসীদের আত্মীয়-স্বজনদের বিকাশ হিসাবে ক্যাশ ইন করা হয়। অবৈধ কারবারে জড়িতরা শুধু ক্যাশ ইন লেনদেনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকায় সিআইডির সন্দেহ আরো জোরদার হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, দেশে ডলারের দাম বাড়াসহ অর্থনৈতিক অস্থিশীলতার ঘটনায় তদন্ত শুরু করে সিআইডি। এরই ধারাবাহিকতায় এমএফএস এজেন্ট ব্যবসার আড়ালে হুন্ডি কারবারে জড়িত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- আক্তার হোসেন, দিদারুল আলম সুমন, খোরশেদ আলম ইমন, রুমন কান্তি দাস জয়, রাশেদ মঞ্জুর ফিরোজ, মো. হোসাইনুল কবির, নবীন উল্লাহ, মো. জুনাইদুল হক, আদিবুর রহমান, আসিফ নেওয়াজ,

ফরহাদ হোসাইন, আবদুল বাছির, মাহাবুবুর রহমান সেলিম, আবদুল আউয়াল সোহাগ, ফজলে রাব্বি ও শামীমা আক্তার। এদের মধ্যে ৬ জন বিকাশ এজেন্ট, ৩ জন বিকাশের ডিস্ট্রিবিউটর সেলস অফিসার, ৩ জন বিকাশের ডিএসএস, দুজন হুন্ডি এজেন্ট, একজন হুন্ডি এজেন্টের সহযোগী ও একজন হুন্ডি পরিচালনাকারী।
সিআইডি প্রধান বলেন, রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ। সা¤প্রতিক সময়ে বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির ওপর যে চাপ তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলার জন্য সরকার অত্যন্ত তৎপর। হুন্ডি সবসময় রিজার্ভের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের অর্থনীতির এ ঝুঁকি মোকাবিলায় হুন্ডি কার্যক্রমের বিষয়ে নজরদারি শুরু করে সিআইডি। অনুসন্ধানে জানা যায়, একটি সংঘবদ্ধ চক্র অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার ও দেশের বাইরে অবস্থানরতদের কষ্টার্জিত অর্থ বিদেশ থেকে বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং অপরাধ করে আসছে।
তিনি আরো বলেন, অপরাধীরা ৩টি দলে ভাগ হয়ে কাজটি করে থাকে। প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে ও দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করতে চায় তাদের দেয়। দ্বিতীয় গ্রুপে আছে অর্থ পাচারকারী ও তাদের সহযোগীরা। তারা দেশীয় মুদ্রায় ওই অর্থ এমএফএস এজেন্টদের দেয়। তৃতীয় গ্রুপ তথা এমএফএস এজেন্টরা বিদেশে অবস্থানকারীর কাছ থেকে প্রাপ্ত এমএফএস নম্বরে দেশীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে।
সিআইডি প্রধান বলেন, বিদেশ থেকে যারা অবৈধভাবে টাকা পাঠাচ্ছেন তারাও হয়তো জানেন না। আবার দেশে যাদের কাছ থেকে টাকা পাচ্ছেন তারাও হয়তো সরল মনেই টাকাগুলো নিচ্ছেন। তবে আমাদের বার্তা হলো- যারা টাকা পাঠাচ্ছেন তাদের সচেতন হওয়া উচিত। প্রবাসীদের আত্মীয়-স্বজন যারা দেশে আছেন তাদেরও সচেতন হওয়া উচিত। বুঝে বা না বুঝে কিংবা কারো প্ররোচনায় হোক- কেউ অবৈধপথে টাকা পাঠানোর বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ডলারের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কেন অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা গেল না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আলী বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত না পাওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। সিআইডির গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা তথ্যে মিল পাওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি প্রশ্ন রাখেন- সরকার বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দিচ্ছে, এর পরেও বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা না পাঠিয়ে অবৈধভাবে কেন টাকা পাঠাচ্ছে বাংলাদেশিরা?
সিআইডি প্রধান বলেন, বিষয়টি নিয়ে স¤প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আমাদের একটি বৈঠক হয়েছে। আমার বিশ্বাস এর একটি সুষ্ঠু সমাধান হবে। সিআইডির তৎপরতায় এরইমধ্যে অবৈধ কারবারিরা সরে আসতে শুরু করেছে। আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করি। সিআইডি ৫ হাজার এমএফএস এজেন্টকে নজরদারির মধ্যে রেখেছে। দু’একদিনের মধ্যে অবৈধভাবে লেনদেন ৫০-৬০ শতাংশ কমে আসবে বলে আমরা আশা করছি।
তিনি বলেন, ১৪৫টির মতো মামলা সিআইডিতে রয়েছে। যা ৫ বছর আগের। বেশিরভাগ মামলায়ই হাইকোর্টের আদেশ থাকে। আমি নির্দেশনা দিয়েছি- দুই বছরের বেশি যেন কোনো মামলা না থাকে ও এক বছরের মধ্যে সব মামলার কাজ শেষ করতে হবে।
সিআইডির সাইবার গোয়েন্দা সূত্র বলছে, একটি ডিস্ট্রিবিউশন হাউজকে এমএফএস কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনুমোদন দিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো। এর অধীনে থাকে ডিএম, ডিএসএস ও ডিএসও। আর ডিএসও এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে থাকে। একজন বিকাশ এজেন্ট মাসে ৩০ লাখ টাকার লেনদেন করলেও, তার কমিশন ২-৩ হাজার টাকার মতো হয় মাত্র। সেক্ষেত্রে লেনদেন বাড়াতে এজেন্টদের ডিএসওর পক্ষ থেকে চাপ থাকে অনেক সময়। আর তা না হলে সিম নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। অনেকেই হয়তো লেনদেন বাড়ানোর চাপে অবৈধ কাজ করছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে এজেন্টদের সিমগুলো ডিএমওর মাধ্যমে অন্যত্র মাসিক ২ হাজার টাকা ভাড়া দেয়া হচ্ছে। এ সুযোগেও অবৈধ লেনদেন হচ্ছে। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানা, খিলগাঁও মডেল থানা ও মোহাম্মদপুর থানায় ৩টি পৃথক মামলা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়