গাজীপুরে সালনা রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট উদ্বোধন

আগের সংবাদ

ব্যবসায়ীদের দাবি : দাম বাড়িয়েও পোষাচ্ছে না

পরের সংবাদ

পকেট কাটছে টয়লেট্রিজ পণ্য : উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ভোক্তা অধিদপ্তরের তলব

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানোর প্রভাব সব ক্ষেত্রে। পাশাপাশি এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে সব ভোগ্যপণ্যের দাম চড়া। বিষয়টি নিয়ে ভোক্তার পাশাপাশি সরকারও চিন্তিত। আর তাই সরকারের বিভিন্ন মহলের জোর তদারকি শুরু হয়েছে। ফলে স্বাভাবিক না হলেও কিছুটা সহনীয় হয়েছে এসব পণ্যের দাম।
সবাই যখন চাল, তেল, পেঁয়াজের বাড়তি দামে অস্থির তখন নীরবে ধাপে ধাপে ভোক্তার পকেট কাটছে কনজ্যুমার ও টয়লেট্রিজ পণ্য। বড় বড় কোম্পানিগুলো কোনো রকম জানান না দিয়েই সাবান, টুথপেস্ট, শ্যাম্পু, ডিটারজেন্টসহ অতি প্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটছে। এক মাসের ব্যবধানে এসব পণ্যের দাম একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে বলে জানান খুচরা বিক্রেতারা।
কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্য বলছে, মাসখানেক আগে ৫৫ টাকায় বিক্রি হওয়া নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের সুগন্ধি সাবানের জন্য এখন গুনতে হচ্ছে বাড়তি ১০ টাকা আর মাস ব্যবধানে কেজিতে ২০-২৫ টাকা বেড়েছে ডিটারজেন্টের দাম। পিছিয়ে নেই টুথপেস্ট, ব্রাশ কিংবা হ্যান্ডওয়াশও।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপে চিড়েচ্যাপ্টা ভোক্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে মাঠে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আজ বুধবার সাবান, ডিটারজেন্ট, টুথপেস্ট, লিকুইড ক্লিনারসহ নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য বাড়ানোর বিষয়ে উক্ত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভারসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে ডাকা হয়েছে। কেন সাবান, ডিটারজেন্ট, পেস্টের দাম এত বাড়ল তা নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে, এটা কতটুকু যৌক্তিক তাও জানতে চাওয়া হবে। এজন্য এসব পণ্যের দুই বছরের আগের দাম, ছয়মাস আগের দামসহ বর্তমান দামের তথ্যসহ আসতে বলা হয়েছে।
সফিকুজ্জামান বলেন, সিঙ্গার কোম্পানি ঈদের বিজ্ঞাপন প্রচার করছে যেখানে লেখা ১০০% নিশ্চিত ক্যাশব্যাক। তাদেরও আগামীকাল ডেকেছি। আমার মনে হয়, এটা তারা বৈধভাবে প্রতারণা করছে। ভোক্তারা প্রতিটা জায়গায় প্রতারণার স্বীকার হচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর সমাধান দরকার। মিডিয়াতে খবর আসার কারণে ভোক্তারা সচেতন হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি। এ কারণে তারা আগের চেয়ে বেশি অভিযোগ পাচ্ছেন বলে জানান।
রাজধানীর খিলগাঁও বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানান, প্রায় সব ধরনের প্রসাধনীর দাম বেড়েছে। ১৫০ গ্রাম ওজনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গায়ে মাখার সাবানে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আগে গায়ে মাখার যেসব সাবান ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হত; এখন তা ৫৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কাপড় ধোঁয়ার জন্য এক কেজি ওজনের যেসব গুঁড়ো সাবান ৯৫ টাকা বিক্রি হয়ে আসছিল তা এখন ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর ১১৫ টাকা মূল্যের গুঁড়ো সাবানের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। এ ছাড়া কাপড় ধোয়ার সাবানও ৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া লিক্যুইড ক্লিনার হারপিকের

দাম ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ঘোষণার পর পরই এসব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন বাজারে বেশি দামের নতুন পণ্যই সরবরাহ করা হচ্ছে। আগের দামের কোনো পণ্য বাজারে এখন নেই। খিলগাঁওয়ের রুচি ফাস্ট ফুড স্টোরের মনির হোসেন জীবন বলেন, কোম্পানিরা সাবান- ডিটারজেন্টের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। পনের দিন আগেও ১৫০ গ্রাম ওজনের যে লাক্স সাবান ৬০ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন তা ৭০ টাকা। লাইফবয় সাবানেও ৫ টাকা বেড়েছে। রিন গুঁড়ো সাবান ১২৫ টাকা ছিল তা এখন ১৪০ টাকা হয়েছে। ইউনিলিভার কোম্পানির সব কিছুর দাম আগের থেকে বেড়েছে। তিনি বলেন, সাত থেকে ১৫ দিনের ব্যবধানেই অন্তত ৫ টাকা করে দাম বাড়ছে এসব পণ্যের।
এসব ছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানির টুথপেস্টের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ১০০ গ্রামের পেপসোডেন্ট টুথপেস্ট কয়েকদিন আগে ছিল ৮০ টাকা। এখন তা ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১৬০ গ্রাম ওজনের টুথপেস্ট বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত। ২০০ গ্রাম ওজনের নারিকেল তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। যা কয়েকদিন আগেও ছিল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। এসব পণ্যের দাম বাড়ানোর ব্যাপারেও জ্বালানি তেলের কথা উল্লেখ করে এ বিক্রেতা বলেন, এখন যেই পণ্যের অর্ডার দেই সব কিছুই নতুন রেটে নিতে হচ্ছে। আগের চেয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দিয়ে নতুন পণ্য কিনতে হচ্ছে। কয়েকদিন আগে নতুন দামের ক্লোজআপ টুথপেস্ট বিক্রি করছি ১২০ টাকায় অথচ একমাস আগেও ১১০ টাকা বিক্রি করেছিলাম।
ক্রেতারা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর একের পর এক সবকিছুর দামই বেড়ে চলছে। কোনো কিছুর দাম বাড়লে সেটা আর কমার কোনো নজির নেই। সবকিছুর দাম এভাবে বাড়তে থাকায় তাদের নাভিশ্বাস বাড়ছে। খিলগাঁও বাজারে শরিফুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, সব কিছুর দামই তো বাড়ছে। অথচ আমাদের বেতন বাড়ানো হচ্ছে না। ব্যয়ের সঙ্গে আমাদের আয় বাড়লে তো অসুবিধা নেই। কিন্তু তা কখনোই করা হচ্ছে না। শুধু আমাদের পকেট কাটা হচ্ছে। প্রসাধনী ও পরিচ্ছন্নতা সামগ্রীর দাম বাড়ানোর ব্যাপারে বিশ্ববাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি এবং ডলারের দাম বাড়ার কারণকে উল্লেখ করছেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের ভাষ্য, বেশ কিছুদিন ধরেই ডলারের দাম বেড়েছে। এতে এলসি করতে আগের চেয়ে বেশি ব্যয় হচ্ছে। তাই দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়