গাজীপুরে সালনা রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট উদ্বোধন

আগের সংবাদ

ব্যবসায়ীদের দাবি : দাম বাড়িয়েও পোষাচ্ছে না

পরের সংবাদ

নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা পেলেন সচ্ছলরা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

তৈয়বুর রহমান, কুড়িগ্রাম থেকে : জেলার উলিপুরের সাহেবের আলগা ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পাঠানো টাকা বিতরণে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। মূলত নদী ভাঙনে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা না দিয়ে সচ্ছল পরিবারের মধ্যে তা বিতরণ করা হয়েছে। আর এ কাজটি করেছেন সংশ্লিষ্ট এক ইউপি সদস্য।
জানা গেছে, উলিপুরে সাম্প্রতিক বন্যায় নদী ভাঙনের কারণে অনেকেই সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব। তাদের কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী তার ত্রাণ তহবিল থেকে ঘর মেরামত ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ক্রয়ের জন্য প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে ছয় হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন। সাহেবের আলগা ইউনিয়নেও এমন ১০২ জনের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বরাদ্দকৃত এই অর্থ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সরাসরি সুপারভিশনে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করার কথা। কিন্তু উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নে তা করা হয়নি। উল্টো যাদের ঘরবাড়ি ভাঙেনি এবং সচ্ছল ব্যক্তিদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য।
সরজমিনে গত রবিবার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভাঙন কবলিত চর বাগুয়ায় গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন ওই চরটির পশ্চিম-উত্তর দিকের ২০-২৫টি বাড়ি সাম্প্রতিক বন্যায় সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে সহায়-সম্বলহীন এসব পরিবারের ক্ষতিগস্ত মানুষ চরটির বিভিন্ন জায়গায় কোনো রকম জোড়াতালির ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন।
সরজমিনে কথা হয় ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত রাবেয়া বেগমের সঙ্গে। প্রথমে সাংবাদিক পরিচয় জানতেই তার মেজাজ খারাপ, রাগান্বিত কণ্ঠে বলেন, ‘আমাদের নদী ভাঙনের ছবি তুইল্যা নিয়া যান, আর জাগোর ঘরবাড়ি ভাঙেনি তাগোরে সরকার টাকা দেয়।’
এরপর মেজাজ কিছুটা শান্ত হলে রাবেয়া জানান, মাত্র দুই মাস আগে তার বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর পার্শ্ববর্তী গুচ্ছগ্রামে ছিলেন। মাত্র ২১ দিন হলো চরে অন্যের জায়গায় ধার করে জোড়াতালি দিয়ে একটি ঘর তুলেছেন। তিনি বন্যার সময় ১০ কেজি চাল ছাড়া সরকারি কোনো সাহায্য পাননি। প্রধানমন্ত্রীর সাহায্যের কোনো টাকা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না’। ওই চরে সাম্প্রতিক বন্যার ভাঙনে ক্ষতিগস্ত হাসিনা খাতুন জানান, স্বামী শরিফ উদ্দিনসহ দুই সন্তান নিয়ে অন্যের জায়গায় কোনো রকম মাথা গোঁজার ঠাঁই করে আছেন। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সাহায্য তার ভাগ্যেও জোটেনি। কথা হয় একই চরের রেকাত মোল্লার সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘নদী ভাঙনে সব কিছু হারিয়েছি। এ চরেই আমার মতো বিশ-বাইশটি পরিবার মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে সর্বস্ব হারিয়েছে। এসব পরিবার বর্তমানে চরের বিভিন্ন স্থানে খুপড়ি ঘর তুলে আছে।’ নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এ চরের কেউ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের কোনো সাহায্য পাননি বলেও জানান তিনি।
ওই চরের নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত আবদুস ছালাম, সিরাজুল হক, রশিদসহ অনেকে অভিযোগ করে জানান, সাহেবের আলগা ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার সায়েমকে ভোট না দেয়ার কারণে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের টাকা বিতরণের তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। নদী ভাঙেনি এমন নিজস্ব লোকদের নাম তালিকায় দিয়ে টাকা তুলে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন মেম্বার সায়েম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদী ভাঙেনি অথচ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের সাহায্য পেয়েছেন একই পরিবারের চারজন মনোয়ারা বেগম, স্বামী সাহাবুদ্দিন ও তার ছেলে মকবুল হোসেন, মকবুল হোসেনের স্ত্রী হালিমা বেগম। এদের মধ্যে মকবুল হোসেন রংপুরে বাড়ি করে ব্যবসা করছেন।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল কুমার জানান, এসব তালিকা চেয়ারম্যান, মেম্বাররা তৈরি করেন। যদি এখানে কোনো ত্রæটি ধরা পড়ে, অবশ্যই তার বা তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়