গাজীপুরে সালনা রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট উদ্বোধন

আগের সংবাদ

ব্যবসায়ীদের দাবি : দাম বাড়িয়েও পোষাচ্ছে না

পরের সংবাদ

দুই সিটির ২৭ ওয়ার্ড বেশি ঝুঁকিতে : ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়ঙ্কর রূপে, ঢাকায় এডিস মশা ২২ ভাগ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : কয়েক বছর আগেও বলা হত এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু জ¦র শুধু একটি মৌসুমেই রাজধানীতে বা শহরাঞ্চলে সংক্রমিত হয়। এমন ধারণা পাল্টে দিয়েছে এডিস মশার মিউটেশন। এই জ¦র ছড়াচ্ছে গ্রাম-শহর সবখানেই। আর বছর জুড়েই শনাক্ত হচ্ছে রোগী। ডেঙ্গুর মৌসুম পেরিয়েও এর প্রকোপ বাড়ছে। আগস্ট ও চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কার কথা আগেই জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু ভরা বর্ষায় বৃষ্টি না হলেও গত কয়েক দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি ডেঙ্গুর মৌসুমকে আরো দীর্ঘায়িত করবে বলে মনে করছেন তারা। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় চলতি বছরের সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আনুষ্ঠানিকভাবে এডিস মশার মৌসুম কালীন জরিপের তথ্য প্রকাশিত না হলেও জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি বেড়েছে। সব কিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি যে খারাপের দিকে যাচ্ছে সেই আশঙ্কাই করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি ঢাকার উত্তর সিটি

করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৪৮টি সাইট ও ৪০টি ওয়ার্ডে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬২টি সাইট ও ৫৮টি ওয়ার্ডে এবং ৩ হাজার ১৫০টি হাউজহোল্ডে শেষ হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার উদ্যোগে জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত এডিস মশার মৌসুম কালিন জরিপ। এতে দেখা গেছে রাজধানী ঢাকায় প্রায় ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ কিউলেক্স মশা, বাকি ২২ দশমিক ১ শতাংশ মশা এডিস প্রজাতির। ভেজা মেঝেতে মশার লার্ভা বেশি মিলেছে। এই হার ১৮ দশমিক ১১ শতাংশ, প্লস্টিকের বালতি ১৪ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং প্লাস্টিকের ড্রামে ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ, ফুলের টব ও টায়ারে মিলেছে ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এডিস মশা ডেঙ্গু আর কিউলেক্স মশা ফাইলেরিয়া, ম্যালেরিয়ার মতো রোগের জন্য দায়ী।
এর আগে প্রাক-মৌসুম জরিপে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকায় প্রায় ৯৫ শতাংশের বেশি কিউলেক্স মশা, বাকি ৫ শতাংশের বেশি মশা এডিস প্রজাতির। নির্মাণাধীন ভবনে ৪২ দশমিক ১১ শতাংশ এবং বহুতলা ভবনে ৩১ দশমিক ৫৮ শতাংশ মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।
মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত। জরিপ বলছে ডিএনসিসির ১৩টি ও এবং ডিএসসিসির ১৪টি ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ২০’র বেশি। এর অর্থ হচ্ছে সেগুলো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টি পাত্রে এডিস মশা বা লার্ভা পাওয়া গেছে। আর ১০’র বেশি ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ডিএনসিসির ১৪টি ও ডিএসসিসির ২২টি ওয়ার্ডে। আর ১০’র কম ডিএনসিসির ১২টি ও ডিএসসিসির ২১টি ওয়ার্ডে। ডিএনসিসিতে সর্বোচ্চ ব্রুটো ইনডেক্স ৩৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আর তা মিলেছে ১১, ১৪ এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। এলাকাগুলো হলো মিরপুর, কাফরুল ও গুলশান। আর ডিএসসিসিতে সর্বোচ্চ ব্রুটো ইনডেক্স মিলেছে ৫৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ যা ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। এই এলাকায় রয়েছে আর কে মিশন রোড গোপীবাগ, কমলাপুর, মতিঝিল।
আগামী সপ্তাহের মধ্যেই মৌসুমকালীন জরিপের তথ্য প্রকাশিত হবে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যু হয়েছে। এই সর্বোচ্চের শুরু আছে কিন্তু শেষ নাই। এই সংখ্যাটি দিয়ে বোঝা যায় যে জ¦র হলে মানুষ ঘরে বসে থাকছে না হাসপাতালে যাচ্ছে। আর হাসপাতালে যাওয়াটি ইতিবাচক। বাসায় থাকলে হয় কি রোগীর অবস্থা খারাপ হয়। অন্যদিকে রোগী বাড়ার বিষয়টি হচ্ছে মশা মারার কাজটা যে হচ্ছে সেখানে কমতি আছে।
এখনো ৪৭টি হাসপাতালের তথ্যই দেয়া হচ্ছে কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এমআইএস-এর যে তথ্য আসে সেখানে মূলত সরকারি হাসপাতালে থেকেই আসে। করোনার তথ্যগুলো সব হাসপতাাল থেকেই আসে। এখন ডেঙ্গুরও তথ্য আসছে। আমরা সবাইকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালগুলোর কিছু নিজস্ব কারিগরি আছে। তারা মনে করে তথ্য দিয়ে হয়ত কোনো ঝামেলা হতে পার। ওই জায়গাটায় একটা চ্যালেঞ্জ আছে। একটু একটু করে দৃশ্যপট বদলাচ্ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার ভোরের কাগজকে বলেন, অক্টোবর মাসে সাধারণত ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যায়। কিন্তু এই বৃষ্টির কারণে এই পরিস্থিতিটা একটু পিছিয়ে যাবে। অক্টোবর মাসের ১৫/২০ তারিখের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপটা কমার সম্ভবনাকে একটু দীর্ঘায়িত করল। অক্টোবরের মাঝামাঝির পর থেকে ডেঙ্গু কমতে পারে। বৃষ্টি আরো হলে এই মৌসুম আরো দীর্ঘায়িত হবে। আমাদের হটস্পট ম্যানেজমেন্টটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। একে অন্যকে দোষারোপ না করে সবাই যদি সবার অবস্থান থেকে কাজ করি তাহলে কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। দোষারোপ করে সমস্যার সমাধান হবে না।
মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের ওষুধ ছিটানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি এটিকে কীটনাশকই বলি। যে কীটনাশক নিয়ে ফগিং করা হয় সেটি আসলে মাঠ পর্যায়ে কখনোই কাজ করে না। এটা যে কাজ করে না তা সিটি করপোরেশনও জানে। তারপরেও জনগণকে খুশি করার জন্য দেয়। আমি তো সব সময় এর বিরোধিতা করি। ড্রেনে যে লার্ভিসাইট দেয়া হয় এটা যদি সঠিক নিয়মে সঠিক সময় পরপর দেয়া হয় তাহলে কাজ করে। ল্যাবে পরীক্ষিত এটি। কীটনাশক যে পরিমাণে দেয়ার কথা যে নির্দিষ্ট সময়পর পর দেয়ার কথা সেই ডোজটা দেয়া হয় না। এর কারণে মশা সহনশীল হয়ে যায় এবং মশা মরেও না।
গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৮৪ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। চলতি বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর (১ জানুয়ারি থেকে ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ৩৯৭ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৬ হাজার ৫১৬ জন। এই জ¦রে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৩১ জন। মাস ভিত্তিক হিসাব অনুযায়ী জানুয়ারি মাসে ১২৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২০ জন, মার্চে ২০ জন, এপ্রিলে ২৩ জন, মে মাসে ১৬৩ জন এবং জুন মাসে ৭৩৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে, আর মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। জুলাই মাসে রোগী ছিল ১ হাজার ৫৭১ জন আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৯ জন। আগস্টে রোগী ছিল ৩ হাজার ৫২১, আর ১১ জনের মৃত্যু হয়। সেপ্টেম্বর মাসের ৬ দিনে রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২১৬ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়