মা-বাবার অভিযোগ : মেয়ে ও জামাই বাড়ি দখল করতে মরিয়া

আগের সংবাদ

প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল : প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর

পরের সংবাদ

সংগীতের নক্ষত্র গাজী মাজহারুল আনোয়ার

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

যে দিনগুলোতে বাংলাদেশের মানুষ পছন্দের গান শোনার জন্য বেতারে কান রাখতেন, যখন দেশে টেলিভিশন চ্যানেল ছিল মাত্র একটি, সে সময় দিনে অনেকবার শোনা যেত গাজী মাজহারুল আনোয়ার রচিত গান। চলে গেলেন বাংলাদেশের অনেক কালজয়ী দেশাত্মবোধক গানের রচয়িতা গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক। ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’, ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’, ‘আমার মন বলে তুমি আসবে’, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘সাগরের তীর থেকে’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো’- এ রকম অসংখ্য হৃদয়ে দোলা লাগানো কালজয়ী গানের গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার ৭৯ বছর বয়সে গত রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে সবাইকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নিয়েছেন।
কত জনপ্রিয় গান লিখেছেন এবং সুর দিয়েছেন। তিনি আর কখনোই ফিরবেন না। তবে তার সৃষ্টি তাকে অমর করে রাখবে আজীবন। বাংলাদেশে সাংস্কৃতিকচর্চা যতদিন থাকবে ততদিন বেঁচে থাকবেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। সংস্কৃতির এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে তার পদচারণা ছিল না। পাঁচ দশকের মতো সময় তিনি দোর্দণ্ড প্রতাপে বাংলাদেশের সংগীতের জগতে বিচরণ করেছেন। ২০০৬ সালে বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের মনোনীত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের তালিকায় ছিল তার রচিত ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল’ এই তিনটি গান। তার লেখা গানে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন শিল্পীর সংগীতের ক্যারিয়ারে উঠে এসেছে। তার জনপ্রিয় অনেক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন প্রয়াত কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহ, রুনা লায়লা, সৈয়দ আব্দুল হাদি, সাবিনা ইয়াসমীন। প্রথম যে গানটির মাধ্যমে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানে শিল্পী রুনা লায়লার অভিষেক হয়েছিল সেটি তার লেখা ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি’। গাজী মাজহারুল আনোয়ার একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালকও ছিলেন। ১৫টির বেশি চলচ্চিত্র পরিচালনা এবং কুড়িটির বেশি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন তিনি। ২০ হাজার গানের রচয়িতা গাজী মাজহারুল আনোয়ারের জন্ম ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। মাত্র ২১ বছর বয়সেই তিনি গীতিকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে তার লেখা প্রথম গান প্রচার হয়। সেই থেকে শুরু। তারপর কেটে গেছে অর্ধশতাধিক বছর। আর তিনি সৃষ্টি করেছেন হাজার হাজার গান। মুগ্ধ করেছেন প্রজন্মের পর প্রজন্মকে। সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা গানের ইতিহাসকে।
বাংলা চলচ্চিত্রের গানে গাজী মাজহারুল আনোয়ার অনন্য। ১৯৬৭ সালে ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ সিনেমার মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রে গান লেখা শুরু করেন। এই সিনেমায় তার রচিত ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’ শীর্ষক গানটি স্থান পায়। এরপর তিনি সিনেমার চিত্রনাট্য রচনাতেও যুক্ত হন। পরবর্তী সময়ে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন নির্মাতা ও প্রযোজক হিসেবেও। তার গীতিকবিতায় উঠে এসেছে মানব জীবনের প্রায় সবকিছুই। তিনি যেমন দেশ ও প্রকৃতি নিয়ে লিখেছেন, তেমনি জীবন, মানবতা, প্রেম, বিরহ নিয়েও রচনা করেছেন গান। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখার সুবাদে গাজী মাজহারুল আনোয়ার দেশের প্রথম পুরস্কার ‘বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল’ লাভ করেছিলেন। ২০০২ সালে তাকে প্রদান করা হয় একুশে পদক। এছাড়া তিনি পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, এস এম সুলতান স্মৃতি পদক, ছয়বার বাচসাস পদকসহ অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

সুপ্রতিম বড়ুয়া
সহযোগী অধ্যাপক, রামু সরকারি কলেজ, কক্সবাজার।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়