মা-বাবার অভিযোগ : মেয়ে ও জামাই বাড়ি দখল করতে মরিয়া

আগের সংবাদ

প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল : প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর

পরের সংবাদ

রংপুরে সড়কে প্রাণ গেল ১০ জনের : চালকের গাঁজা সেবনের খেসারত দিলেন যাত্রীরা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

হাসান গোর্কি, রংপুর ও সিরাজুল ইসলাম বিজয়, তারাগঞ্জ থেকে : রংপুরের তারাগঞ্জে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। নিহতদের মধ্যে ৫ জন ঘটনাস্থলে এবং ৫ জন রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তারা হলেন- বাসের চালক জীবন, ইসলাম পরিবহনের হেলপার তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়াল কুঠির আনোয়ারুল ইসলাম, একই উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের পল্লী চিকিৎসক আনিছার, তারাগঞ্জের আনিছুল ইসলাম ধনঞ্জয়, আনোয়ার হোসেন, নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার তাহসিন পরিবহনের ম্যানেজার মোহসিন আলী সাগর, গাইবান্ধার সাদেক আলী ও সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা অলিউর রহমান জুয়েল। জোয়ানা পরিবহনের চালক ঘাঁজা সেবন করে বাস চালাচ্ছিলেন- এমন অভিযোগ যাত্রীদের।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. শরীফুল হাসান দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মরদেহ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। তিনি জানান, তারাগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত আরো ৫ জন মারা গেছেন মেডিকেল চিকিৎসাধীন অবস্থায়। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন অর্ধশতাধিক। এদের মধ্যে ৫ জনের অবা আশঙ্কাজনক।
তিনি বলেন, আমরা আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। সে জন্য যা কিছু করা দরকার হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাই করা হচ্ছে। হাসপাতালে নিহত ৫ জনের মধ্যে এক জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ৪ জনের লাশ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।
তারাগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ওসি মাহবুব মোরশেদ জানান, গত রবিবার রাতে রংপুর থেকে জোয়ানা পরিবহনের বাসটি সৈয়দপুর যাচ্ছিল। অন্যদিকে ইসলাম পরিবহনের একটি বাস সৈয়দপুর থেকে রংপুরের দিকে আসছিল। রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ঝাকুয়াপাড়ায় শলেয়াশাহ খারুভাজ সেতুর কাছে আসলে দুই বাসের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে হতাহতদের উদ্ধার কাজ শুরু করেন। প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে উদ্ধার তৎপরতা কিছুটা ব্যাহত হয়। এরপর ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ জনের লাশ উদ্ধার করেন। আহত ৪৫ জনকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন নিহত ও আহতদের স্বজনরা। সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আহতদের চিকিৎসা দিতে বেশ বেগ পেতে হয় চিকিৎসক ও নাসর্দের। এ সময় আহতদের সেবা দিতে এগিয়ে আসেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও। এছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা ওষুধসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী দেন আহতদের।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যাত্রী আশেক আলী জানান, রংপুর মেডিকেল কলেজ মোড় থেকে বাস ছাড়তে রাত সাড়ে ১১টা বেজে যায়। সিট বাদেও বাসের ছাদে অনেক যাত্রী তোলেন হেলপার, সুপারভাইজার ও চালক। দ্রুত গতিতে বাস চালিয়ে সৈয়পুরের দিকে যাওয়ার পথে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এর মধ্যেও চালক বাসের গতি কমাননি। যাত্রীরা ধীরে চালানোর অনুরোধ করলেও শোনেনি। এরপর হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। আর কিছুই বলতে পারবো না। জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমি হাসপাতালে।
ওসি মাহবুব মোরশেদ বলেন, জোয়ানা পরিবহনের চালক গাঁজা সেবন করে বাস চালাচ্ছিলেন বলে যাত্রীরা তার কাছে অভিযোগ করেছেন। হেলপারও তার সঙ্গে গাঁজা সেবন করছিলেন। এই অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে দুর্ঘটনায় হতাহতদের দেখতে গতকাল সোমবার সকালে হাসপাতালে ছুটে যান রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান। তিান রোগীদের খোঁজখবর নিয়ে নিহতদের দাফনের জন্য প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার করে টাকা দেন। আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের কথা জানান তিনি।
আহতদের পাশে ছাত্রলীগ : এদিকে তারাগঞ্জে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক যাত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছে ছাত্রলীগও। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই হাসপাতালে ছুটে যান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাব্বির আহমেদসহ নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা আহতদের রক্ত, প্রয়োজনীয় ওষুধ, স্যালাইন ও খাবার পানি সরবরাহ করেন। সাধারণ সম্পাদক তানিম আহসান নিজেও রক্ত দান করেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়