মা-বাবার অভিযোগ : মেয়ে ও জামাই বাড়ি দখল করতে মরিয়া

আগের সংবাদ

প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল : প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর

পরের সংবাদ

মোমেন বাদ যে কারণে : প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে গতকাল সোমবার চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে নয়াদিল্লি গেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর হাইপ্রোফাইল এই রাষ্ট্রীয় সফরের তালিকা থেকে একেবারে শেষ মুহূর্তে বাদ দেয়া হয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুুল মোমেনকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, বিষয়টি ‘বাদ পড়া’ নয়; শারীরিক অসুস্থতার কারণে ভারত সফরে যাননি মোমেন। সিলেট থেকে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলেছে, মন্ত্রী রবিবার রাত থেকে ‘ব্যামারে’ ভুগছেন (অসুখ, সিলেটের আঞ্চলিক শব্দ)। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী দেশের সরকার প্রধান যখন কোনো রাষ্ট্রীয় সফরে যান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্যই তার সঙ্গে সফরসঙ্গী হন। গত রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সঙ্গী হচ্ছেন। শেষ মুহূর্তে তিনি এ সফর থেকে বাদ পড়ে যান। তবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এই সফরে রয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই সূত্র জানিয়েছে, বেশ কিছু দিন ধরে নানা বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচিত হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। স¤প্রতি চট্টগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে ভারত সরকারকে অনুরোধের বক্তব্য দিয়ে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেন তিনি। তাই তাকে এ সফর থেকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সরকারিভাবে এখনো এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
গতকাল সোমবার চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, বিদেশ সফরে কারা যাচ্ছেন, কারা বাদ পড়ছেন তা একমাত্র প্রধানমন্ত্রীই বলতে পারবেন। তবে সফর থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেন বাদ পড়লেন তার ঠিক কারণ আমি জানি

না। তিনি বলেন, হয়তো কোভিড পজেটিভ হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বিভিন্ন সময় অযাচিত মন্তব্য করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। তার এসব অতিকথনে সবশেষ মাত্রা যুক্ত করেছে ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে’ মন্তব্যটি। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের এক মাসেরও কম সময় আগে চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমী উৎসবের অনুষ্ঠানে তার এই মন্তব্য ঘিরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই মন্তব্য বাংলাদেশ এবং ভারত দুই দেশকেই অস্বস্তিতে ফেলেছিল। কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, শীর্ষ বৈঠকে এই অস্বস্তি এড়াতে সফর থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদ পড়ে থাকতে পারেন। এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ড. মোমেন অসুস্থতার কারণে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারত সফরে যাননি। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেন ভারত সফর করছেন না, তা নিয়ে কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করেননি।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, গত রবিবার গভীর রাতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত না যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিমানের বিশেষ ফ্লাইট ঢাকা ছাড়ার আগে দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো এ সম্পর্কে অবগত হয়। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে গত রবিবার বিকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন। সেখানেও তিনি বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে তিনি ভারত সফর করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের তালিকায় নাম থাকলেও একেবারে শেষ মুহূর্তে রবিবার রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদ পড়ায় তারাও অবাক হয়েছেন। চার দিনের এই ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজ মঙ্গলবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের যে বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক : গত মাসে চট্টগ্রামে হিন্দু স¤প্রদায়ের জন্মাষ্টমী উৎসবের অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। সেই অনুষ্ঠানে তিনি তার বক্তৃতায় বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন। সেখানে তিনি বলেন, স¤প্রতি তিনি দিল্লি সফরে গিয়েছিলেন, তখন তিনি বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারতকে অনুরোধ করেছেন। চট্টগ্রামে হিন্দু স¤প্রদায়ের অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেছিলেন যে, আজকে অনেকের বক্তব্য এসেছে যে শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে (শেখ হাসিনা) টিকিয়ে রাখলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে। আমাদের দেশ সত্যিকারভাবে অসা¤প্রদায়িক দেশ হবে। সেজন্য শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করার, সেজন্য ভারতবর্ষ সরকারকে আমি সেই সেই অনুরোধ করেছি, বক্তব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে ‘দেশের মানুষ বেহেশতে আছে’ বলে মন্তব্য করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। এছাড়া এর অনেক আগে মোমেন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তখনো ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়েছিল তার মন্তব্য নিয়ে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়