মা-বাবার অভিযোগ : মেয়ে ও জামাই বাড়ি দখল করতে মরিয়া

আগের সংবাদ

প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল : প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর

পরের সংবাদ

দুর্গোৎসবে নিরাপত্তায় জোর : ৯ সেপ্টেম্বর পূজা উদযাপন পরিষদের বর্ধিত সভা ১১ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : গত বছর দুর্গাপূজার সময় দেশে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। অষ্টমীর দিন থেকে টানা ১৩ দিন দেশের ২৬টি জেলায় পূজামণ্ডপে চলে হামলা ও ভাংচুরের তাণ্ডব। গত বছরের মতো এমন তিক্ত ও ভীতিকর পরিস্থিতি যাতে এ বছর আর না হয় সংখ্যালঘু নেতারা সেই দাবিই করছেন। এ নিয়ে সতর্ক রয়েছে সরকারও। এছাড়া এলাকার ছোট ছোট যেসব পূজামণ্ডপ বা মন্দিরে নিরাপত্তা থাকে না- সেখানে পূজা না করা এবং দুই পক্ষের বিরোধের জেরে পূজা মণ্ডপের সংখ্যা না বাড়ানোর পক্ষে সরকার ও পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা।
সারাদেশে পূজার আয়োজন এবং এ সংশ্লিষ্ট সার্বিক বিষয়ে মতামত তুলে ধরতে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের বর্ধিত সভা। এছাড়া দুর্গোৎসবকে ঘিরে সারাদেশের নিরাপত্তার বিষয়ে সার্বিক আলোচনা করতে ১১ সেপ্টেম্বর হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ওই দিন সকালে ভার্চুয়ালি এই সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, দেশে প্রতি বছরই ১ থেকে দেড় হাজার পূজামণ্ডপের সংখ্যা বাড়ে। প্রথম দিকে সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সেইসব স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করতে না পারায় এক ধরনের চাপে পড়ে যায় প্রশাসন। অনেক এলাকায় আনসার সদস্য মোতায়েন করা হলেও সেটিও পরবর্তী সময়ে আর সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে বেশ কয়েক বছর ধরেই সরকারের পক্ষ থেকে বারবার করেই বলা হচ্ছিল- যেসব এলাকায় অনেক মণ্ডপ হয় কিন্তু নিরাপত্তা থাকে না, অনেক মণ্ডপে সকালবেলা জনসমাগম থাকলেও রাতে সেখানে কেউ থাকে না কিংবা নিরাপত্তা কর্মীরাও থাকে না সেসব মণ্ডপে পূজা না করা। এছাড়া বিভক্ত হয়ে সক্ষমতার প্রদর্শন দেখাতে অনেক এলাকায় একাধিক মণ্ডপে পূজা করা হয়। এমনটা যাতে না হয় সেই কথাটিও বলা হচ্ছিল। এমন কি রাজধানীতেও যাতে রাস্তার উপর প্যান্ডেল করে নতুন করে কোনো পূজামণ্ডপের সংখ্যা না বাড়ে সে বিষয়টি নিয়েও কথা হচ্ছে।
দেশে পূজামণ্ডপের সংখ্যা বাড়ার বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখলেও এই সংখ্যাটি যাতে যৌক্তিকভাবে বাড়ে সেদিকে গুরুত্বারোপ করেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি এবং বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সিনিয়র নেতা কাজল দেবনাথ। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, অযৌক্তিকভাবে পূজামণ্ডপের সংখ্যা বাড়ানো ঠিক নয়। সাংগঠনিক ও পরিবারিক শক্তি দিয়ে সাত্ত্বিকভাবে পূজা করা উচিত। বিভিন্ন এলাকায় বটতলা কিংবা ছোট মন্দির বা মণ্ডপ করে পূজা করা হয়। সারাদিন সেখানে ভক্ত সমাগত হলেও রাতে কোনো

নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে না। আমি আমার মেয়ে বা মাকে যদি ছাপড়া ঘরে বা বটতলায় রেখে বাসায় এসে ঘুমিয়ে থাকতে না পারি তাহলে সেই স্থানে দুর্গা মাকে কীভাবে প্রতিষ্ঠা করে একা রেখে আসব? প্রতিমাসহ পূজার সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষার বিষয়টিও আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পূজা উদযাপন পরিষদের সিনিয়র এক নেতা ভোরের কাগজকে বলেন, সম্পতি মৌলভীবাজার জেলায় পুলিশ সুপারের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, একই এলাকায় যাতে একাধিক পূজামণ্ডপ না হয়। সবাই মিলে একটি পূজামণ্ডপে পূজা করার অনুরোধ করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থেই এমন কথা বলা হয়েছে।
মণ্ডপের সংখ্যা কমানোর কোনো নির্দেশনা এখনো পর্যন্ত পাননি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্র নাথ পোদ্দার। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, মণ্ডপের সংখ্যা বাড়া কমার বিষয়টি সম্পূর্ণই আয়োজকদের সিদ্ধান্ত। আমরা কাউকে পূজা না করার জন্য বলতে পারি না। তবে দুই পক্ষের দ্ব›েদ্বর কারণে পূজামণ্ডপের সংখ্যা বাড়ার বিষয়টিকে আমরা নিরুৎসাহিত করছি। দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের বর্ধিত সভা এবং ১১ সেপ্টেম্বর সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কোন বিষয়ে পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে গুরুত্ব দেয়া হবে- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের কাছ আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি করব। সরকারের পক্ষ থেকে গত বছরও মণ্ডপগুলোতে পুলিশি কোনো ব্যবস্থা ছিল না। কেবলমাত্র আনসার দিয়ে নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে। তবে আমরা পুলিশি পাহারায় কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপিত হোক, তা চাই না। পূজা, ঈদ, বড় দিন কিংবা বৌদ্ধপূর্ণিমা যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করতে পারি। সেই নিরাপত্তা সরকার কোন কৌশলে বাস্তবায়ন করবেন, সেটি সরকারই নির্ধারণ করবেন। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এই দাবি তো আমরা করতেই পারি। কতটুকু বাস্তবায়ন হবে বা হচ্ছে সেটি সরকার বুঝবে। আমরা সার্বিকভাবে নিরাপত্তা চাইব। সরকারের পাশাপাশি আয়োজকদেরও নিজস্ব প্রস্তুতি থাকতে হবে। আর্থিক কিংবা নিরাপত্তার বিষয়ে স্বাবলম্বী হয়েই যাতে সার্বিকভাবে পূজা সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয়া হয় আমাদের পক্ষ থেকে আয়োজকদের প্রতি এমন বার্তাই দেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়