মা-বাবার অভিযোগ : মেয়ে ও জামাই বাড়ি দখল করতে মরিয়া

আগের সংবাদ

প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল : প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর

পরের সংবাদ

গাজী মাজহারুল : ফুলেল শ্রদ্ধায় চোখের জলে শেষ বিদায়

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রীয় ‘গার্ড অব অনার’ এবং ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে বনানীতে মায়ের কবরে সমাহিত হলেন স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত কিংবদন্তি গীতিকবি গাজী মাজহারুল আনোয়ার। গতকাল সোমবার সকালে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে প্রথমেই দেয়া হয় গার্ড অব অনার। এরপর সর্বস্তরের মানুষ ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মরদেহটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বেলা ১১ থেকে ১২টা পর্যন্ত রাখা হয়। এরপর এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় শহীদ মিনারের বিদায়ী আনুষ্ঠানিকতা।
এ সময় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি। এর মধ্যে ছিলেন কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ, গোলাম কুদ্দুছ, সুরকার শেখ সাদী খান, বিএনপির সাংস্কৃতিক সম্পাদক চিত্রনায়ক উজ্জ্বল, নাট্যব্যক্তিত্ব শংকর শাওজাল, জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক-কবি তারিক সুজাত, চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান, কণ্ঠশিল্পী শেলু বড়ুয়া, কুমার বিশ্বজিৎ, নকীব খান, আসিফ ইকবাল, মানাম আহমেদ, মনির খান, ইমন সাহাসহ আরো অনেকে। তারা গীতিকবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি অশ্রæসিক্ত নয়নে স্মৃতিচারণও করেছেন। এ সময় গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মেয়ে দিঠি আনোয়ার ও ছেলে উপলও উপস্থিত হন। বাবার সৃষ্টি সংরক্ষণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন তারা।
বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের পাশাপাশি গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান যুগ্মসচিব মো. আতাউর রহমান। এছাড়া তথ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ সংগীত পরিষদ, বিটিভি, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি, চলচ্চিত্র সাংস্কৃতিক লীগ, বাংলাদেশ সঙ্গীত পরিষদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসাস মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, জাসাস শাহবাগ, স্বভূমি লেখক শিল্পী পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, যুব মৈত্রী, গণ সঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ, সুর সম্রাট আলাউদ্দিন আলীর পরিবার, গীতিকবি সংঘ, বিএনপি, জাতীয়তাবাদী সংস্কৃতি সংগঠনসহ স্বজন, বন্ধুবান্ধব, দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংগীত শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, খবরটা কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। এরকম একটা দিনে আমাকে কিছু বলতে হবে কল্পনাও করতে পারিনি। গাজী ভাইয়ের সঙ্গে এবং তার পরিবারের সঙ্গে আমার ৫০ বছরেরও বেশি সময়ের সম্পর্ক। গাজী ভাই ২০ হাজারের মতো গান লিখেছেন। তার মধ্যে আমিই মনে হয় ৫-৬ হাজার গান গেয়েছি।
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, আমরা শহীদ মিনারে যে মানুষটিকে শারীরিকভাবে বিদায় জানাচ্ছি তিনি মানুষের ভালোবাসায় আচ্ছাদিত আছেন। বিদ্রোহ ও প্রেমের প্রতীক গাজী মাজহারুল আনোয়ার অমর হয়ে থাকবেন।
গোলাম কুদ্দুছ বলেন, এই সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে আমরা বলতে চাই, দৈহিকভাবে চলে গেলেও একজন শিল্পীর মৃত্যু হয় না। তার যে দেশপ্রেম সেটা অপ্রতিদ্ব›দ্বী। ১৯৭১ সালে তিনি ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ লিখেছেন। যা মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা জুগিয়েছে। চলচ্চিত্র যেখানে বাণিজ্যিক, সেখানে তিনি কাব্যময়তা এনেছেন। আমাদের গানকে সমৃদ্ধ করেছেন।
কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, জন্মগ্রহণ করলে মৃত্যু অনিবার্য। সংস্কৃতি অঙ্গন গত দশ বছর ধরে অভিভাবকশূন্য হচ্ছে। বাংলা গানের কালপুরুষ ছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। আজ তাকেও বিদায় জানাতে হলো।
নকীব খান বলেন, গাজী মাজহারুল আনোয়ার ছিলেন সংগীতের জন্য নিবেদিত প্রাণ। একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। পৃথিবীর কোনো দেশে ২০ হাজার গান লিখেছেন এমন মানুষ পাওয়া বিরল। তার প্রতিটি সৃষ্টি অসাধারণ।
গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মেয়ে দিঠি আনোয়ার বলেন, বাবা মানুষকে ভালোবাসতেন। তিনি যদি জীবদ্দশায় মনের অজান্তে কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকেন তাহলে যেন ক্ষমা করে দেন। বাবাকে গার্ড অব অনার দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সবাই আব্বুর জন্য দোয়া করবেন।
দিঠি আনোয়ার আরো বলেন, আব্বুর শেষ ইচ্ছা ছিল, শেষ পর্যন্ত যেন তার হাতেকলম থাকে। তাই ছিল। আমি দুই মাস ধরে আমেরিকায়। আমার আরো পরে আসার কথা ছিল। কিন্তু আমার ভালো লাগছিল না, এ জন্য চলে এসেছি। আসার মধ্যেও আমার কথা হয়েছে। এর মধ্যেই খবর পাই বাবার মৃত্যুর।
তিনি বলেন, আব্বু বলতেন, মা, আমি কোনো রাজনীতি বুঝি না। আমি দেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, এর চেয়ে বড় আর কিছু হতে পারে না। আমাকে যখন যে ডাকবে, তার কাছেই যাব। এ সময় দিঠি বর্তমান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আব্বুকে শহীদ মিনারে নিয়ে আসতে পেরেছি এ জন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ।
গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ছেলে উপল জানান, তার বাবার গানের পরিমাণ ২০ হাজারেরও বেশি। ৪২টির মতো সিনেমা পরিচালনা করেছেন তিনি। একটি অসমাপ্ত বই নিয়েও কাজ করছেন তারা, যেটি আগামী বইমেলায় প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল।
উপল বলেন, আমরা চেষ্টা করব তার সৃষ্টি সংরক্ষণ করার জন্য। সরকার করবে কি না, সেটা তো আমরা জানি না। তবে তারা করতে চাইলে আমরা সহযোগিতা করব।
শহীদ মিনার থেকে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মরদেহ নেয়া হয় চলচ্চিত্রের আঁতুড়ঘর এফডিসিতে। সেখানে বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হয় তার প্রথম জানাজা। এরপর সিনেমা সংশ্লিষ্টরা তাকে শ্রদ্ধা জানান।
এফডিসি থেকে গীতিকারের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বাদ আসর গুলশানের আজাদ মসজিদে তৃতীয় জানাজা শেষে গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে বনানী কবরস্থানে তার মায়ের কবরে দাফন করা হয়।
কিংবদন্তি এই গীতিকার গত রবিবার সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে মৃত্যু বরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় রয়েছে তার লেখা তিনটি গান। সেগুলো হলো- ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’ ও ‘একবার যেতে দে না’।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়