মা-বাবার অভিযোগ : মেয়ে ও জামাই বাড়ি দখল করতে মরিয়া

আগের সংবাদ

প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল : প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর

পরের সংবাদ

কুষ্টিয়ায় আমন আবাদে খরচ বেড়ে দ্বিগুণ, বিপাকে কৃষক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া : এবারে মৌসুমের শুরুতে চাহিদামতো বৃষ্টি না হওয়ায় কুষ্টিয়ায় আমন আবাদ শুরু হয়েছে দেরিতে। এতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। পাশাপাশি জ্বালানি তেল ও সারের দাম বেড়েছে। দুঃসময়ে দেশের শেষ ভরসা ছিল কৃষি। করোনার ছোবলে দেশ যখন থমকে ছিল, তখনো কৃষির চাকা ছিল সচল। নির্ভরতার সেই কৃষি এখন বড় সংকটে। কেননা দেশের প্রায় ৯০ ভাগ জমি চাষ হয় ডিজেলনির্ভর সেচ ব্যবস্থায়। লিটারে ৩৪ টাকা দাম বাড়ায় সেচ নিয়ে চিন্তায় কৃষকরা। গত বছরের নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির ধাক্কায় দুর্ভোগে পড়েন কৃষক। এরপর গত সপ্তাহে বাড়ানো হয় সারের দাম।
এবার ডিজেল-কেরোসিনের নজিরবিহীন মূল্যবৃদ্ধি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। কৃষকের টিকে থাকাই এখন কঠিন হয়ে পড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। কৃষকরা বলছেন, সব মিলিয়ে আমন আবাদে খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, লোকসান পোষাতে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৮ হাজার ৮৯৫ হেক্টর। কিন্তু এ পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৮৮ হাজার ৫ হেক্টর। একে তো অনাবৃষ্টিতে পানির জন্য কৃষকের হাহাকার। এর ওপর ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে বাড়ছে সেচ খরচ। তাই চলতি মৌসুমের ধান আবাদ নিয়ে চিন্তার ভাঁজ কৃষকের কপালে। কৃষকরা জানান, আমন মৌসুমে তাদের মূল ভরসা বৃষ্টি। কিন্তু ভরা মৌসুমেও বৃষ্টি না হওয়ায় ধান লাগাতে বেশ কয়েক দিন দেরি হয়েছে। যার ফলে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে ধান উঠবে। এর প্রভাব পড়বে ধানের বাজারে। গত বুধবার সকালে গিয়ে দেখা যায় মিরপুর উপজেলার মশান এলাকার কৃষক আবদুল মান্নান জমিতে ধান লাগাচ্ছেন। জানতে চাইলে বলেন, এবার সময় মতো বৃষ্টি হয়নি। বৃষ্টির আশায় থাকতে গিয়ে প্রায় এক মাস ধান আবাদে পিছিয়ে পড়েছি। মাঝে কয়েক দিন বৃষ্টি হয়েছে। সেই কারণে ধান লাগাতে শুরু করেছি। কিন্তু কয়েক দিন পরই আবার সেচ দেয়া লাগবে। এর মধ্যে যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে বিকল্প পথে পানির ব্যবস্থা করতে হবে। আবার শোনা যাচ্ছে, জিকের পাম্প একটা নষ্ট হয়ে গেছে, তাই চিন্তায় আছি।
জিন্নাহ আলী নামে মিরপুরের সাতমিলা এলাকার আরেক কৃষক বলেন, যেসময় ধানের গোছা মোটা হয়ে যাওয়ার কথা, এবার সেই সময় চারা রোপণ করা হচ্ছে। বৃষ্টির অভাবেই এমনটা হয়েছে। ধানের ভরা মৌসুমেও চাহিদা মতো বৃষ্টির দেখা না মেলায় সেচের জন্য শ্যালোমেশিনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। কিন্তু ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সেখানেও কৃষককে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে। সঙ্গে বেড়েছে সারের দামসহ কীটনাশক এবং শ্রমিকের দাম। ফলে ধানের উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। ধানের যা দাম তাতে কৃষকরা আর পুষিয়ে উঠতে পারছে না। এতে আমন আবাদ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে, সারের পর জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। এই দুইয়ের প্রভাবে ফসলের উৎপাদন খরচ যে হারে বাড়বে সে তুলনায় দাম পাবেন কিনা তা নিয়েই শঙ্কা তার।
বিশেষ করে আমন চাষিরা বলছেন, ডিজেলের দাম বাড়ায় এবার উৎপাদন খরচ বাড়বে মণপ্রতি কমপক্ষে দুইশ টাকা। ফলে ধানের দাম বাড়বে অবধারিতভাবে। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি কৃষকের ন্যুনতম লাভ নিশ্চিত না করা যায়, তাহলে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হবে, প্রভাব পড়বে গোটা কৃষিখাতেও।
দীর্ঘদিন ধরে ডিজেল সেচ পদ্ধতিতে কুষ্টিয়ায় ধান উৎপাদন করেন মুক্তার হোসেন। বর্ষায়ও বৃষ্টির দেখা নেই, তাই ধানি জমি শুকিয়ে চৌচির। ডিজেলের দাম বাড়ায় চারদিন বন্ধ সেচযন্ত্র। তিনি জানান, ১০ বিঘা জমিতে সেচ দিতে ১৮ লিটার ডিজেল দরকার। এতে একদিনে খরচ বেড়ে গেছে প্রায় ৫৮০ টাকা। সে হিসেবে মৌসুমে ডিজেলেই মোট খরচ বাড়বে ১২ হাজার ২০০ টাকা। কৃষকরা বলছেন, জমি ভেদে বিঘায় ইউরিয়া সার দরকার ৪০ কেজি। এতে বেড়েছে ২৪০ টাকা। এছাড়া ডিজেলচালিত ধান মাড়াই মেশিনের ৬০০ টাকার জায়গায় দিতে হবে ৮০০ টাকা। এছাড়া কীটনাশক, শ্রমিক, যানবাহনেও খরচ বাড়বে। সব মিলিয়ে মণপ্রতি ধান উৎপাদনে খরচ হবে প্রায় হাজার টাকা। বিদ্যুতের সেচেও সুবিধা করতে পারছে না কৃষক। খরার কারণে সেচ দিতে হচ্ছে দ্বিগুণ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়