ঢাকা কলেজ : ক্যান্টিনে খাওয়া নিয়ে দু’গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১০

আগের সংবাদ

ভাঙা সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির মচ্ছব : সড়ক খনন নীতিমালা উপেক্ষিত > তিন মাসের কাজ বছরজুড়ে > সেবা সংস্থার কাজে সমন্বয় নেই

পরের সংবাদ

সহজ চোখে ‘হাওয়া’

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কোনো চলচ্চিত্র বোদ্ধা হিসেবে নয়, একজন সাধারণ দর্শকের দৃষ্টিতে ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রটি এক কথায় অসম্ভব রকমের ভালো লেগেছে আমার! চলচ্চিত্রজুড়ে মনে হয়েছে, বাংলা চলচ্চিত্র জগতে ‘হাওয়া’ যেন এক রেনেসাঁ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কাহিনীর অন্তস্থলে মৎস্যকন্যার ন্যায় একটি মিথলজিক্যাল চরিত্রের রহস্যময় উপস্থিতিতে বাঙালি সংস্কৃতির প্রান্তিক পর্যায়ের যে শ্রেণিবৈষম্য, সারল্য ও দ্বা›িদ্বক মনস্তত্ত্বের চিত্র ফুটে উঠেছে, সাম্প্রতিক বাংলা চলচ্চিত্রে এমনটি খুব কমই দেখা যায়। এটি নির্দ্বিধায় বলা যায়, বর্তমান অধিকাংশ বাংলা চলচ্চিত্রের যে রুগ্ন শিল্পচর্চা ও বিশ্ব চলচ্চিত্রে যে অ্যানিমেশন প্রবণতা, ‘হাওয়া’ সেখান থেকে বাংলা চলচ্চিত্রকে নতুন করে মুক্তির একটি পথ দেখিয়েছে। সঙ্গে সুনিপুণ দক্ষতায় চলচ্চিত্রটিতে পরিচালক-বাঙালি মৎস্যজীবী বা শ্রমজীবী মানুষের মূল্যবোধ ও মানব মনে ফ্রয়ডীয় দর্শনের দ্বা›িদ্বক মনস্তত্ত্বকে ফুটিয়ে তুলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। এতদসত্ত্বেও এটা বলার সুযোগ নেই, হাওয়া চলচ্চিত্রটি সম্পূর্ণ ত্রæটিমুক্ত এবং সেটির শিল্প রস সব দর্শককে সমভাবে আপ্লুত করতে পেরেছে। ব্যক্তিবিশেষে প্রতিটি মানুষেরই রুচি, মূল্যবোধ ও চিন্তার ঐন্দ্রজালিকতা একে অন্য থেকে কিছু না কিছু ভিন্ন। ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও তাই তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
ইতোমধ্যেই দর্শক ও চলচ্চিত্র বোদ্ধারা, ‘হাওয়া’কে অন্য এক বা একাধিক চলচ্চিত্রের নকল হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। অনেকে আবার চলচ্চিত্রের নামের সঙ্গে কাহিনীর প্রাসঙ্গিকতার প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কেউ আবার দু-একটা চরিত্রে প্রত্যাশিত অভিনয় না পাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং এখন পর্যন্ত চলচ্চিত্রটির বিষয়ে শেষ যে গুরুতর অভিযোগটি তোলা হয়েছে, সেটি হচ্ছে বন্যপ্রাণী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ। তবে হাওয়ার ওপর অন্য এক বা একাধিক চলচ্চিত্রের প্রভাব থাকতেই পারে, তার অর্থ এই নয় যে, এটি অন্য বা অন্যগুলোর অনুকরণ। উল্লেখ্য, যে চলচ্চিত্র দুটিকে ঘিরে ‘হাওয়া’র ওপর নকলের অভিযোগ উঠেছে ইতোমধ্যেই সে চলচ্চিত্র দুটিকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। যার একটি ‘সি ফগ’ ও অন্যটি ‘অভিযান’। ‘অভিযান’ নির্মিত হয়েছে আশির দশকে আর ‘সি ফগ’ নির্মিত হয়েছে ২০১৪ সালে। অর্থাৎ ‘অভিযান’ নির্মিত হওয়ার দুই দশকেরও বেশি সময় পর ‘সি ফগ’ নির্মিত হয়েছে। এটি অস্বীকার করার নয় যে, ‘সি ফগ’ ও হাওয়া চলচ্চিত্রদ্বয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একে অন্যটির সঙ্গে খানিকটা মিলেছে। অন্যদিকে ‘হাওয়া’ ও অভিযানে মিল খুঁজতে হলে- বিশ্বের সমুদ্রকেন্দ্রিক অনেক চলচ্চিত্রকেই একে অন্যটির নকল বলে মনে হবে।
এরপর ছবিটির নামকরণের সঙ্গে কাহিনীর অসঙ্গতি বিষয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তা মোটেই যৌক্তিক মনে হয় না। চলচ্চিত্রজুড়ে কেন্দ্রীয় চরিত্রের যে অলৌকিক পাওয়ার সেটিকে আমরা তবে কোন দৃষ্টিতে দেখলাম? পুরো ছবির ঘটনা প্রবাহকে এই অদৃশ্য শক্তিই তো নিয়ন্ত্রণ করেছে। আমার তো মনে হয়েছে এখানেই মেজবাউর রহমান সুমন যথার্থ ‘হাওয়া’ নামের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রের অনেক বিতর্ককে শব্দহীন করেছেন। চলচ্চিত্রটিতে হাওয়া-বাতাসের এক অন্তর্নিহিত পার্থক্য ও শক্তির প্রকাশ ঘটেছে তো এই ‘হাওয়া’ নামের মধ্য দিয়েই। আরেকটি অভিযোগ চরিত্রের সঙ্গে অভিনয়ের দুর্বলতা। আমি অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে এ অভিযোগের বিপক্ষে নই। সবশেষ চলচ্চিত্রটিতে খাঁচাবন্দি একটি শালিক পাখি ও একটি শাপলা পাতা মাছ শিকারের দৃশ্যকে ঘিরে পরিবেশবাদের নিয়ম লঙ্ঘনের যে অভিযোগটি সম্প্রতি উঠেছে, তা কোনোভাবেই অমূলক বলার সুযোগ নেই। তবে এটাও সত্য, চাঁন মাঝি নরপশুর পাখি ভক্ষণ দৃশ্যে কোনো রুচিশীল দর্শকই ওই চরিত্রে নিজেকে ভাবতে চাইবে বলে বিশ্বাস করা কঠিন।
আর সবশেষ দৃশ্যতে ‘গুলতির’ সাপ হয়ে ওঠা খুব কী দরকার ছিল? জানি না। তবে মারমেইড চরিত্রের হঠাৎ এ রূপান্তর শক্তি চলচ্চিত্রটিকে শেষাবধি দিকশূন্য করেছে বলেই মনে হয়েছে। কেননা একজন বেদে কন্যা অলৌকিক বলে মৎস্যকন্যা বা জলপরী হয়েছে এখানে, নিশ্চয় সে সর্পকন্যা বা ‘মেডুসা’ হননি। এটা স্বীকার করতেই হচ্ছে, চলচ্চিত্রটিতে যে মাত্রার নান্দনিক সিনেমাটোগ্রাফি প্রকাশিত হয়েছে তা বর্তমান বাংলা চলচ্চিত্রে সত্যি খুবই দুর্লভ। কিন্তু এটাও তো চিরন্তন সত্য, ভালোর কোনো সীমারেখা নেই; তার গতি চিরকাল অসীমেরই পানে নিরন্তর…! আর সেই নিরন্তর প্রবাহেই ‘হাওয়া’য় প্রজ¦লিত হয়েছে যেন ভালো কিছু সৃষ্টির প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। এই এইতো, এখানেই অনেক ভালো লাগা! খুব সহজ দৃষ্টিতে হাওয়া তাই শুদ্ধতম নয়; হাওয়া হচ্ছে আগামী বাংলা চলচ্চিত্রের নবতর সৌন্দর্যের এক পবিত্রতম হাতছানি।

চিরঞ্জীব চ্যাটার্জী
প্রভাষক, ফুলতলা মোজাম মহলদার (এম এম) কলেজ, খুলনা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়