ঢাকা কলেজ : ক্যান্টিনে খাওয়া নিয়ে দু’গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১০

আগের সংবাদ

ভাঙা সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির মচ্ছব : সড়ক খনন নীতিমালা উপেক্ষিত > তিন মাসের কাজ বছরজুড়ে > সেবা সংস্থার কাজে সমন্বয় নেই

পরের সংবাদ

শ্রীপুরে কারখানার বর্জ্যে ফসল নষ্ট, মরছে মাছ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নাসির উদ্দিন জর্জ, শ্রীপুর (গাজীপুর) থেকে : শ্রীপুরের সাটিয়াবাড়ী এলাকার ডার্ড কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার বর্জ্য ও দূষিত পানি আশপাশের কৃষি জমিতে ফেলা হচ্ছে। এতে করে ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। আশপাশের খাল ও বিলের পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, মরে যাচ্ছে প্রাকৃতিক মাছ। কারখানার ঝুট বয়লারের বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় এলাকাবাসী শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিষাক্ত পানির কারণে আবাদি জমিতে ফসল ফলানো যাচ্ছে না। কেমিক্যাল মিশ্রিত বিষাক্ত পানির কারণে চর্ম ও হাঁপানিসহ শিশু এবং স্থানীয় বাসিন্দারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার ধলাদিয়া এলাকার কৃষক মফিজ উদ্দিন এর প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় ২০ জন বাসিন্দা ও কৃষকের স্বাক্ষর সংবলিত একটি অভিযোগ গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তর বরাবর লিখিত দিয়েছেন, যার অনুলিপি সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দেয়া হয়।
কৃষক মফিজ উদ্দিন বলেন, ডার্ড কম্পোজিট কারখানা স্থাপনের পর থেকেই পরিবেশ বয়লারের বিষাক্ত কালো ধোঁয়ার কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এছাড়া দূষিত পানি আশপাশের খাল-বিলে অপসারণ করায় পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, মরে যাচ্ছে প্রাকৃতিক মাছ। এক হাজার একর কৃষি জমিতে ফসল ফলানো যাচ্ছে না।
ধলাদিয়া (পশ্চিমপাড়া) এলাকার কৃষক কামাল হোসেন বলেন, ডার্ড কম্পোজিট কারখানার পচা পানি পড়ে বিলের পানি নষ্ট হয়ে মাছ মরে গেছে। বিলে এখন আর মাছ পাওয়া যায় না। পচা পানির কারণে বিলে মাছ ধরতেও পারছেন না তারা।
তিনি বলেন, আগে বিঘাপ্রতি ৩০-৩৫ মণ ধান পাওয়া যেত। ফসলি ক্ষেতের পানি পচে যাওয়ায় এখন ১৫ মণের বেশি ধান ওঠানো সম্ভব হয় না।
ধলাদিয়া (দক্ষিণপাড়া) এলাকার কৃষক আব্দুল মতিন ও হেলাল উদ্দিন বলেন, যখন ধানে ফুল আসে তখন ধান গাছের গোড়া পচে মরে যায়। দেশীয় মাছ টেংরা, পুঁটি, কই, দাড়কিনা ও শিং মাছ এখন বিলে নেই বললেই চলে।
স্থানীয় ক্ষুদ্র ববসায়ী ও দোকানিরা জানান, ডার্ড কম্পোজিট কারখানার বর্জ্যরে কারণে বিলের পানি পচে গেছে। পচা পানির গন্ধে বাজারে ও দোকানে থাকা যায় না।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আগে বিলে গিয়ে শিশুসহ স্থানীয়রা পারুলি নদীতে (ধলাদিয়া দক্ষিণপাড়া) গোসল করত। বিভিন্ন কাজে পানি ব্যবহার করত, গরু-বাছুর গোসল করাত। কিন্তু ডার্ড কম্পোজিট কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যরে কারণে পানি পচে যাওয়ায় কোনো কাজে আসছে না নদীর পানি। চরম বিপাকে আর ভোগান্তিতে আছে এ এলাকার মানুষ। এলাকাবাসী পরিবেশ অধিদপ্তরে এবং স্থানীয় প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রতি কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান। সরজমিন দেখা যায়, ওই কারখানা থেকে স্থানীয় বিন্নাইদ ব্রিজের নিচে বড় পাইপ দিয়ে ফসলি জমিতে পড়ছে কারখানার বিষাক্ত কালো পানি।
ডার্ড কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আকাশ বলেন, এসব বিষয়ে কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার (হেড অফিসের) অনুমতি ছাড়া কোনো বক্তব্য দিতে পারব না। তিনি সাংবাদিকদের হেড অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
রাজাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসিনা মমতাজ বলেন, আমি গত ৫ মাস আগে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নিয়েছি। আমি নিজেও সিএনজি দিয়ে আসা-যাওয়ার সময় পচা পানির দুর্গন্ধে নাকে রুমাল দিয়ে চলাফেরা করতে হয়। ডার্ড কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার বর্জ্যে ও দূষিত পানি আশপাশের কৃষিজমিতে ফেলায় ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।
গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নয়ন মিয়া জানান, ধলাদিয়া এলাকার কৃষক মফিজ উদ্দিন সাটিয়াবাড়ী এলাকার ডার্ড কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার বর্জ্যে ও দূষিত পানির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়