আব্দুল হামিদ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী) থেকে : উচ্চফলনশীল ও পুষ্টিসমৃদ্ধ তৈলজাত ফসল ‘পেরিলা’। গত বছর পরীক্ষামূলক প্রথম চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়ে এবার আগ্রহ বেড়েছে কৃষকের। কৃষি অফিস বলছে, খরচ বাদে একজন কৃষক বিঘা প্রতি ১৮-২০ হাজার টাকা লাভ করতে পারবে। সার, বালাইনাশক ও আন্তঃপরিচর্যাসহ প্রতি বিঘায় খরচ হয় ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। রোগ বালাই নেই বললেই চলে। পতিত জমিতেও পেরিলা চাষ করা সম্ভব। সেই সঙ্গে দোফসলি ও তিন ফসলি ছাড়াও সাথি ফসল হিসেবে এর চাষ সম্ভব। প্রতি বিঘায় বীজ লাগে মাত্র ১০০ গ্রাম। বীজতলা থেকে ৩০-৩৫ দিনের চারা রোপণ করে ২ মাসের মধ্যে পেরিলা কর্তন করা যায়। বিঘাপ্রতি ফলন পাওয়া যায় ৪ থেকে ৬ মণ।
উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের কিশোরপুর গ্রামের সাজদার রহমান, মনিগ্রাম ইউনিয়নের হেলালপুর গ্রামের সোহেল রানা জানান, গত বছর যেখানে পেরিলা আবাদ করেছিলেন, সেই জমি পতিত পড়ে থাকতো। অত্যন্ত লাভজনক ফসলটি চাষে বীজ সরবরাহ থেকে শুরু করে চাষ পদ্ধদ্ধিতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন উপজেলা কৃষি কার্যালয়।
কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২০০৭ সালে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এইচ এম এম তারিক হোসেন দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এই জাত সংগ্রহ করে গবেষণা শুরু করেন। ২০১৮ সাল থেকে ফসলটির উপর ব্যাপকভাবে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেন। দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণার ফলে ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি জাতীয় বীজ বোর্ড সাউথ কোরিয়ান ভ্যারাইটির সাউ পেরিলা-১ (গোল্ডেন পেরিলা বিডি) নামে জাতটির নিবন্ধন দেয়া হয়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কামরুল ইসলাম বলেন, জাতটি দেশের আবহাওয়ার উপযোগী। সাধারণভাবে সরিষা ভাঙানোর মতোই তৈল সংগ্রহ করা যায়। লিনোলিনিক এসিডসমৃদ্ধ তেল আহরণ ছাড়াও প্রাপ্ত খৈল গবাদি পশুর পুষ্টিকর খাবার ও জৈব সার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। পেরিলার কচি পাতা শাক হিসেবে খাওয়া ছাড়াও পেরিলা পাতার চা বানানো যায়। পেরিলা চাষের জমিতে মৌ বাক্স স্থাপন করে মধু আহরণও সম্ভব।
উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান জানান, খরিফ-২ মৌসুমে সাধারণত আম বাগানসহ বিভিন্ন ফল বাগান পতিত থাকে। যেখানে সাধারণত পানি জমে না এবং হালকা ছায়া পড়ে এমন জমিতে সহজেই পেরিলা চাষাবাদ করা যায়। জুলাই মাসে বীজতলায় বীজ বপণ করে ৩০-৩৫ দিনের চারা মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। এই ফসল ঘরে তুলে রবি ফসলে যেতে পারবেন কৃষকরা। সারাদেশে পেরিলা ফসলের চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে অনেক কম মূল্যে পেরিলা তেল বাজারজাত করা সম্ভব হবে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এইচ এম এম তারিক হোসেন বলেন, পেরিলা চাষের মাধ্যমে বাংলাদেশের তেল বাজারের আমদানি নিভর্রতা অনেকাংশেই কমাতে সক্ষম হবে। দেশের অর্থনীতিতে অভাবনীয় পরিবর্তন আসবে। সাউ পেরিলা-১ নামের নতুন জাতের এই পেরিলার ভোজ্য তেল দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপান, ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যবহার হয়। পেরিলা তেলের প্রধান বৈশিষ্ট্য উচ্চমাত্রায় ৫১ শতাংশ ওমেগা -৩ এবং ফ্যাটি এসিড বা লিনোলিনিক এসিড সমৃদ্ধ এবং ২২ শতাংশ লিনোলিক এসিড বা ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ। এটি ক্ষতিকারক ইউরেসিক এসিডমুক্ত (০ শতাংশ)ও ৯২ শতাংশ অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকরী।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।