প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
মেট্রিক পাস করে বসে আছি। কোনো চাকরি বাকরি নাই। অর্থ কষ্টে অনেক দিন ভুগলাম। কেউ একটা পয়সা দিয়ে উপকার করে না। জগৎ বড় কঠিন। চিন্তা করলাম কিছু একটা করা দরকার। টেবিলে বই ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে দেখি একটা কবিরাজির বই। ঘেঁটেঘুঁটে দেখি সকল রোগের চিকিৎসাই আছে। ভাবলাম এই চর্চাটাই করি। গ্রামে থেকে অনেক চেষ্টা করলাম কবিরাজি করার। কিন্তু কেউ আসে না, বিশ্বাসও করে না। পরে বুঝতে পারলাম, এই গুণের কদর নিজ গায়ে হবে না। চলে গেলাম আমাদের এলাকা থেকে বহু দূরে। ভাটি এলাকার একটা জায়গায়। নাম চরসিংধা। চারপাশে দিগন্ত বিস্তৃত পানি আর পানি। মাঝখানে একটা গ্রাম। নৌকা ছাড়া বিকল্প কোনো যান নেই। নিতান্তই গরিব এলাকা। সহজ-সরল বোকা মানুষই বেশি এলাকায়। সেখানে গিয়ে উঠলাম দূর সম্পর্কে এক খালার বাড়িতে। খালাও খুব সরল প্রকৃতির। খালাকে বললাম, আমার বিদ্যার কথা। খালা বলল, পারলে করো বাপ, কামতো খারাপ না। মেলা সম্মান আছে এই কামের। খুব দ্রুত আমার সুনাম ছড়িয়ে পড়ল পুরো এলাকায়। প্রতিদিন ভালোই রোগী আসে। অধিকাংশই নারী-শিশু। একদিন এক মহিলা আসল এক বাচ্চা নিয়ে। বমি করে সারাদিন। বাচ্চাটির মুখে খাওয়া-দাওয়ার রুচি নেই। বইয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বাচ্চাটাকে চিকিৎসা দিলাম। দু’দিন পর শুনলাম বাচ্চাটি মারা গেছে আমার ওষুধ খেয়ে। খবর শোনার পর আমার ফুসফুস হাঁপড়ের মতো ওঠানামা শুরু করল। পালানোর সুযোগ পেলাম না। চারপাশে পানি আর পানি। এর পরের দিন এরেস্ট হয়ে জেলহাজতে গেলাম। ১২ বছর জেল হাজতে ছিলাম। স্মৃতি থেকে লিখছি। কতদিনের ঘটনা অথচ গতকালের মতো মনে হয়।
আল মামুন তালুকদার
মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।