এশিয়া কাপ : হংকংকে লজ্জায় ডুবিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

আগের সংবাদ

বন্ধুত্ব সুসংহত করার প্রত্যয় : বাংলাদেশে চীনা বলয় ঠেকাতে চায় দিল্লি > পানিসহ সীমান্ত সুরক্ষায় সমাধান চায় ঢাকা

পরের সংবাদ

হুমকিতে উপজেলা পরিষদ ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স : অবৈধ বালুর ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত মেঘনা তীর

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শাহরিয়ার কামাল, কমলনগর (ল²ীপুর) থেকে : রামগতি-কমলনগরে অবৈধ বালুর ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মেঘনার তীর এলাকা। দুই উপজেলার ৫টি স্পটে অবৈধ বালুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধচক্র।
চক্রটি প্রশাসন ও রাজনৈতিক শেল্টারে মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে বালু এনে নদীর তীরসংলগ্ন অবৈধভাবে বালু নামানোর মহোৎসব চালাচ্ছে। ফলে ভাঙনের তীব্রতা আরো বেড়ে শুষ্ক মৌসুমেও বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, মানুষের ঘরবাড়ি ও বিস্তৃত জনপদ। হুমকিতে রামগতি উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এতে স্থানীয় মানুষের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। একদিকে নদী ভাঙন, অন্যদিকে বালু ব্যবসার নামে চলছে এক রাজত্ব। এসব বালু বড় বড় জাহাজে করে নদীর তীরে ভিড়ায়। এতে জাহাজের ধাক্কায় নদীর তীরে প্রচণ্ড আঘাতে ভাঙন তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পায়। জনপ্রতিনিধিরাও বালুর ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন পাটোওয়ারীর মোড়ের তেমুহনী এলাকা নামক স্থানে মেঘনা নদী থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ ফুট বালু এনে জমা করছেন। এ বালু ভোলার ইলিশা, চট্টগ্রামের কাপ্তাই উপজেলার বেদাগী ও চাঁদপুর থেকে এনে নদীর তীরে ডাম্পিং করে মেশিনের মাধ্যমে জমা করে ছড়ামূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। রামগতির স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন এলাকায় জনৈক রিয়াজ, শাহীন, সুমন, মাইন উদ্দিন ও চরআব্দুল্লাহ ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীন মন্জু। উপজেলার আসলপড়া এলাকায় সারু পাটোয়ারী, মো. ফারুক এবং কমলনগর উপজেলার মাতব্বরহাট এলাকায় জিহাদ ও দিদার, নবীগঞ্জে মিলন ভান্ডারী ও নাছিরগঞ্জ কমলনগরের এক জনপ্রতিনিধি অবৈধ বালুর ব্যবসা করে যাচ্ছেন। বালুগুলো বাইর থেকে আনলেও এখানে নদীর তীরে এনে ওঠা-নামার কারণে বাঁধের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় এই প্রভাবশালীরা দলের নেতা ও প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে মাসের পর মাস বালু ডাম্পিং করছেন নদীর তীর সংলগ্ন স্থানে।
এতে নদীর আশপাশ ভেঙে দ্রুত বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। বালুর স্তূপ থেকে পানি গড়ে ফাটল ধরে ভাঙছে নদী। এছাড়া বাতাসে বালু উড়ে আলেকজান্ডার-সোনাপুর সড়কের যাতায়াতকারী গণপরিবহন, এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা পড়ছে চরম বিপাকে। ফলে আতঙ্কে রয়েছে নদী পাড়ের হাজারো মানুষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের আশ্রয়ে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা দেদার বালু ব্যবসা করলেও তারা দেখেও যেন না দেখার ভান ধরছেন। এতে এলাকার বড় ধরনের ক্ষতির কাজ করছে তারা। যার ফলে সরকারের নদী ভাঙনরোধ প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয়রা আরো জানান, রাতের আঁধারে মেঘনা নদীর মাঝ থেকে জাহাজ ভর্তি করে বালু তোলে সকালে নদীর পাড়ে তা নামানো হচ্ছে। স্থানীয় আলী আকবর, মামুনুর রশিদ, আলী মাঝি, কোরবান আলীসহ অসংখ্য ভুক্তভোগী জানান, সরকার নদী ভাঙনরোধে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ করে যাচ্ছে। অন্যদিকে তাদের জমি ও বসতভিটা একের পর এক নদীতে বিলীন হচ্ছে। প্রশাসনের দুর্বল নজরদারিতে বালু উত্তোলন হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বালু ব্যবসায়ী শামীম বলেন, চাঁদপুর ও মেঘনা নদীর মাঝ থেকে বালু এনে আমরা বৈধভাবেই ব্যবসা করি। স্থানীয় প্রশাসনও সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কাজে আমাদের থেকে বালু নিয়ে থাকে।
চরআব্দুল্লাহ ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীন মন্জু ও শাহিন অবৈধ বালু ব্যবসার বিষয়ে বলেন, আমরা বালু উত্তোলন করি না। মেঘনা নদীর ভোলা অঞ্চল ও চট্টগ্রামের কাপ্তাইসহ বিভিন্ন স্থান থেকে এনে বিক্রি করি।
কমলনগর ইউএনও মো. কামরুজ্জামান ও রামগতির ইউএনও এসএম শান্তনু চৌধুরী বলেন, যারা মেঘনা নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু এনে ক্রয়-বিক্রয় করছে, তা সম্পূর্ণ অবৈধ। নদী ভাঙন কবলিত এলাকা, এখানে নতুন বাঁধ হয়েছে। এতে বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হবে। দ্রুত এসব অবৈধ বালুর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়