এশিয়া কাপ : হংকংকে লজ্জায় ডুবিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

আগের সংবাদ

বন্ধুত্ব সুসংহত করার প্রত্যয় : বাংলাদেশে চীনা বলয় ঠেকাতে চায় দিল্লি > পানিসহ সীমান্ত সুরক্ষায় সমাধান চায় ঢাকা

পরের সংবাদ

বিশ্বমানবতাকে বাঁচাতে হবে আলমগীর খান

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইউক্রেনের স্বাধীন জনগণের বিরুদ্ধে রুশ আক্রমণ চলছে ৬ মাসের বেশি সময় ধরে। আর তার ফল প্রতিদিনই খারাপ হচ্ছে। রুশ ও তার প্রতিপক্ষ পশ্চিমা যুদ্ধবাজ শক্তির পক্ষ থেকে যেভাবে হুঙ্কার চলছে তাতে আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। উভয়েই একে অপরকে পদানত করতে বদ্ধপরিকর ও জয়ের নেশায় উন্মত্ত। উভয়ের হাতেই আছে সভ্যতাবিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্র। ফলে এই যুদ্ধোন্মাদনার বলি হবে ইউক্রেন ও রাশিয়ার জনগণ। পুতিনের কাছে ইউক্রেন দখল মনে হয়েছিল সকালে নাস্তার টেবিলে কেক কাটার মতোই এক অতি সহজ সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই তা হয়ে উঠল তার জন্য এক দুঃস্বপ্ন, যে ভুল থেকে ফিরে আসা কঠিন। পুতিন বাহিনী ও বিশ্ববাসীকে অবাক করে ইউক্রেনের সৈন্য ও জনগণ সম্মিলিতভাবে বিরাট রুশ বাহিনীর অগ্রযাত্রাকে ঠেকিয়ে দিয়েছে। যে দেশটি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ার কথা, দেখা যাচ্ছে তা দেশপ্রেমের ইস্পাতে তৈরি- অপরাজেয়।
ঠেকিয়ে দিলে কী হবে, ইউক্রেন ও তার জনগণের ক্ষতি অপূরণীয়। ২৪ ফেব্রুয়ারির পর থেকে রুশ আক্রমণের মুখে ইউক্রেনের ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে আর অর্ধকোটির বেশি মানুষ দেশটির ভেতরে উচ্ছেদ হয়েছে। প্রায় ১৪ হাজার ইউক্রেন সৈন্য ও অনুরূপ সংখ্যক রুশ সৈন্য এ পর্যন্ত যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে। জাতিসংঘের হিসাবে ইউক্রেনে সাড়ে ৫ হাজারের বেশি সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে উভয়পক্ষের ক্ষয়ক্ষতি। ইউক্রেনকে ফ্যাসিস্ট শক্তির হাত থেকে মুক্ত করার ভান করে পুতিন দেশটিকে আক্রমণ করেছিলেন। কিন্তু বিশ্ববাসী দেখতে পাচ্ছে দেশটির ওপর একবিংশ শতাব্দীর ফ্যাসিস্ট আক্রমণ, যা ইতোপূর্বেকার মার্কিন-ব্রিটিশ দুষ্টচক্র কর্তৃক আফগানিস্তান-ইরাক দখলকে অনেকখানি অনুসরণ করছে। রুশ-ইউক্রেন সংঘর্ষও মার্কিন-ব্রিটিশ যুদ্ধবাণিজ্যের মতো দীর্ঘমেয়াদি হতে যাচ্ছে। যার ফল হতে পারে পূর্বের চেয়ে আরো দুঃখজনক ও বিশ্বমানবতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর বার্নি স্যান্ডারস এসব অনেক আগেই অনুমান করেছিলেন। ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের দুই সপ্তাহ আগে তিনি লিখেছিলেন, ‘কেউ জানে না মানবজীবনে এ যুদ্ধের ক্ষতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু অনুমান করা যায় যে, ইউক্রেনে ৫০ হাজার মানুষ ক্ষতির মুখে পড়বে। আর লাখ লাখ মানুষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ থেকে পালিয়ে পাশের দেশে গিয়ে শরণার্থী হবে। এছাড়াও ইউক্রেনীয় ও রুশ সেনাবাহিনীতে হাজার হাজার মৃত্যু ঘটবে।’ (দ্য গার্ডিয়ান, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২)। স্যান্ডারস আরো বলেছেন, ‘আমার দৃষ্টিতে আমাদের দ্বিধাহীনভাবে ইউক্রেনের পক্ষে দাঁড়াতে হবে এবং স্পষ্ট করতে হবে যে, পুতিন যদি তার পথ পরিবর্তন না করে তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার ও তার সহযোগীদের ওপর কঠোর ব্যবস্থা আরোপ করবে।’ ব্রিটিশ লেবার পার্টির সাবেক নেতা জেরেমি করবিন এক টিভি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘অস্ত্র সরবরাহ কোনো সমাধান এনে দিবে না, এটা কেবল যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত ও তীব্রতর করবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা হয়তো বছরের পর বছর ধরে ইউক্রেন যুদ্ধে ডুবে থাকব। …যা নিয়ে আমি হতাশ তা হলো বিশ্বনেতারা খুব কমই শান্তি শব্দটি ব্যবহার করছেন। তারা আরো যুদ্ধ চান এবং আরো যুদ্ধংদেহী ভাষা ব্যবহার করছেন।’
রাশিয়া ও এর পশ্চিমা প্রতিপক্ষ উভয় শক্তিই যে কোনো পরিমাণ প্রাণহানি ও সম্পদ ধ্বংসের বিনিময়ে হলেও যুদ্ধে জিততে বদ্ধপরিকর। কিন্তু কারো একক জয়লাভের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধ সমাপ্তির কোনো লক্ষণ নেই। এর সম্ভাবনা একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে রূপ লাভের, যার পরিণতি উভয় দেশের ও সারা বিশ্বের মানুষের জন্য হবে খুবই দুঃখজনক। এ প্রেক্ষিতে আমরা গ্রিসের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ইয়ানিস ভারাওফ্যাকিসের কথাগুলো স্মরণ করতে পারি (The Peace Process Ukraine’s Supporters Should Support, প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ২৩ মে ২০২২), ‘১৯৪৩-এ প্রগতিশীলদের নৈতিক দায়িত্ব ছিল হিটলারের সঙ্গে আপসমূলক চুক্তির আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করা। হত্যা বন্ধ করতে নাৎসিদের সঙ্গে চুক্তি হতো ক্ষমার অযোগ্য। সভ্য জগতের মানুষের একটাই পথ ছিল : মিত্রবাহিনী হিটলারের বার্লিন বাঙ্কারের ওপর দাঁড়ানোর বিজয় পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া। অন্যদিকে আজ রাশিয়ার ওপর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন ও আমরা যারা শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা বলছি তাদের প্রত্যাখ্যান করা হবে এক বিরাট ভুল।’ ভারাওফ্যাকিস আরো লিখেছেন, ‘ইউক্রেন, ইউরোপ ও মানবতার কল্যাণের স্বার্থে কেবলমাত্র একটা শান্তিপূর্ণ সমাধানই বহুমুখী পরাজয়ের মুখ থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারে।’ আমরা তার সঙ্গে যোগ করতে পারি : দিগন্তরেখায় একমাত্র আশার চিহ্ন হচ্ছে বিশ্বনেতাদের স্যান্ডারস ও করবিনের প্রস্তাব মেনে নিতে বাধ্য করায় বিশ্বমানবের ক্ষমতা- কেবলমাত্র যা ইউক্রেন, রাশিয়া ও বিশ্বকে একসঙ্গে বাঁচাতে পারে।

সম্পাদক, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়