এশিয়া কাপ : হংকংকে লজ্জায় ডুবিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

আগের সংবাদ

বন্ধুত্ব সুসংহত করার প্রত্যয় : বাংলাদেশে চীনা বলয় ঠেকাতে চায় দিল্লি > পানিসহ সীমান্ত সুরক্ষায় সমাধান চায় ঢাকা

পরের সংবাদ

জেলা পরিষদ নির্বাচন : আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের নির্বাচন। এরই মধ্যে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে মেম্বাররাই ভোট দিতে পারবেন। স্থানীয় সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটির নির্বাচনকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে অংশ নিতে দলগতভাবে প্রস্তুত দলটি। তবে বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রস্তুতি তেমন চোখে পড়ছে না। আজ রবিবার থেকে চেয়ারম্যান পদে ঢাকা থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ফরম নিতে বলেছে আওয়ামী লীগ। আগামী বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ফরম নেয়া ও জমা দেয়া যাবে। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ।
এরইমধ্যে নির্বাচন ঘিরে সারাদেশে উৎসবের আমেজ। চেয়ারম্যান পদে ৬১টি জেলা পরিষদের প্রতিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গড়ে ৪ থেকে ৫ জন। প্রার্থীদের বেশির ভাগই বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদ প্রশাসক। জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও জেলা কমিটির সিনিয়র নেতারাও নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। বেশির ভাগ প্রার্থীই এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। মনোনয়ন পেতে তারা দলের সিনিয়র নেতা ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। মনোনয়ন পেতে লবিং-তদবির করছেন। পাশাপাশি

তৃণমূলে ভোটারদের সঙ্গেও রাখছেন নিবিড় যোগাযোগ। কেউ কেউ নিজের দায়িত্ব পালনের সময় সফলতাগুলো ফাইল আকারে জমা দিচ্ছেন গণভবন, দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের কাছে। অন্যান্য প্রার্থীরাও বর্তমান চেয়ারম্যান ও প্রশাসকের বিরুদ্ধে নানা ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে ধরে অভিযোগ জমা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা তদবির করছেন যাতে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের মনোনয়ন নেয়া হয়। নির্বাচন ঘিরে জেলায় জেলায় সিনিয়র নেতাদের মধ্যে শুরু হয়েছে নানা রকম দ্ব›দ্ব। যারা দুই মেয়াদে জেলা পরিষদের দায়িত্ব পালন করে আসছেন, তাদের কর্মকাণ্ড ও ব্যর্থতা ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন প্রার্থীদের অনেকেই। তাদের অনুসারীরাও থেমে নেই, নিজেদের মধ্যে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ-বাকবিতণ্ডা চলছেই।
এদিকে আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান জেলা পরিষদ নির্বাচনকে খুবই গুরুত্বসহকারে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বর্তমানে বেশির ভাগ জেলাতেই আওয়ামী লীগের লোকেরাই দায়িত্ব পালন করছে। তাদের মধ্যে যারা বিতর্কিত ও জনবিচ্ছিন্ন তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হবে না। তবে যারা ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়, পরিচ্ছন্ন ইমেজ রয়েছে, বিজয়ী হয়ে আসার মতো প্রার্থী- তাদেরকেই মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রধানের কাছে সেরকম তালিকা করাও আছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আব্দুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময়ই স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়ে থাকে। এজন্য আমাদের প্রার্থীরা বিজয়ীও হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। আমরা গ্রহণযোগ্য প্রার্থীদেরই মনোনয়ন দেব।
জানা গেছে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে কাকে কাকে মনোনয়ন দেয়া হবে, তার একটি তালিকা আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা আছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকরা স্ব স্ব দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের জেলাগুলোর প্রার্থীদের একটি মূল্যায়ন তালিকা দলীয় সভাপতির কাছে আগেই জমা দিয়েছেন। সেই তালিকার পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থারও একাধিক তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করেই জনপ্রিয় ও বিজয়ী হয়ে আসার মতো প্রার্থীদেরকে মনোনয়ন দেয়া হবে।
ঢাকা জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক মাহবুবুর রহমান। বিগত ৫ বছর তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এবারো তিনি চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন চাচ্ছেন। ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগও রাখছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে নানা ব্যর্থতার অভিযোগ এনে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের আরো কয়েকজন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেন। তিনিও ঢাকা জেলার প্রতিটি ভোটারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। বিশেষ করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর, দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও ধামরাই উপজেলার চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা ঢাকা জেলা পরিষদের ভোটার। এদিকে বর্তমান প্রশাসক মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ- দায়িত্বকালে তিনি দলীয় নেতা কর্মীদের কোনো কাজে আসেননি। অফিসে তিনি ছিলেন অনিয়মিত।
পিরোজপুর জেলা পরিষদে বর্তমান প্রশাসক মহিউদ্দিন মহারাজ। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ৫ বছর তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এবারো এই জেলায় প্রার্থী হিসেবে সবচেয়ে সুবিধাজনক স্থানে আছেন তিনি। জেলার ৭টি উপজেলায় ভোটাররা এবারো তার পক্ষে একাট্টা। মোট ৭৪৭ জন ভোটারের মধ্যে ৭০৪ জন ভোটার মহারাজের পক্ষে আছেন বলে জানা গেছে। এরইমধ্যে ভোটাররা মহারাজকে প্রার্থী হিসেবে তাকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন। ভোটাররা স্বাক্ষর দিয়ে লিখিতভাবে তাকে সমর্থন জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্বাক্ষরসংবলিত একটি তালিকা পাঠিয়েছেন তারা। এছাড়া মহারাজের পক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগও ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। ফলে জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে এবারো তার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে জানা গেছে।
নীলফামারী জেলা পরিষদে শক্তিশালী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বারের সভাপতি এডভোকেট মমতাজুল হক। প্রথম মেয়াদে তিনি জেলা পরিষদ প্রশাসক হিসেবে ৫ বছর সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন দেয়। নানা দল ঘুরে আসা জাতীয় পার্টির নেতা জয়নাল আবেদীনের কাছে সামান্য ভোটে হেরে যান তিনি। এবার তিনি সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। আওয়ামী লীগের সবাই তার পক্ষে এবার মাঠে কাজ করছেন। জেলার ৬টি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই ব্যাপক গণসংযোগ করছেন মমতাজুল। ভোটাররাও তাকে সমর্থন দিচ্ছেন। তার পক্ষে ব্যাপক প্রচারণাও চলছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, জেলা পরিষদের যারা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন বা হচ্ছেন তারা সবাই পরিচিত। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে ভালো করেই চেনেন। তাদের থেকে বাছাই করে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদেরকেই তিনি মনোনয়ন দেবেন। আর যারা চেয়ারম্যান থেকে নানা কারণে দলের আস্থা হারিয়েছেন তাদের কোনোভাবে মনোনয়ন দেয়া হবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়