এশিয়া কাপ : হংকংকে লজ্জায় ডুবিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

আগের সংবাদ

বন্ধুত্ব সুসংহত করার প্রত্যয় : বাংলাদেশে চীনা বলয় ঠেকাতে চায় দিল্লি > পানিসহ সীমান্ত সুরক্ষায় সমাধান চায় ঢাকা

পরের সংবাদ

চা শ্রমিকরা সবসময় নৌকায় ভোট দেন : প্রধানমন্ত্রী > স্থায়ী ঘর করে দেয়ার ঘোষণা > চা শ্রমিকদের দেয়া উপহার ভুলিনি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : চা শ্রমিকরা সবসময় নৌকায় ভোট দেন- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছুদিন আগে আন্দোলন হয়েছে। আমি সেই সময় মালিকদের সঙ্গে বসে আপনাদের দৈনিক মজুরি ও অন্য সুবিধা নির্ধারণ করে দিয়েছি। আমার মনে হয় সেখানে আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী করতে পেরেছি।
চা শ্রমিকদের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, জাতির পিতা চা শিল্পকে জাতীয়করণ করেননি। বরং নানাভাবে প্রণোদনা দিয়েছেন, যাতে এই শিল্পটা ভালোভাবে গড়ে উঠতে পারে। তিনি চা শ্রমিকদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেন। তাদের ভোটাধিকারও দেন। চা শিল্পের ?উন্নতির জন্য বিশেষ ভর্তুকির ব্যবস্থা করেন। বিনামূল্যে বাসভবন, সুপেয় পানি, রেশন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এক সময় চা শ্রমিকদের অন্যভাবে ব্যবহার করা হত। বঙ্গবন্ধুর পদক্ষেপের ফলে তারা অধিকার ফিরে পায়।
গতকাল শনিবার বিকালে চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রামে চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ, মৌলভীবাজারের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নেছার আহমদ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপাররা।
সরকার চা শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, চা শ্রমিকরা আমাদের দেশেরই নাগরিক। কিন্তু এক সময় তাদের নাগরিকত্ব ছিল না। ঘরবাড়ি ছিল না। যেহেতু চা শ্রমিকরা সবসময় নৌকা মার্কায় ভোট দেন, সেহেতু আমরা চেষ্টা করেছি আপনাদের সমস্যাগুলো দূর করতে। কিছুদিন আগে আন্দোলন হয়েছে। আমি সেই সময় মালিকদের সঙ্গে বসে আপনাদের দৈনিক মজুরি ও অন্য সুবিধা নির্ধারণ করি। আমার মনে হয় সেখানে আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী করতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের চা শ্রমিকরা, যাদের ব্রিটিশরা এক সময় নিয়ে এসেছিল, তাদের অমানবিক অত্যাচার করত, খাটাত। জাতির পিতা টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার পরে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেন এবং পরবর্তীতে তাদের নাগরিকত্ব দেন, ভোটের অধিকার দেন। ভোটের অধিকার পেয়েছে, নাগরিকত্ব পেয়েছে, কিন্তু তারা ভূমিহীন থাকবে, এটা তো হতে পারে না। সবার জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা ইনশাআল্লাহ আমি করেছি। আমার আর যত নাগরিক তাদের সঙ্গে…

একই সঙ্গে হিজড়া, বেদে অন্য যারা ভাসমান- প্রত্যেককে আমি আলাদা করে ঘর করে দিচ্ছি, তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এখানে আমার চা শ্রমিকরা অবহেলিত থাকবে, এটা কখনো হতে পারে না। প্রত্যেকটি পরিবারের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা অবশ্যই অন্তত মাটিতে তাদের অধিকারটা যেন থাকে সেটা ইনশাআল্লাহ আমি করে দিয়ে যাব। অবশ্যই করব। তিনি বলেন, এখানে কোনো শ্রেণি অবহেলায় পড়ে থাকবে, এটা হয় না। একটা ঠিকানা, একটা বাসস্থান মানুষের জীবনটা পরিবর্তন করে দেয়। আমরা সে ব্যবস্থাটা অবশ্যই করে দেব। সবাই এ দেশে সমান অধিকার নিয়ে বাস করবে, সেটাই আমি চাই।
চা শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য পরিচালিত স্কুলগুলো সরকারি করা যায় কিনা সে ব্যবস্থা করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি চা বাগানের মালিকরা নিবেদিতপ্রাণ, তারা স্কুল করে শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেয়, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু সব জায়গায় সেটা হয় না। কাজেই এখন যে স্কুলগুলো আছে, সেগুলো যেন সঠিকভাবে চলতে পারে… আমি এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ করে দেখব। আমি মনে করি এগুলো সব জাতীয়করণ করা দরকার, যাতে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে এই স্কুলগুলো চালাতে পারি। আমাদের ছেলেমেয়েরাও যেন লেখাপড়া শেখে এবং চা শিল্প যেন আরো উন্নত হয়।
চা শ্রমিকদের নানা সমস্যা সমাধানে কাজ করার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা শ্রম দেয় তাদের দিকে তাকানো আমাদের দরকার। আমি এটুকু বলতে পারি, আমার বাবা তো এই কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের জন্যই রাজনীতি

করে গেছেন, দেশ স্বাধীন করে গেছেন। কাজেই তার বাংলাদেশে মানুষ কষ্টে থাকবে, এটা হতে পারে না। আমার সাধ্যমতো আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি, এ দেশে কেউ ভূমিহীন থাকবে না। যারা ভূমিহীন তাদের জন্য আমরা ঘর করে দিচ্ছি। জাতির পিতা শেখ মুজিবই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ করে যেতে পারেননি। আমি মনে করি, তার মেয়ে হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব-কর্তব্য। আমরা সেটা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসার ব্যবস্থা, অ্যাম্বুলেন্স চাওয়া হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স তো দেবই। মাতৃত্বকালীন যেন কেউ কষ্ট না পায় সে ব্যবস্থা করব। দ্রুত যেন চিকিৎসা পান সেই ব্যবস্থা করব। কমিউনিটি ক্লিনিক আমরা করেছি, সেখানে কিন্তু মাতৃত্বকালীন চিকিৎসাটা আমরা বিনা পয়সায় দিই, ওষুধ দিই। কাজেই যেখানে যেখানে বাগান আছে, তার আশপাশে এই ক্লিনিকগুলো আছে কিনা সেটা দেখব। অনেক জায়গায় আছে আমি জানি, আবার অনেক জায়গায় দূরত্বের কারণে নাও থাকতে পারে। দ্রুত যেন চিকিৎসা পেতে পারেন এবং অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নেয়ার ব্যবস্থাটা যেন হয় আমরা সেই ব্যবস্থা করব। মাতৃত্বকালীন ছুটি আমরা ৬ মাস করে দিয়েছি। এটা নির্ভর করে অনেক সময় শিল্পমালিকরা কি সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এখানে যে কষ্টসাধ্য কাজ, পাহাড়ি রাস্তায় ওঠা-নামা করা, এটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কাজেই আমি মনে করি, মাতৃত্বকালীন ছুটিটা ৬ মাস হওয়া উচিত। সেটার ব্যবস্থাও আমি করে দিতে চাই। গ্র্যাচুইটি কেন দেয়া হচ্ছে না এটা আমরা দেখব।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, চা শিল্প আমাদের দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত। চা বাগান দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি এই চা শিল্প আমাদের অর্থখাতের জন্যও ভীষণ দরকারি। তাই এই চা শিল্প যেন ধ্বংস হয়ে না যায় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য আমি আমার সব চা শ্রমিক ভাইদেরও অনুরোধ জানাব এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।
তিনি বলেন, এর আগে আপনারা যখন গণভবনে এসেছিলেন তখন আমার জন্য উপহার নিয়ে এসেছিলেন। সেই উপহার এখনো আমি হাতে পরে বসে আছি। আমি কিন্তু ভুলিনি। আমার কাছে এটা হচ্ছে সব থেকে অমূল্য সম্পদ। চা-শ্রমিক ভাইয়েরা চার আনা আট আনা করে জমিয়ে আমাকে এই উপহার দিয়েছেন। এত বড় সম্মান, এত বড় উপহার আমি আর কখনো পাইনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার দুই হাত তুলে সোনার বালা দেখান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়