বাজারের ব্যাগে মিলল নবজাতকের লাশ

আগের সংবাদ

দেশীয় জ্বালানি উত্তোলনে গুরুত্ব : অনুসন্ধান ও উত্তোলনে মহাপরিকল্পনা > ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ খনন করার উদ্যোগ পেট্রোবাংলার

পরের সংবাদ

শিক্ষকের অ্যাভোকাডো চাষে উৎসাহ পাচ্ছেন কৃষকরা : ১২০০ টাকায় প্রতিটি চারা বিক্রি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রোকনুজ্জামান মিলন, ঝিনাইদহ থেকে : বিদেশি ফল অ্যাভোকাডোর পুষ্টিগুণে ভরা। যা পাকলে মাখনের মতো স্বাদ। মানবদেহের জন্য উপকারী, তাই এ ফলের চাষ বিশ্বজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে চাষ করা হলেও অ্যাভোকাডোর বাণিজ্যিকভাবে চাষ এদেশে একেবারেই নতুন। ঝিনাইদহে হারুন-অর-রশিদ মুছা নামে এক স্কুল শিক্ষক বাণিজ্যিকভাবে বিদেশি এই ফলের চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। যা দেখে এখন আশপাশের কৃষকরাও ঝুকে পড়েছেন।
হারুন-অর-রশিদ মুছা ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার কাগমারি গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। তিনি স্থানীয় কাগমারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ধর্মীয় বিষয়ের শিক্ষক। হারুন-অর-রশিদ জানান, তার বাবা ছিলেন গ্রামের একজন বড়মাপের কৃষক। তাই ছোটবেলা থেকেই তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফল ফলাদির গাছ লাগাতেন। তারা দুই ভাই ও তিন বোন। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। আর ছোট ভাই ইসমাইল হোসেন মাস্টার্স শেষ করে তাকে সাহায্য করছেন কৃষি কাজে। গ্রামের স্কুলেই চাকরি করেন হারুন অর রশিদ। ফলে ছুটির পরে কৃষি কাজে বেশ সময় দিতে পারেন। পৈতৃক সূত্রে ২০ বিঘা জমি পেয়েছেন তিনি। এসব জমিতে ফলের চাষ করে আরো কমপক্ষে ১৫ বিঘা জমি কিনেছেন। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক এনামুল হকের সহযোগিতায় বিদেশি ব্যয়বহুল অ্যাভোকাডোর চারা এনে রোপণ করেন শিক্ষক হারুন। দুই বছর ধরে তার গাছে ফল ধরছে। এখন তার বাগানে প্রায় ২৫০টি অ্যাভোকাডো গাছ রয়েছে, যার বেশিরভাগেই এ বছর ফল এসেছে। এবার তিনি প্রতি কেজি ফল ৫০০ টাকা করে বিক্রি করছেন, যা বিদেশে মিশন থেকে ফিরে আসা সেনা সদস্যরা ছাড়াও ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার ফল ব্যবসায়ীরা অনলাইনে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। নিজেদের বাড়ির সঙ্গে লাগোয়া প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে অ্যাভোকাডো ছাড়াও সাদা ড্রাগন, পারসিমন, লংগান (কাঠলিচু), সাদা জাম, গোলাপ জাম, মালবেরি, ব্লাকবেরি, সুইটলেমন, প্যালেস্টাইন ইজরাইল বাতাবি লেবু, চায়না বাতাবি লেবু, করোসল, মিশরীয় কমলা, দার্জিলিং লেবু, ব্লাক গেন্ডারিসহ কমপক্ষে ২৫ ধরনের বিদেশি পুষ্টিকর ফলের চাষ করেছেন। তার মধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাতের ড্রাগনই রয়েছে কয়েক ধরনের।
এছাড়া এ বছর দুই বিঘা জমিতে ব্লাক গেন্ডারি, আট বিঘা জমিতে উন্নত লাল ড্রাগন চাষ করেছেন তিনি। আবার উন্নত জাতের ড্রাগন ও অ্যাভোকাডোর চারাও বিক্রি করছেন। তার বাগানের একেকটি অ্যাভোকাডোর চারা বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা করে।
হারুনের বাগানের শ্রমিক মো. গোলাম রসুল বলেন, অনেক দিন ধরে আমরা আটজন শ্রমিক প্রতিদিন হারুন অর-রশিদ মুছা ভাইয়ের জমিতে কাজ করছি। এখান থেকে প্রতিদিন একেকজন ৩৫০ টাকা করে পারিশ্রমিক পাই, তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে। মুছা ভাইয়ের মতো আরো অনেকে যদি এ ধরনের অ্যাভোকাডো বাগান করে, তাহলে এলাকার অনেক বেকার যুবক আমাদের মতো কাজ করে সংসার চালাতে পারবে।
এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মহসীন আলী বলেন, হারুন অর রশিদ মুছা একজন স্কুলশিক্ষক। চাকরির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন ফলের চাষ করে আসছেন। তিনি অনেক বিদেশি পুষ্টিকর ফলের চাষ করেছেন। তার মধ্যে মেক্সিকান জাতের অ্যাভোকাডো অন্যতম।
তিনি বলেন, অ্যাভোকাডো ফল পুষ্টিগুণে ভরা। এ ফল বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের পথ্য হিসেবে কার্যকর। এ ফলে মানবদেহের জন্য উপকারী ফ্যাট রয়েছে। যা শরীর গঠনের জন্য উপকারী।
এ কৃষিবিদ আরো বলেন, আমদানি নির্ভর ফল হওয়ায় এ ফলের দাম সব সময় বেশি থাকে। বিভিন্ন বাজারে এখন প্রতি কেজি অ্যাভোকাডো ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অ্যাভোকাডো চাষের জন্য এ দেশের মাটি ও আবহাওয়া বিশেষ উপযোগী হওয়ায় দেশে এ ফল চাষের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময়। আমরা হারুনের বাগানের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছি এবং তাকে বিভিন্ন পরমর্শ দিয়ে আসছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়