বাজারের ব্যাগে মিলল নবজাতকের লাশ

আগের সংবাদ

দেশীয় জ্বালানি উত্তোলনে গুরুত্ব : অনুসন্ধান ও উত্তোলনে মহাপরিকল্পনা > ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ খনন করার উদ্যোগ পেট্রোবাংলার

পরের সংবাদ

পৌরকর প্রদানে সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনীহা বেশি : ৩৩ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাওনা ২৩৪ কোটি টাকা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) আর্থিক সংকটের কারণে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ জন্য সরকারি সহায়তার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। অথচ বর্তমানে ৩৩ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে চসিকের বকেয়া পৌরকরের পরিমাণ ২৩৩ কোটি ৮৪ লাখ ৪২ হাজার ১৯০ টাকা। চসিকের নিজস্ব আয়ের মূল উৎস পৌরকর হলেও সরকারি প্রতিষ্ঠানের পৌরকর (গৃহকর ও রেইট) পরিশোধ না করার প্রবণতা বাড়ছে। বকেয়া পরিশোধে বারবার তাগাদা দিলেও সাড়া দিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।
চসিক সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে (২০২১-২২) ১৯৩ কোটি ৮ লাখ ৬১ হাজার ৯০৭ টাকা পৌরকর আদায় হয়। এর মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মালিকানাধীন হোল্ডিং থেকে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায়ের হার ছিল ৫৪ শতাংশ। সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে আদায় হয়েছে ৪৭ শতাংশ।
সিটি করপোরেশন অ্যাক্ট ২০০৯ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে চসিক মোট ১৭ শতাংশ পৌরকর আদায় করে থাকে। এর মধ্যে ৭ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স (গৃহকর), ৩ শতাংশ বিদ্যুতায়ন রেইট এবং ৭ শতাংশ আবর্জনা অপসারণ রেইট রয়েছে। নগরবাসীর সার্বিক সেবা প্রদান নিশ্চিতকল্পে সিটি করপোরেশনে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বার্ষিক বেতন-ভাতা পরিশোধ, নগরীর আবর্জনা অপসারণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণ, সড়ক আলোকায়ন, শিক্ষা সেবা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বহুমুখী কর্মকাণ্ডের সিংহভাগ ব্যয় পৌরকর থেকে নির্বাহ করা হয়। বর্তমানে নগরে ২ লাখ ৪ হাজার ৯৫১টি হোল্ডিং আছে। এর মধ্যে সরকারি ১ হাজার ৫১৬টি এবং বেসরকারি হোল্ডিং আছে ২ লাখ ৩ হাজার ৪৩৫টি।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পৌরকর আদায়ে জোর দেয়া উচিত বলে মনে করেন চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন,

সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিপুল অঙ্কের ট্যাক্স বকেয়া রয়েছে। কৌশলে এসব বকেয়া আদায় করতে হবে। আমার সময়ে আমি কিছু আদায় করেছিলাম। সরকারি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া আদায়ে উদ্যোগ নেয়া উচিত।
তিনি বলেন, সাধারণ জনগণের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায়ের চেয়ে সরকারি, আধা সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করা বেশি উচিত। সিটি করপোরেশন আইনের আওতায় থেকেও সরকারি, আধা সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করতে পারে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বকেয়া এই বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া গেলে চসিক নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিতে পারে। সরকারি সহায়তার দিকে চেয়ে থাকতে হবে না।
চসিকের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আর্থিক সংকট আছে। তাই সরকারি সহায়তা ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। সরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়মিত পৌরকর পরিশোধ করলে সংকট কিছুটা হলেও দূর হবে। এতে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনায় কেবল মন্ত্রণালয়ের সাহায্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। এমনকি সাধারণ হোল্ডিং মালিকদেরও চাপ দিতে হবে না। তাছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠান যদি পৌরকর পরিশোধ না করে তা সাধারণ মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে।
চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি ঠিকমতো পৌরকর পরিশোধ করে তাহলে সাধারণ মানুষকে আমাদের আর চাপ দিতে হবে না। একটি সরকারি সংস্থা অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানকে টাকা পরিশোধ করবে। তারপরও কেন দিতে চায় না বুঝি না। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বকেয়া পরিশোধের জন্য রাজস্ব বিভাগ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তারা যেন তাদের বাজেটে পৌরকরের জন্য বরাদ্দ রাখে সেটা বলেছি। তিনি বলেন, যোগাযোগ করার কারণে অনেক সংস্থা পরিশোধ করছে। যেমন রেলওয়ে আগে দিত না। আমি ১৭ কোটি টাকা আদায় করেছি। আবার অনেক সংস্থা গড়িমসি করছে। আমাদের মন্ত্রীর (স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়) সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি প্রথমে সংস্থাগুলোকে চিঠি দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এরপর পরিশোধ না করলে প্রয়োজনে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করবেন।
চসিকের রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি পৌরকর বকেয়া আছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে, ১১০ কোটি ৯৫ লাখ ৪০ হাজার ৩১৮ টাকা। এর মধ্যে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের হাল দাবি হচ্ছে ২৯ কোটি ৫৯ লাখ ৬২ হাজার ৫৪৩ টাকা। বাকি ৮১ কোটি ৩৫ লাখ ৭৭ হাজার ৭৭৫ টাকা ২০২১-২০২২ অর্থবছর পর্যন্ত বকেয়া। অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত পাওনা ২৯ কোটি ৮৫ লাখ ৩৬ হাজার ৬১২ টাকা, আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ কোটি ৫৬ লাখ ৬৭ হাজার ৩২৩ টাকা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জননিরাপাত্তা বিভাগের কাছে ৫ কোটি ৪৫ লাখ ৬ হাজার ৩১৮ টাকা এবং সুরক্ষা সেবা বিভাগের কাছে ১ কোটি ৯৮ লাখ ১৯২ টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে ৬ কোটি ২৮ লাখ ২ হাজার ৪৫২ টাকা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের কাছে ১০ কোটি ৯৫ লাখ ২৩ হাজার ৩০৯ টাকা এবং কারিগরী ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের কাছে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ৭৫ টাকা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৫ কোটি ৫৮ লাখ ৯০ হাজার ৮৩৭ টাকা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের কাছে ৭ কোটি ২২ লাখ ২৯৫ টাকা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩ কোটি ৩৪ লাখ ৬৬ হাজার ২০২ টাকা, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কাছে ২ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ৩১৮ টাকা, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৮৫ হাজার ১৭ টাকা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৫১ হাজার ৫৯৭ টাকা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে ২ কোটি ৩৭ লাখ ৯৮ হাজার ২৯ টাকা এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কাছে ৩ কোটি ২৬ লাখ ৪৭ হাজার ৩৮৬ টাকা, শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে ৫ কোটি ১৪ লাখ ৫৪ হাজার ৪২০ টাকা, ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে ২ কোটি ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৭৩০ টাকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে ২৪ লাখ ৯১ হাজার ৯২০ টাকা, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কাছে ৭ কোটি ৫৭ লাখ ৯৫ হাজার ৬৩২ টাকা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৩৯ হাজার ৩১১ টাকা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৭৩ লাখ ৮০ হাজার ১১০ টাকা, তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩৮ লাখ ৯২ হাজার ৮৭৯ টাকা, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৯২ লাখ ৩৫ হাজার ৬০ টাকা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৩৫ হাজার ৪৩৫ টাকা, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩১ লাখ ৫০ হাজার ২৩ টাকা, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪২ লাখ ২৫ হাজার ৪৭২ টাকা, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছে ২৬ লাখ ৯২ হাজার ২২৪ টাকা, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে ৮৭ লাখ ৪০ হাজার ৪৯৫ টাকা, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ২ কোটি ৬৮ লাখ ৬৫ হজার ২২২ টাকা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে ১১ লাখ ৪৮ হাজার ৩০ টাকা, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৪১ হাজার ৯২০ টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের কাছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ১২০ টাকা, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাছে পৌরকর বাবদ চসিক পাবে ৩৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ টাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়