বাজারের ব্যাগে মিলল নবজাতকের লাশ

আগের সংবাদ

দেশীয় জ্বালানি উত্তোলনে গুরুত্ব : অনুসন্ধান ও উত্তোলনে মহাপরিকল্পনা > ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ খনন করার উদ্যোগ পেট্রোবাংলার

পরের সংবাদ

খালে বর্জ্য ফেলবে প্যারাগন : সরকারি-বেসরকারি জমিতে হচ্ছে ড্রেন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নাসির উদ্দিন জর্জ, শ্রীপুর (গাজীপুর) থেকে : শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের বাউনী গ্রাম। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কোনো মেহমান আসেন না এ গাঁয়ে। কারণ হিসেবে বাসিন্দারা এ গ্রামে অবস্থিত প্যারাগন পোলট্র্র্রি কারখানার বর্জ্যরে দুর্গন্ধের কথা জানিয়েছেন। এদিকে কারখানার বর্জ্য শেরার খালে অপসারণের জন্য ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ড্রেনটি সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানার জমির ওপর দিয়ে যাবে। বাধাহীনভাবে ড্রেন নির্মাণের জন্য এটি সরকারি উদ্যোগে করা হচ্ছে বলে প্রচার চালানো হচ্ছে। এই অপকৌশলের মাধ্যমে কৃষকের জমির ওপর দিয়ে নেয়া হচ্ছে ড্রেনটি।
সরজমিন বাউনী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয় প্যারাগন পোলট্রি খামার থেকে কৃষিজমির পাশ দিয়ে কমপক্ষে ১০ ফুট প্রশস্ত ও ২০ ফুট গভীর ড্রেন খননের কাজ চলছে। ড্রেনটি কোথাও ব্যক্তিমালিকানা আবার কোথাও বন বিভাগের জমির ওপর দিয়ে যাচ্ছে। প্যারাগন পোলট্রি কারখানা থেকে শেরার খাল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্থানে কমপক্ষে ১০ ফুট ব্যাসার্ধ ও ১০ ফুট দৈর্ঘ্যরে শতাধিক রিং ফেলা হয়েছে।
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, শফিকুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি লোকজন নিয়ে প্যারাগন কারখানার বর্জ্য অপসারণের জন্য আগস্ট মাসের প্রথম দিকে ড্রেন নির্মাণের উদ্বোধন করেন। সরকারি উদ্যোগে এ কাজটি করা হচ্ছে বলে স্থানীয়দের জানান তিনি। কারখানার ব্যবস্থাপক শাহীনসহ অনেকেই এসব প্রচার চালাচ্ছেন। এরপর থেকে জোতদারদের তোয়াক্কা না করে ভেক্যু দিয়ে গর্ত করে ড্রেন নির্মাণের কাজ চালানো হচ্ছে। অনেক চাষি ভয়ে কিছু বলার সাহস পায় না। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে প্যারাগন পোলট্রি কারখানার বর্জ্যরে দুর্গন্ধে এলাকার মানুষ ভুগছে। কারখানা থেকে বেশিরভাগ পোলট্রি বর্জ্য ট্রাকযোগে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়। মাঝে মধ্যে মৃত মুরগির দুর্গন্ধে আশপাশের মানুষের জীবন-জীবিকা থেমে থাকে।
স্থানীয় পোশাক শ্রমিক মরিয়ম বেগম বলেন, জোর করে ব্যক্তিমালিকানার জমির ওপর দিয়ে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। শেরার খাল পর্যন্ত ড্রেনটি প্রবাহিত করতে হলে সরকারি জমিও যাবে। আগে ট্রাক দিয়ে প্যারাগন কারখানার বর্জ্য অন্যত্র নিয়ে ফেলা হতো, এখন ড্রেন নির্মাণের চেষ্টা করছে। আমার সামান্য জায়গায় ড্রেনের রিং ফেললে আমার ভিটেমাটির অবশিষ্ট কিছু থাকবে না। মশা-মাছি, পোকা-মাকড়ের কারণে স্থানীয়রা প্যারাগন কারখানার গেট অবরোধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তারা সরকারি উদ্যোগে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে বলে প্রচার চালানোয় এলাকার সাধারণ মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে।
কৃষক আব্দুল হামিদ বলেন, শেরার খালের পানি দিয়ে এলাকার চাষিরা বোরো ফসল করেন। বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরেন। ড্রেন নির্মাণ করে বর্জ্য ফেলা হলে শেরার খালে মাছ থাকবে না, কৃষি কাজও হবে না। খালটিতে প্রতিদিন স্থানীয়রা মাছ আহরণ করেন।
গৃহিণী হালিমা খাতুন বলেন, প্যারাগন কারখানার মুরগির বর্জ্যরে গন্ধে বাড়িতে খেতেও পারি না। গবাদি পশু চড়াতে পারেন না। সার্বক্ষণিক নাক-মুখে রুমাল চেপে চলাফেরা করতে হয়। নারী-শিশুসহ সবার গায়ে নানা ধরনের চর্মরোগ লেগেই থাকে। কারখানার দুই পাশে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত বর্ষণে বর্জ্য মিশ্রিত কালো পানি আবাদি জমিতে ছড়িয়ে পড়ে ফসল নষ্ট হয়।
ওসমান গণি জানান, প্যারাগনের দূষিত বর্জ্যরে কারণে এলাকায় কারো বাড়িতে গত কয়েক বছর ধরে মেহমান আসেন না। আত্মীয়তা করতে গেলে একবার কেউ এসে ঘুরে গেলে আর এ গ্রামে আসতে চায় না। প্যারাগনের বর্জ্যরে গন্ধে ও পানি দূষিত হওয়ায় জমিতে আগে যেখানে ২০ মণ ধান পাওয়া যেত এখন ৩ মণ পাওয়া যায়। বর্জ্যরে কারণে জমিতে পোকা হয়, ধানের চারার মূল কেটে দেয়, ধানের এসব খড় গবাদিপশু খায় না। এলাকার অনেক মানুষ সারা বছর অসুস্থ থাকে। প্যারাগনের পক্ষে স্থানীয় শফিকুল ইসলাম লোকজন নিয়ে সরকারি শেরার খালে বর্জ্য সরিয়ে নেয়ার জন্য রিং ফেলছে।
কৃষক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, বর্ষাকালে প্যারাগন কারখানার বর্জ্য মিশ্রিত পানি খালে নামে। এ সময় খালের পানিতে হাঁস নামলে কিছুক্ষণ পরে মারা যায়। ওই পানিতে মানুষের পায়ে ঘা হয়। খালে ওজুু, গোসল করা যায় না।
স্থানীয় যুবক সায়েম জানান, শ্রীপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গত ২২ আগস্ট জায়গাটি পরিদর্শন করেছেন। এক ফোঁটা বর্জ্য যেন শেরার খালে না পড়ে সেজন্য সবাইকে হুঁশিয়ার করে গেছেন। তারপরও চক্রটি অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তৎপরতা চালাচ্ছে।
স্থানীয় শফিকুল ইসলাম নিজেকে পরিবেশকর্মী পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি প্যারাগনের সঙ্গে কোনো কাজে জড়িত না। এ ব্যাপারে প্যারাগনকে কোনো সহযোগিতাও করছেন না। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে এনফোর্সমেন্টের লোকজন এসে যেভাবে দেখিয়ে গেছেন সেভাবে কাজ করছে কিনা প্যারাগন কর্তৃপক্ষ তাকে তা দেখতে বলেছিলেন। কাউকে কোনো চাপ বা সরকারি কাজের মিথ্যা তথ্য প্রচারের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এসব প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
প্যারাগন পোল্ট্রি খামারের ব্যবস্থাপক শাহীন বলেন, ড্রেন নির্মাণের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। কেউ তার নাম বলে থাকলে ভুল বলেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নয়ন মিয়া বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর কাউকে প্রাকৃতিক পানির প্রবাহে বাধাদান বা খালে বর্জ্য ফেলার পরামর্শ দেয়নি। কেউ পরিবেশ আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়