বাজারের ব্যাগে মিলল নবজাতকের লাশ

আগের সংবাদ

দেশীয় জ্বালানি উত্তোলনে গুরুত্ব : অনুসন্ধান ও উত্তোলনে মহাপরিকল্পনা > ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ খনন করার উদ্যোগ পেট্রোবাংলার

পরের সংবাদ

উঠছে না উৎপাদন ব্যয় : ফরিদপুরের প্রান্তিক চাষিরা পাটের দামে খুশি নন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিভাষ দত্ত, ফরিদপুর থেকে : সোনালি আঁশের রাজধানী খ্যাত ফরিদপুর জেলা। এখন ফরিদপুরের হাটগুলোতে উঠছে প্রচুর সোনালি আঁশ পাট। অনাবৃষ্টি ও পদ্মা নদীর পানি কুমার নদে প্রবেশ না করায় সঠিক পদ্ধতিতে পাট জাগ না দেয়ার কারণে এবার কৃষকের উৎপাদিত পাটের মান ভালো হয়নি, হয়নি ভালো রং। কেউ কেউ পাটের রং ঠিক রাখতে খরচ করেছেন বাড়তি টাকা। কিন্তু বর্তমানে বাজারে পাটের যে দর পাচ্ছেন তাতে তাদের মুখে হাসি নেই। উৎপাদনে যে খরচ হয়েছে অনেকের পাট বিক্রি করে সে টাকা উঠবে না।
ফরিদপুরের সালথা, নগরকান্দা, বোয়ালমারীসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রতিটি হাটেই উঠতে শুরু করেছে পাট। পাটের ভরা মৌসুমে চাষিরা ভালো দাম না পাওয়ার কারণে তাদের চোখেমুখে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ সময়মতো পাট জাগের পানি না পাওয়ার কারণে অধিক মূল্যে ডিজেল চালিত স্যালো মেশিন দিয়ে পানি তুলে পাট জাগ দিতে হয়েছে। এতে তাদের খরচ বেড়ে গেছে। কোনো কোনো কৃষককে বলতে শোনা গেছে যে, জমি বিক্রি করে তাদের এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হবে।
ফরিদপুরের কানাইপুরের হাট জেলার মধ্যে অন্যতম হাট। সপ্তাহের শুক্র ও মঙ্গলবার বসে এই পাটের বাজার। এখানে প্রান্তিক চাষিরা ভালো দামের আশায় পাট নিয়ে আসেন বিক্রির উদ্দেশ্যে। কারণ এখানে সরকারি ও বেসরকারি জুট মিলগুলোর পক্ষ থেকে পাট কিনতে প্রতিনিধিরা আসেন। এই বাজারে মৌসুমে প্রতি হাটে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার মণ পাট কেনাবেচা হয়। বর্তমানে কানাইপুর হাটে পাটের দর রয়েছে ২২শ থেকে ২৮শ টাকার মধ্যে। নি¤œমানের পাট বিক্রি হচ্ছে ১৮শ টাকা দরে। পাটের ক্রেতারা বলছেন, পাটের গুণগতমান ঠিক নেই, পানির সমস্যার কারণে এবার পাটের রং নষ্ট হয়ে গেছে।
বাজারে পাট নিয়ে আসা চাষিরা জানান, পানির অভাবে ম্যাশিন লাগায়্যা পুকুরে পানি দেয়া লাগছে পাট জাগ দেয়ার জন্য। একটা কৃষক নিলে খাওয়া-দাওয়া দিয়্যা ১ হাজার টাকা লাগে। তাতে পাটের দাম যা দিতেছে তাতে আমাগো কৃষকের দামই উঠে না। আমরা বাঁচি ক্যামনে। এখন তো জমি বেইচ্যা কৃষকের টাকা দিতে হবে। বাজারে যে দরের আশায় পাট নিয়্যা আইছি তার দাম পাইতেছি না। বর্ষার পানি পাইলে পাটের রং ভালো হইতো দামও পাইতাম। পুকুরে জাগ দিছি ডিজেল ম্যাশিনে পানি তুইল্যা। এখন তো ডিজেলে দামও বাইর‌্যা গেছে। আমরা চাই সরকার ডিজেলের দাম কমাক, সারের দাম কমাক দেশর উন্নতি হোক। সরকারের কাছে দাবি পাটের দাম ভালো করেন তাতে আমরা কৃষকরা বাঁইচ্যা থাকব।
পাট ব্যবসায়ী ও কানাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফকির মো. বেলায়েত জানান, আপনারা জানেন ফরিদপুর জেলার ব্রান্ডিং হলো পাট। আমাদের একটা শ্লোগান আছে, সোনালী আঁশে ভরপুর, ভালোবাসি ফরিদপুর। আমাদের জেলা ব্রান্ডিংকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সারা বাংলাদেশের পাটকলগুলোতে যে পাট সরবরাহ হয় তার বেশির ভাগ যায় ফরিদপুর থেকে। এবার পদ্মা নদী থেকে ফরিদপুরের কুমার নদে পানি প্রবেশ না করার কারণে এবং কুমার নদীতে বিভিন্ন জায়গায় স্লুইচ গেট না থাকার কারণে নদীর যে শাখা-প্রশাখা আছে তাতে পর্যাপ্ত পানি প্রবেশ করতে পারেনি। সে কারণে পাটচাষিরা পাট জাগ দেয়ার জন্য ব্যাপক সমস্যায় পড়েছিল। আমরা দেখেছি চাষিরা ছোট ছোট কূপ খনন করে অথবা ছোট ছোট পুকুরে পাট জাগ দিয়েছে। এসব জায়গায় প্রচুর পাট জাগ দেয়া হয়েছে কিন্তু পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাটের সেই সোনালি রং আসেনি।
ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশের মধ্যে ফরিদপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি পাট উৎপন্ন হয়। এবার ব্যাপক ফলন হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, পানির অভাবে আমাদের কৃষকরা পাট সময়মতো জাগ দিতে পারেননি, পাট পচাতে পারেননি। পাট জাগ দেয়ার সমস্যার কারণে পাটের সঠিক সোনালি রংটি আসেনি। বর্তমানে এটাকে বিপর্যয় বলা যায়। এখন পাট বাজারে আসতে শুরু করেছে।
স্বাভাবিক ভাবে পাটের যে দাম হওয়ার কথা তার থেকে কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এই দামে কৃষক পাট বিক্রি করলে কৃষক ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে এবং পাটের মিল-কারখানাগুলোও যথাযথ পাটের সরবরাহ পাবে না। আমি সরকারের কাছে বিশেষভাবে আবেদন করব, পাট চাষিদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য অন্তত পাটের দামটা ৩২শ থেকে ৩৫শ টাকার মধ্যে নির্ধারণ করে দেন তাহলে কৃষক তার পুঁজিটা ফেরত পাবে তারা বেঁচে থাকতে পারবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়