ভূমির কুতুবকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন আপিলে বাতিল

আগের সংবাদ

তৃণমূলে সহিংসতা বাড়ছেই : দুই সপ্তাহে অন্তত ২০টি স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে, দলগুলোকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ বিশ্লেষকদের

পরের সংবাদ

নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে বিচরণ : বিচারিক জীবন থেকে বিদায় বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নানা প্রতিকূলতা আর বাধাবিপত্তি পেরিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে বিচরণ করা বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ দীর্ঘ বিচারিক জীবন থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নিয়েছেন। মাত্র ২৬ বছর বয়সে মুনসেফ (সহকারী জজ) হয়ে স্বপ্নের প্রথম ধাপটিতে পা রাখা কৃষ্ণা দেবনাথ ৪ দশকের বিচারিক কর্মজীবন পার করে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের এক নম্বর কোর্টে পেশাগত জীবনের শেষ কর্মদিবসে তাকে দেয়া বিদায় সংবর্ধনায় প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
১৯৬৪ সালে ঢাকার সদরঘাটের ইস্টবেঙ্গল স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া শিশু কৃষ্ণা দেবনাথের বাবা দীনেশ চন্দ্র দেবনাথ তখন ঢাকার আদালতের পঞ্চম সাবজজ। প্রতিদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে মেয়েটি বাবার কর্মস্থল বিচারিক এজলাসের পাশে বসে দেখত বাবার বিচার কার্যক্রম। তখন থেকেই তার স্বপ্ন, বড় হয়ে বিচারক হবে। তার স্বপ্ন সফল হয় ১৯৮১ সালের ৮ ডিসেম্বর। সেদিন তিনি জুডিশিয়াল সার্ভিসে মুনসেফ (বর্তমান সহকারী জজ) হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৯২ সালে তৎকালীন সরকারের আমলে সাবজজ থেকে অতিরিক্ত জেলা জজ হিসেবে তার পদোন্নতি আটকে দেয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভায় পরপর তিনবার তাকে পদোন্নতি দেয়ার সুপারিশ করা ছাড়াও পদোন্নতির তালিকার শীর্ষে থাকা সত্ত্বেও তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়নি। এ সময় এগিয়ে আসেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, ড. কামাল হোসেন ও আইনজীবী এম আমীর-উল ইসলাম। আর পাশে থেকে সাহস জোগান তখনকার অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুল হক। তাদের পরামর্শে প্রায় প্রতিটি জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা হাইকোর্টে রিট করেন। এতে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ‘পরামর্শ’ শব্দটি সরকারের জন্য মানা বাধ্যতামূলকমর্মে নির্দেশনা চাওয়া হয়।
শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ১৯৯৪ সালে রুল দেন। তবে রুল নিষ্পত্তির আগেই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের হস্তক্ষেপে ওই বছরই কৃষ্ণা দেবনাথকে অতিরিক্ত জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। পরে ১৯৯৮ সালে জেলা জজ হিসেবে

পদোন্নতি পান তিনি। এরপর ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। এর দুই বছর পর ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল স্থায়ী হন। এরপর চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। আগামী ৯ অক্টোবর তিনি আনুষ্ঠানিক বিচারিক কাজ থেকে অবসরে যাবেন। ওই সময় আদালতের অবকাশকালীন ছুটি থাকায় গতকালই তার শেষ কর্মদিবস ছিল।
গতকাল বিদায় সংবর্ধনায় তিনি বলেন, আমার এই ৪১ বছরের বিচারিক জীবনে এ বিশ্বাসে আমি উপনীত হয়েছি যে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কাগজে-কলমে নিরষ্কুশভাবে বাস্তবায়ন হলেও একজন বিচারক যদি তার মননে, চলনে, বিশ্বাসে নিজেকে স্বাধীন মনে না করেন, তবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সুদূরপরাহত।
তিনি বলেন, শেষ দিনে এ আশা নিয়েই বিচারাঙ্গন থেকে বিদায় নিতে চাই যে, একজন বিচারক বিচারকাজে সম্পূর্ণ স্বাধীন। এই মূলমন্ত্র ধারণ করেই বিচারকাজ সম্পন্ন করবেন আর আপনারা অর্থাৎ বিজ্ঞ আইনজীবীরা সে কাজে সহযোগিতা করবেন। আমার ৪১ বছরের বিচারিক জীবনে আমি বহুবার বিদায় নিয়েছি। কিন্তু কর্মজীবন থেকে আজ আমার শেষ বিদায়। এরপর শুরু হবে আমার নতুন জীবন। আপনারা সবাই প্রার্থনা করবেন আমার জীবনের শেষ অধ্যায়টি যেন আমি আমার পরিবার-পরিজন নিয়ে সহজ-সরল, আনন্দময় আর সুস্থভাবে কাটিয়ে অনির্ধারিত শেষ বিদায়কে আলিঙ্গন করতে পারি।
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পুড্ডায় বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের গ্রামের বাড়ি। তবে বাবার কর্মস্থল রাজবাড়ী মুনসেফ কোয়ার্টারে ১৯৫৫ সালের ১০ অক্টোবর জন্ম নেন তিনি। তারা দুই ভাই ও তিন বোন। ১৯৭০ সালে সিলেট গার্লস স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন (মাধ্যমিক) পাস করেন তিনি। এরপর রংপুর বেগম রোকেয়া কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি জুর (আইনে স্নাতক) ও এম জুর (আইনে স্নাতকোত্তর) পাস করেন। পরে রাজশাহী জেলা আইন সমিতিতে আইন পেশা শুরু করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়