ভূমির কুতুবকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন আপিলে বাতিল

আগের সংবাদ

তৃণমূলে সহিংসতা বাড়ছেই : দুই সপ্তাহে অন্তত ২০টি স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে, দলগুলোকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ বিশ্লেষকদের

পরের সংবাদ

দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশেষ উদ্যোগ : ৩৪ খেলার মাঠে কৃষি অফিসের উদ্যোগে আমনের বীজতলা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সালেহ এলাহী কুটি, মৌলভীবাজার থেকে : অতিবৃষ্টি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে বড়লেখা উপজেলায় দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় তলিয়ে ছিল ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি। এর মধ্যে আমনের বীজতলা তৈরির সময় চলে যাওয়াতে কৃষকের মাথায় হাত। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কৃষি বিভাগের উদ্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উঁচু খেলার মাঠে বীজতলা তৈরি হয়। কৃষকের ক্ষতি পোষাতে রোপা আমনের নাবী (বিআর ২২) জাতের বীজতলা তৈরি করা হয়। যেসব কৃষকের বীজতলা তৈরির জায়গা নেই তাদের বিনামূল্যে রোপা আমন চারা বিতরণ করা।
এ ব্যাপারে একাধিক কৃষক ভোরের কাগজকে বলেন, বন্যায় হালিচারা করতে না পারায় আমরা কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করি। বন্যায় ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিনামূল্যে এই চারা পেয়ে অনেক উপকার হবে।
দাসের বাজার ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সালেহ আহমদ বলেন, ৫ ইউনিয়নের কৃষকরা আমনের বীজতলা তৈরি করতে পারছিলেন না। যেহেতু বীজ-সার দিয়ে কোনো কাজে আসবে না, তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে বীজতলা তৈরি করে তাদের বিনামূল্যে চারা বিতরণ করি। মোট ৪৮ বিঘা আপদকালীন বীজতলা থেকে আমনের চারা পেয়ে কৃষক দারুণ খুশি।
কৃষকের জন্য ৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ ও একটি সরকারি সংস্থার মাঠ আমনের চারা তৈরির জন্য ছেড়ে দেন প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। কারণ শিশু-কিশোরদের খেলাধুলায় সাময়িক অসুবিধা হলেও উৎপাদনের স্বার্থে সবাই বদ্ধপরিকর।
বড়লেখা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ১৭-১৮ জুন তারিখের অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় বড়লেখা উপজেলার পৌরসভাসহ হাকালুকি হাওর পাড়ের সুজানগর, বর্ণি, তালিমপুর ও দাসের বাজার ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়। এতে আউশ ও বোনা আমন ফসল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব এলাকায় জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত জলাবদ্ধতা ছিল। ফলে আমনের বীজতলা তৈরি নিয়ে দুচিন্তায় পড়েন স্থানীয় কৃষকরা। এ অবস্থায় বড়লেখার উপজেলায় ২ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে নাবী জাতের রোপা আমন বিআর ২২ ও বিআর ২৩ বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়। তবে ধীরগতিতে বন্যার পানি নামায় বীজতলার জমি ভাসছিল। এতে আবাদ বিঘœ হতে পারে- এমন শঙ্কা দেখা দেয়।
উপজেলা পরিষদের আর্থিক বরাদ্দে উপজেলা কৃষি পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে রোপা আমন বীজতলা তৈরির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণ করে। উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে ১৮ বিঘা রোপা আমন বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া কমিটির সহায়তায় কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির বীজ ও রাসায়নিক সার দিয়ে স্থানীয় কৃষক আরো ২২টি প্রতিষ্ঠানে ৩০ বিঘা রোপা আমন বীজতলা তৈরি করে।
যুবক সঙ্গ মাঠ (বাংলাদেশ রেলওয়ে মাঠ, বড়লেখা পৌরসভা), নারীশিক্ষা একাডেমি ডিগ্রি কলেজ, দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয়, পশ্চিমবর্ণি আয়মনা বেগম উচ্চ বিদ্যালয়, শাহবাজপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ছোটলেখা দক্ষিণভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোনাতুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কটালপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা- এমন ৩৪টি প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণ, সংলগ্ন মাঠে ৪৮ বিঘা বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নারীশিক্ষা একাডেমি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম হেলাল উদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, বড়লেখায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যা ছিল। কৃষকের আমনের বীজতলা তৈরি করতে পারছিলেন না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অনুরোধে প্রতিষ্ঠানের মাঠে বীজতলা তৈরির সুযোগ দিয়েছি।
বড়লেখা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, কৃষিবিদ দেবল সরকার বলেন, হাওর বেষ্টিত এলাকায় আমন চাষ ব্যাপক বাড়ছে। তবে বন্যার কারণে কৃষক চারা তৈরি করতে পারেনি। তাই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের চাহিদা পূরণে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এক বিঘা বীজতলার চারা দিয়ে কমপক্ষে ২০ বিঘা জমি রোপণ করা যায়। সেই হিসেবে ৪৮ বিঘা বীজতলার চারায় ৯৬০ বিঘা জমি রোপণ সম্ভব হবে। প্রতি বিঘা হতে উৎপাদিত ধানের গড় ফলন হবে ০.৬ টন। ৯৬০ বিঘা জমিতে প্রত্যাশিত উৎপাদন ৫৭৬ টন, যার বাজার মূল্য ১ কোটি ৫৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, বড়লেখা উপজেলায় বন্যায় চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমন পরিস্থিতিতে আমন মৌসুম যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার জন্য আমরা এই বিকল্প ব্যবস্থা করি।
বড়লেখা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ ভোরের কাগজকে বলেন, হাকালুুকি হাওর বেষ্টিত ৫ ইউনিয়নে জুলাই মাসের শেষদিক পর্যন্ত ক্ষেতের জমিসহ অনেক বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত ছিল। কৃষকদের কথা চিন্তা করে উপজেলা পরিষদ ও কৃষি বিভাগের উদ্যোগে কৃষকদের বিনামূল্যে আমনের চারা প্রদানের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠে বীজতলা তৈরি করা হয়। এই চারা পেয়ে উপজেলার বন্যাকবলিত কৃষকরা লাভবান হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়