ভূমির কুতুবকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন আপিলে বাতিল

আগের সংবাদ

তৃণমূলে সহিংসতা বাড়ছেই : দুই সপ্তাহে অন্তত ২০টি স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে, দলগুলোকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ বিশ্লেষকদের

পরের সংবাদ

ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে প্রশ্ন : এক হিন্দুকে বাদী করতে চেয়েছিলেন শাল্লার ওসি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের শাল্লার নয়াগাঁও গ্রামের ঝুমন দাশ তার ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট শেয়ার করেন গত ২৮ আগস্ট। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকটা ভাইরালও হয় ওই পোস্টটি। এরপরই পুলিশ নজরে রাখে ঝুমন দাশকে। দাঁড়াইন বাজারে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়। ৩০ আগস্ট দুপুরে ঝুমন দাশকে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। চলে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ।
এই দীর্ঘসময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ওসি আমিনুল ইসলাম খুঁজেছিলেন একজন হিন্দু ব্যক্তিকে ওই মামলার বাদী করা যায় কিনা। তাহলে এতে আর কোনো বিতর্ক থাকবে না। তাও আবার সাধারণ কোনো হিন্দু নয়, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিন্দু। সে অনুযায়ী প্রস্তাব করা হয় উপজেলার বাহাড়া ইউপির ভেড়াডহর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয় কুমার বৈষ্ণবকে। প্রস্তাবে জয় কুমার বৈষ্ণব রাজি না হওয়ায় ভেস্তে যায় ওসির এই পরিকল্পনা। পরে মধ্যরাতে এসআই সুমন নুর ইসলাকে বাদী করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় ঝুমন দাশকে।
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা জয় কুমার বৈষ্ণব মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদকে বলেন, ঝুমন দাশের মামলার বাদী আমাকে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ওসি। আমি বলেছি-

আমি ফেসবুক দেখিও না, বুঝিও না। আমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে প্রথমই তো আটকে যাব। তাছাড়া আমি অসুস্থ। পরে আমি চলে আসি। এ ব্যাপারে উপজেলা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাশ বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবটি করা হয়েছিল। তারা হয়তো চেয়েছিল একজন হিন্দু লোককে বাদী করতে। সেই হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা জয় কুমার বৈষ্ণবকে প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু কোনো হিন্দু লোক বাদী হতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট দিপু রঞ্জন দাশ বলেন, ‘আমরা কইছি আপনাদের ইয়ে আমরারে জড়ায়েন না। সে (ঝুমন দাশ) এমন কিছু করছে না, যা দেশ ও সমাজ বিরোধী। যার জন্য আমরা বাদী হয়ে মামলা করতে হবে।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা জগদীশ সরকার বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা বাদী হবে কেনো। এমনটা হলে খুবই দুঃখজনক হতো। আমি ওসিকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করব কেন তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধাকে বাদী করতে চেয়েছিলেন।
তবে এ বিষয়ে ওসি আমিনুল ইসলামের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।

সরজমিনে ঝুমন দাশের গ্রাম নয়াগাঁও গিয়ে দেখা যায়, নি¤œমানের ঢেউটিন দ্বারা যৌথভাবে তৈরি ঝুমন দাশের ঘরের অংশটুকু বন্ধ। ওই ঘরে গত বছরের ভাঙচুরের ক্ষত এখনো রয়েছে। দেখেই বুঝা যায় ঝুমন দাশের পরিবারের যে ‘নুন আনতে যে পান্তা ফুরায়’ এমন অবস্থা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নয়াগাঁও গ্রামের অনেকই বলেছেন, এটি প্রতিপক্ষের ইন্ধনেই আরেকটি মামলা দেয়া হয়েছে। ফেসবুকে দেয়া ঝুমন দাশের স্ট্যাটাসে এলাকায় কোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। তবে গত বছরের সাম্প্রদায়িক হামলা মামলার আসামিদের থানার লোকজনদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠতে দেখা গেছে বলে জানান তারা।

মুঠোফোনে ঝুমন দাশের মা নিভা রাণী দাশ বলেন, সিরাজগঞ্জের ‘একটি মন্দিরের সামনে মসজিদের দানবাক্স’ নিয়ে নিজের মতামত দিয়েছে আমার ছেলে। এই পোস্ট তো অনেকেই দিয়েছে। শুধু আমার ছেলে লিখলেই দোষের। বন্যার সময় তো দেশ বিদেশ থেকে আসা ত্রাণ সামগ্রী হিন্দু-মুসলমানের ঘরে ঘরে বিতরণ করেছে। তাহলে আমার ছেলে সাম্প্রদায়িক কীভাবে হলো? গত বছরও আমার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে পুলিশ। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে হাত পেতে টাকা এনে মামলার তারিখে যেতে হয়েছে। আমি গরিব মানুষ। ঘরেই ছোট একটি মুদি দোকান চালায় ঝুমন। দোকানটিও আর থাকবে না। এখন খাইমুই কি আর মামলাই বা চালাইমু কেমনে। নিভা রাণী দাশ তার ছেলের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান আদালতের কাছে।

সাম্প্রতিক একটি পোস্টকে ঘিরে গত মঙ্গলবার সকালে শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের বাড়ি থেকে ঝুমন দাসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওইদিন রাতে পুলিশ বাদী হয়ে দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বুধবার দুপুরে সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লা জোন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ঝুমনকে হাজির করার পর বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ঝুমন দাসের ফেসবুক আইডিতে ধর্মকে ইঙ্গিত করে ‘উসকানিমূলক’ পোস্ট দেয়া হয়। উসকানিমূলক এই পোস্ট দেয়ার পর তিন দিন এলাকায় পুলিশ মোতায়েন ছিল। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে তাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয় তার বিরুদ্ধে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়