ভূমির কুতুবকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন আপিলে বাতিল

আগের সংবাদ

তৃণমূলে সহিংসতা বাড়ছেই : দুই সপ্তাহে অন্তত ২০টি স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে, দলগুলোকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ বিশ্লেষকদের

পরের সংবাদ

আলোর মুখোমুখি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

তিনটায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শুরু হলো তিনটার পর। তখনো অনেক চেয়ার খালি। কোনো কোনো আলোচক সময় মতো এসেছেন। কেউ কেউ আসছেন। সূচনাকথায় শুরু করেন প্রেরক প্রধান শফিকুল আহমেদ ভূঁইয়া। এরপর শুরু হয় অমৃতকথন। সাংবাদিক উবায়দুল হক শুরুতেই বলেন তথ্যনির্ভর উদাহরণে। মিডিয়ার ভালো-খারাপ দিক নিয়ে। এরপর রক্তসেবা দেয়া সংগঠক মমিনুর রহমান প্লাবন তরুণদের সাহসী হওয়ার কথা উচ্চারণ করেন।
শরতের নীলাকাশে এলোমেলো ঘোরাঘুরি করছে শুভ্র সাদা মেঘ। মেঘেদের কেন যেন আজ খুব অস্থির দেখাচ্ছে। দুপুরের কড়া রোদ পেরিয়ে সূর্যটাও ক্লান্ত হয়ে হেলে পড়েছে পশ্চিমকাশে। গাছের পাতারাও নীরব-নিশ্চুপ। এতটুকু বাতাসও বইছে না। ব্রহ্মপুত্রও বেশ শান্ত। কিন্তু আজ বড্ড অশান্ত ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে জড়ো হওয়া প্রত্যেকটা মানুষের মন। সকলের চোখেমুখই ভয় আর আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। নানা বয়সি, শ্রেণি-পেশার মানুষ আজ এক মঞ্চে এসে দাঁড়িয়েছেন একই সংকট সমাধানের পথ খুঁজতে।
কী সেই সংকট? কেন সকলের মন ভার? এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে চারদিকে দাঁড়িয়ে আছে সাদা-কালো ফেস্টুন। যেখানে লেখা আছে আত্মহত্যাবিরোধী স্লোগান। আত্মহত্যা প্রতিরোধবিষয়ক আয়োজন ‘আলোর মুখোমুখি’ শুনতে আসেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এছাড়া ছুটির দিনের বিকালে নদীরপাড়ে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা মানুষও থমকে দাঁড়িয়েছেন খোলা মঞ্চের সামনে। গত ২৬ আগস্ট ময়মনসিংহ নগরীর জয়নুল উদ্যানে আয়োজন করে ‘প্রেরক’। যে সংগঠন কাজ করে আত্মহত্যা নিয়ে; যুব-তারুণ্যের সুন্দর আগামীর ভাবনায়।
তখনো কিছু চেয়ার খালি। সুবর্ণকথা নিয়ে আসেন আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের। ক্ষুরধার কথায় নিজের জীবনের বাস্তবতায় তিনি বলে ওঠেন- ‘আমার বাবা আমার ভিলেন’! ভরাট কণ্ঠ চারদিকের মানুষকে চেয়ারমুখী করতে থাকে। আত্মহত্যা করতে যাওয়া জোবায়ের কীভাবে বেঁচে ফিরেন, কেন করতে চেয়েছিলেন, এসব উচ্চারণে হা করে তাকিয়ে আছে তখন শ্রোতা, আমন্ত্রিতজনরা। চেয়ার পরিপূর্ণ হয়ে তখন চতুর্পাশে ভিড় করে দাঁড়ানো শ্রোতা। বাবাকে নিয়ে এত এত নেতিবাচক কথা শেষে সেই জোবায়ের বলেন, ‘এখন আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমার বাবাই।’
এরপর জ্যেষ্ঠ সুবর্ণকথক আসেন মঞ্চে। আসেন লেখক, গবেষক ও শিক্ষক স্বপন ধর। যার মেয়ে সৃজা বারো তলা ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছিল। যা দেখে পুরো দেশ হতবিহ্বল হয়েছিল। বিদ্যাময়ী স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৃজার বাবা যখন শুরু করেন, তখন সবার মুখ কালো। চোখের কোণে বৃষ্টিরা জমাট বাঁধছিল যেন। মেয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অঝোরে কেঁদেছেন, কাঁদিয়েছেন সকলকে। জোবায়েরের কথার জের ধরে তিনি বলেন, ‘একটা বয়সে বাবাকে ভিলেন মনে হয় ছোটদের। ধীরে ধীরে সে বাবা হয়, দাদু হয়। তখন সে ভুল ভাঙে।’ এত কোলাহলমুখর জয়নুল উদ্যান তখন যেন নীরবতায় কাতর। ‘প্রেরক’ যেন সারাদেশে আত্মহত্যা বিষয়ে কাজ করে সেই আহ্বানও জানান। এবং একজন সৃজাও যেন আত্মহত্যা না করে দুহাত তুলে এই আহ্বান জানিয়ে সুবর্ণকথা শেষ করেন স্বপন ধর।
কবি, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক ফরিদ আহমদ দুলাল যখন বলেন, ‘সকলের আত্মহত্যা করা উচিত’ তখন সবাই যেন আকাশ থেকে পড়েন। বলে কী? তিনি ভাঙিয়ে বলেন, ‘মানুষ যদি নিজেকে অতিক্রম করতে চায় এবং নিজের ভেতরের পশুকে হত্যা করে নতুন জন্মের স্বাদ নিতে চায়, তাহলে তার আত্মহত্যা করাই উচিত।’ দর্শকসারিতে তখন করতালির জোয়ার।
এরপর সকল আলোচক-শ্রোতার কাছে সময়ের দাবি হয়ে ওঠে ‘আলোর মুখোমুখি’ আয়োজনটি। যার খবর গত ক’দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বিপুলভাবে। আয়োজন চত্বরজুড়ে ছিল ফেস্টুনে লেখা আত্মহত্যাবিরোধী নানা সেøাগান। তার মধ্যে ‘সন্তানকে সময় দেয়ার মতো সুন্দর সময় আর নাই/জীবনযুদ্ধে ভয় নয় আত্মহত্যা আর নয়/আত্মহত্যা প্রতিরোধে সবাই দাঁড়াই এক সাথে/শুধু মোবাইল নয় মাঠে যাই/নিজের সাথে নিজে চিন্তায় বসো’ এমন সব সেøাগান সকলের মনোযোগ কাড়ে।
এছাড়া আত্মহত্যাবিরোধী আয়োজনে কথা বলেন ময়মনসিংহ চাইন্ড ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা রিশান, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের সহকারী অধ্যাপক মফিজুর নূর খোকা, ইসলামী শিক্ষাবিদ ও লেখক লাবীব আব্দুল্লাহ, দুর্গাবাড়ি ধর্মসভার প্রধান পুরোহিত অরুণ ভট্টাচার্য, শিক্ষক, শান্তির দূত, ওয়ার্ল্ড স্কাউটস হাসান মাসুদ, শিক্ষক, শিল্পী তাপস মজুমদার, কবি ও শিক্ষক মিজানুর রহমান টিটু, শিক্ষক ও আইটি বিশেষজ্ঞ সুমন হাবিব, ডা. হুমায়ূন কবির, সমাজকর্মী আয়েশ উদ্দিন ভূঁইয়া, সমাজদরদি, কবি কাব্য সুমী সরকার, ক্লিনআপ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা এডভোকেট মতিউর রহমান ফয়সাল, আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের, মমিনুর রহমান প্লাবন, কথাশিল্পী সাদিয়া জামান, শিক্ষার্থী ও উপস্থাপক নুবাহ নাশিতা ফারিহাত, আতিফ আসাদ প্রমুখ। কবিতাপাঠ করেন কবি কাঙাল শাহীন। অনুষ্ঠানের মাঝে কণ্ঠে ভেসে আসে ‘ধন ধান্য পুষ্পে ভরা’ গান। এরপর ফাঁকে ফাঁকে প্রেরণা গান শোনান ‘আবিষ্কার’-এর হীরক সিঙ্গার।
সভাপতির বক্তব্যে কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ, শিশুরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. মীর্জা মানজুরুল হক গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দেন। এ বিষয়ে সকল কার্যক্রমে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখার, সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাসও দেন তিনি।
এমন একটি সময়োপযোগী আয়োজনের সকল ভার ছিল একজনের কাঁধে। ময়মনসিংহ শহরে যিনি শিল্প-সংস্কৃতি-সামাজিক আয়োজনে দেন ভিন্ন স্বাদ, ভিন্ন ভাবনা। সকল অঙ্গনের মানুষকে যিনি একত্রিত করতে জানেন তিনি কবি ও সংগঠক শামীম আশরাফ।

-সাদিয়া জামান

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়