যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি

আগের সংবাদ

সংঘর্ষে চার জেলা রণক্ষেত্র : নারায়ণগঞ্জ মানিকগঞ্জ সিরাজগঞ্জ নেত্রকোনায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ : নিহত ১, আহত দুই শতাধিক

পরের সংবাদ

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন : দুনিয়া কাঁপানো খবর যে বৈঠকে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : সোভিয়েত ইউনিয়নের তিনটি প্রজাতন্ত্র- রাশিয়া, ইউক্রেন এবং বেলারুসের নেতারা সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য গোপনে একটি চুক্তিতে সই করেছিলেন ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাসে। চুক্তিটি হওয়ার পর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচভ পদত্যাগ করেন এবং তার জের ধরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
সে সময় কঠিন সময় পার করছিলেন মিখাইল গর্বাচভ। ততদিনে পূর্ব ইউরোপে সমাজতন্ত্র ভেঙে পড়েছে। পতন হয়ে গেছে বার্লিন প্রাচীরের। কিন্তু তখনো পর্যন্ত টিকে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন যার নেতৃত্বে ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মিখাইল গর্বাচভ।
কট্টরপন্থি কমিউনিস্টরা ১৯৯১ সালের আগস্ট মাসে গর্বাচভের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায়। তারা গর্বাচভের গৃহীত উদারপন্থি কর্মসূচি ‘গøাসনস্ত পেরস্ত্রইকার’ ব্যাপারে খুশি ছিলেন না।
সেই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় গর্বাচভ বেঁচে গেলেন ঠিকই, কিন্তু নতুন এক সমস্যার মুখোমুখি হলেন। কারণ ইউক্রেনসহ সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৫টি প্রজাতন্ত্রের অনেকগুলোতেই এর মধ্যে স্বাধীনতার দাবি জোরাল হয়ে উঠেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট লিওনিদ ক্রাভচুক তখন পথ খুঁজছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে। তিনি বলেন, সেসময় স্বাধীন ইউক্রেন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তার প্রধান অগ্রাধিকার।
ইউক্রেন, বেলারুস এবং রাশিয়া- এই তিনটি প্রজাতন্ত্রের নেতারা বৈঠকে বসেন ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাসে। এই বৈঠকের জের ধরেই আকস্মিকভাবে পতন ঘটে সোভিয়েত ইউনিয়নের।
বেলারুসের প্রেসিডেন্ট স্তানিস্লাভ শুশকেভিচ বৈঠকটি ডেকেছিলেন। তার সঙ্গে যোগ দেন রাশিয়ার নেতা বরিস ইয়েলৎসিন এবং ইউক্রেনের লিওনিদ ক্রাভচুক। ইউক্রেন ততদিনে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষার কথা ঘোষণা করে ফেলেছে। কিন্তু বেলারুস তখনো সেরকম কিছু করেনি। বেলারুসের প্রেসিডেন্ট স্তানিস্লাভ শুশকেভিচ বলেছেন বৈঠকে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তার মনে এরকম কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও ছিল না।
তিনি চেয়েছিলেন শীতকালে বেলারুসে কীভাবে তেল এবং গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করতে।
বৈঠকের পূর্ব নির্ধারিত আলোচ্য-সূচি যাই হোক না কেন, রাশিয়ার নেতা বরিস ইয়েলৎসিনসহ তারা তিনজনই জানতেন মিখাইল গর্বাচভকে না জানিয়ে এরকম একটা বৈঠকে বসা কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।
বেলারুসের নেতা শুশকেভিচ বলেন, ‘মিখাইল গর্বাচভের নির্দেশে সোভিয়েত গুপ্তচর সংস্থা কেজিবির গোয়েন্দারা আমাদের গ্রেপ্তার করতে পারতো। কারণ সোভিয়েত কেজিবি তখনো গর্বাচভের অধীনে। কিন্তু আমাদের বেলারুসের গুপ্তচর সংস্থার প্রধান বরিস ইয়েলৎসিনের গুপ্তচর সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন।’ রাশিয়ার নেতা বরিস ইয়েলৎসিন, ইউক্রেনের নেতা লিওনিদ ক্রাভচুক এবং বেলারুসের নেতা স্তানিস্লাভ শুশকেভিচ ১৯৯১ সালের ৭ ডিসেম্বর বৈঠকে বসেন। এর পরের দিন ৮ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় এই তিন নেতা তাদের প্রধানমন্ত্রীদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। বেলারুসের নেতা স্তানিস্লাভ শুশকেভিচ জানালেন যে বৈঠক শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির ব্যাপারে সমঝোতার প্রথম পরিচ্ছদটি লিখতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। বেলারুশ নেতা বলেন, আমার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই লাইনটি আমি মনে রাখবো। এটি ছিল আমাদের সমঝোতার শুরুর লাইন। কোনো ধরনের তর্কাতর্কি ছাড়াই এই লাইনটির ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছিলাম। লাইনটি ছিল এরকম: ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা এবং আন্তর্জাতিক আইনের বিষয় হিসেবে ইউনিয়ন অব সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকস বা ইউএসএসআর-এর কোন অস্তিত্ব আর নেই।
লাইনটি শোনার পর বেলারুসের নেতা শুশকেভিচ প্রথম বলেছিলেন যে এতে সবার আগে সই করতে চান। এই চুক্তির ফলে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচভ কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেলেন। তখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিনের হাতে আরো কিছু ক্ষমতা তুলে দেওয়া হলো।
এর মধ্য দিয়ে কয়েক শতাব্দীর রুশ সাম্রাজ্য এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের অবসান ঘটল। এটা ছিল বিরাট এক পদক্ষেপ। এর পরে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছিল যে, এই তিন নেতা সুস্থ মস্তিষ্কে এই চুক্তিতে করেছিলেন কিনা।
দুনিয়া কাঁপানো ঘটনা : এর পরের কয়েক ঘণ্টায় চুক্তির মোট ১৪টি অনুচ্ছেদ গৃহীত হয়। রাত তিনটে নাগাদ তৈরি হয়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি ঘোষণার কাগজপত্র। তখন পুরো বিশ্বকে সেটা জানানোর পালা।
বেলারুসের নেতা শুশকেভিচ বলেন, ‘ইয়েলৎসিন এবং ক্রাভচুক কৌতুক করে আমাকে বললেন, আমরা দু’জন মিলে আপনাকে মনোনীত করেছি গর্বাচভকে বিষয়টি জানানোর জন্য। তখন আমি হেসে বললাম, মিস্টার ইয়েলৎসিন, আমি আর ক্রাভচুক মিলে আপনাকে মনোনীত করছি আপনার প্রিয় বন্ধু প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে ফোন করার জন্য।’
‘এর পর আমি মস্কোতে মিখাইল গর্বাচভের অফিসে ফোন করি। কিন্তু তারা আমাকে গর্বাচভের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে দিচ্ছিল না। তারা আমার কলটিকে একজনের পর আরেকজনের কাছে দিচ্ছিল। আর আমাকে বারবার ব্যাখ্যা করতে হচ্ছিল, আমি কে, কোত্থেকে ফোন করেছি!’
‘আর ইয়েলৎসিন যখন দেখলেন আমি মস্কোতে টেলিফোনে কথা বলছি, তখন তিনি প্রেসিডেন্ট বুশকে ডায়াল করলেন। আর তার পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী আঁন্দ্রে কোজিরেভ আরেকটি লাইনে প্রেসিডেন্ট বুশের কথা অনুবাদ করে দিচ্ছিলেন। ইউক্রেনের নেতা লিওনিদ ক্রাভচুক দু’জনের কথা শুনছিলেন।’
এর মধ্যেই বেলারুসের নেতা শুশকেভিচ টেলিফোনে গর্বাচভের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেলেন। এবারো তাদের দুজনের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন ইউক্রেনের নেতা ক্রাভচুক।
ইউক্রেনের নেতা ক্রাভচুক বলেন, ‘দু’জনের মধ্যে কঠিন আলাপ হচ্ছিল। গর্বাচভ তার ওপর খুব রেগে গিয়েছিলেন। তিনি বলছিলেন, আপনারা কী করেছেন! পুরো দুনিয়া উলট-পালট করে দিয়েছেন। সবাই তো আতঙ্কের মধ্যে আছে।’
‘আমি গর্বাচভকে বললাম, আমরা কী ধরনের চুক্তিতে সই করতে যাচ্ছি। গর্বাচভ তখন বললেন, তাহলে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের কী হবে? তখন আমি বললাম, আসলে বরিস ইয়েলৎসিন এখন প্রেসিডেন্ট বুশের সঙ্গে কথা বলছেন। এবং প্রেসিডেন্ট বুশের মনে হয় আপত্তি নেই!,’ বলেন বেলারুসের প্রেসিডেন্ট শুশকেভিচ। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই বৈঠকে বসা তিন নেতা এ উপলক্ষে ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে ঐতিহাসিক এই চুক্তিতে সই করেন। বেলারুসের প্রেসিডেন্ট স্তানিস্লাভ শুশকেভিচ বাড়ি ফেরার পথে বুঝতে পারলেন, তারা যা করেছেন তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব কতোটা।
পরে তিনটি আঞ্চলিক পার্লামেন্টেই এই সমঝোতা অনুমোদন করা হয়। এরে পরের কয়েক সপ্তাহ ধরে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্য প্রজাতন্ত্রগুলোও এতে যোগ দিতে শুরু করে।
১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট গর্বাচভ পদত্যাগ করেন। এর মধ্য দিয়ে বিলুপ্ত হয়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। সূত্র বিবিস

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়