যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি

আগের সংবাদ

সংঘর্ষে চার জেলা রণক্ষেত্র : নারায়ণগঞ্জ মানিকগঞ্জ সিরাজগঞ্জ নেত্রকোনায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ : নিহত ১, আহত দুই শতাধিক

পরের সংবাদ

সিপিডির গবেষণা প্রতিবেদন : ৪২ শতাংশ কারখানা নিয়মের মধ্যে নেই

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : করোনাকালীন তৈরি পোশাক খাতে উচ্চ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে ওই সময় গড়ে ১৮ দশমিক ১ শতাংশ শ্রমিককে জোর করে কাজ করানো হয়েছে। যেখানে পুরুষ শ্রমিকদের সংখ্যা বেশি ছিল। এছাড়া ৪২ শতাংশ কারখানা কোনো নিয়মের মধ্যে নেই। ৪৫ শতাংশ কারখানা ভাড়ায় চলে। ২৫ শতাংশ কারখানার সার্টিফিকেট নেই।
করোনা কেটে যাওয়ার পর পোশাক খাতের শ্রমিকের কাজ করার হার ২০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু আশঙ্কাজনক বিষয় হলো, দেশে যে নারী শ্রমিক একটা সময় ৮৫ শতাংশ ছিল সেটি ধীরে ধীরে কমে ৬৮ শতাংশে নেমে এসেছে। কেন এ নারী শ্রমিকের আধিক্য পোশাক খাতে কমে এলো তা গবেষণার দাবি রাখে।
গতকাল বুধবার ‘সাম্প্রতিক আরএমজি প্রবৃদ্ধি : উপযুক্ত কর্মসংস্থান সম্পর্কে আমরা কী শিক্ষা পেয়েছি’ শীর্ষক আলোচনায় উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
৫১টি পোশাক কারখানার ১২৪৪ জন শ্রমিকের ওপর এ জরিপ পরিচালিত হয়। যেখানে ৬০ শতাংশ নারী আর ৪০ শতাংশ পুরুষ শ্রমিক অংশ নেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন বিজিএমইএ সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম এবং বিকেএমইএ জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. হাতেমসহ এ খাতের শ্রমিক নেতা এবং শ্রমিক সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রধানরা।
গবেষণায় উঠে এসেছে, পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতেই বাড়তি পরিশ্রম করে তারা জীবন ধ্বংস করছে। একজন শ্রমিক আট ঘণ্টার জায়গায় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করছে। হাড়ভাঙা অতিরিক্ত কাজের চাপ নিয়ে ইতোমধ্যে কেউ কেউ মারাও গেছে। অথচ মালিকরা মনে করেন শ্রমিকরা ভালো আছে। নিত্যপণ্যের বেড়ে যাওয়া দামের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকরা এখন বেশি ওভারটাইম করছেন বলে একটি গবেষণায় উঠে এসেছে। এই অতিরিক্ত কায়িক শ্রমের ধকল সইতে না পেরে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলেও দাবি করেছেন একজন শ্রমিক নেতা। এই পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ‘বেঁচে থাকার মতো ব্যয় নির্বাহে’ নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। এ দাবির জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, তারা শ্রমিকদের ভালো চান। তাদের যেমন অর্ধাহারে দেখতে চান না, আবার মালিকরাও ব্যয় সামলাতে না পেরে ছিটকে পড়ুক তাও দেখতে চান না। এ ক্ষেত্রে একটি মধ্যপন্থা খুঁজে বের করার কথা বলেছেন তিনি। জরিপে উঠে এসেছে, প্রায় ৩০ শতাংশ পোশাক কারখানাকে কলকারখানা পরিদর্শন বিভাগের পরিদর্শকদের বাড়তি অর্থ ঘুষ হিসাবে দিতে হয়েছে যা অবৈধ। গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, শ্রমিকের আয়ের তুলনায় ব্যয় সাড়ে ৯ শতাংশ বেড়েছে। ব্যয় সামলাতে তারা এখন আগের থেকে বেশি কাজ করছে। এতে ৮৪ শতাংশ কারখানায় অতিরিক্ত কাজের চাপের প্রমাণ পাওয়া গেছে। পোশাক কারখানাগুলোতে গড়ে ৪০ জন করে শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে বলেও জানান গোলাম মোয়াজ্জেম। নারী শ্রমিকের প্রতি যৌন হয়রানি কমলেও সাম্প্রতিক সময় শিশু শ্রমিকের সংখ্যা সাবকন্ট্রাক্টের কারখানায় বেড়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় মূল প্রবন্ধে। অনেক কারখানায় শ্রমিকরা যথাযথ আইনি অধিকার পায় না উল্লেখ করে মোয়াজ্জেম জানান, ব্র্যান্ড বায়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর লেবার রাইট ইস্যুতে মনিটরিং আগের তুলনায় কমেছে। এর বিপরীতে সাম্প্রতিক সময় পোশাক কারখানাগুলোতে ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলোর অর্ডার বেড়েছে।
তৈরি পোশাক শিল্পের করোনার টিকার প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭৪ দশমিক ৩ শতাংশ শ্রমিক করোনার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন মাত্র ২০ শতাংশ শ্রমিক। যাদের ওপর জরিপ করা হয় তারা কেউ বুস্টার ডোজ নেননি। শ্রমিকদের টিকা নেয়ার বিষয়ে কারখানার মালিকপক্ষ ও খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, শ্রমিকদের টিকা নিতে গেলে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে, এত সময় ব্যয় করে তারা টিকা নিতে আগ্রহী হয় না। তাই করোনাকালীন সরকারি উদ্যোগে যেভাবে প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছিল, সেটা চলমান রেখে দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ দেয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানান। দেশে এক হাজার ১৩৪টি পোশাক কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন আছে। আসলে ট্রেড ইউনিয়নে শ্রমিকদের কোনো উপকার হচ্ছে কিনা তা নিয়ে গবেষণা করা দরকার।
কারখানায় নারী শ্রমিক কমে যাওয়ার যুক্তি হিসেবে মালিকদের দাবি যন্ত্রের ব্যবহার যত বাড়বে শ্রমিক তত কমবে। এখন মেশিন চালাতে হলে দক্ষতার দরকার হয়। বেশির ভাগ নারী শ্রমিকের এক্ষেত্রে দক্ষতার অভাব রয়েছে। তাই নারী শ্রমিক কমছে। নারীদের ধরে রাখতে হলে দক্ষতা বাড়াতে হবে। তবে শ্রমিক নেতারা জানান, এ পর্যন্ত যেসব শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের উদ্যোগ নিয়েছে তাদেরই চাকরি হারাতে হয়েছে। নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. হাতেম বলেন, আমরা আসলে সমস্যাগুলো আগে দেখি যাতে সমাধানটা বের করা যায়। সে কারণে সমস্যাগুলোই সবার সামনে আগে আসে। শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, দেশে এখন ১১৩৬ ইউনিয়ন আছে। ফলে ইউনিয়ন করতে দেয়া হচ্ছে না- এই দাবি সঠিক নয়। নারী শ্রমিকের ঘাটতির পেছনে নারীর কাজে দক্ষতার ঘাটতিকেই দায়ী করেন তিনি।
আগের তুলনায় পোশাক খাতের শ্রমিকরা ভালো আছে দাবি করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, শ্রমিকদের আয়, পোশাক-আশাক, চলনেবলনে ও দক্ষতায় আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। এসব কারণে পোশাক খাতেও সমৃদ্ধি বেড়েছে। শ্রমিকের বর্তমান সংকট মালিক, শ্রমিক ও সরকার সম্মিলিতভাবে দূর করবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদেরকে একটি ব্যালেন্স ওয়ে আউট বের করতে হবে। সমস্যা থাকবে। এর জন্য আমাদের সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে।
মাতৃত্বকালীন ছুটিতে বৈষম্যের অভিযোগ করে শ্রমিকরা জানান, সরকারি অফি সে মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস। এ ছাড়া কাগজে কলমে মাতৃত্বকালীন ছুটির কথা থাকলেও তা বেশিরভাগ শ্রমিক পান না। অনেকক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন ছুটি নয়, চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। শ্রমিক নেতারা আরো বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। শ্রমিকের জীবনে সংকট বাড়ছে। ৪ বছর আগে মজুরি বাড়ানো হয়। মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে মজুরি বাড়ানোর কথা এখনো সরকার বিবেচনা করছে না। যতদ্রুত সম্ভব মজুরি বাড়ানো আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়