যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি

আগের সংবাদ

সংঘর্ষে চার জেলা রণক্ষেত্র : নারায়ণগঞ্জ মানিকগঞ্জ সিরাজগঞ্জ নেত্রকোনায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ : নিহত ১, আহত দুই শতাধিক

পরের সংবাদ

রামগড় স্থলবন্দর : অবকাঠামোর কাজ বন্ধ হলেও চালু হচ্ছে ইমিগ্রেশন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

করিম শাহ, রামগড় (খাগড়াছড়ি) থেকে : সীমান্ত জটিলতায় রামগড় স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণকাজ বন্ধ থাকলেও প্রাথমিকভাবে চালু হচ্ছে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম। তবে বন্দরের চার তলা প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ও পোর্ট ভবন, চার তলা ডরমেটরি ভবন, এক্সেল কন্ট্রোল কক্ষ, বাংলাদেশ-ভারত ট্রাক টার্মিনালসহ নানা অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ হওয়ার আগে এই বন্দরে পণ্যবাহী পরিবহন যাতায়াতের সুযোগ তৈরি হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
গত সোমবার নৌপরিবহন সচিব মো. মোস্তফা কামাল বন্দরে নির্মাণাধীন ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণকাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের জানান, ইমিগ্রেশন ভবন নির্মাণ শেষ পর্যায়ে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রামগড় স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও কাস্টমসের দিক থেকে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। উদ্বোধনের পর যখনই অন্যান্য অফিস এসে বসবে তখনই ইমিগ্রেশন কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হবে। তখন দুদেশের নাগরিকরা ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সহজে যাতায়াত করতে পারবেন।
জানা গেছে, খাগড়াছড়ির রামগড় ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুম সীমান্তের ফেনী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ নানা লক্ষ্যকে সামনে রেখে মৈত্রী সেতুর বাংলাদেশ অংশে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করার কথা রামগড় স্থলবন্দর। অবকাঠামো নির্মাণে সরকার এর অনুমোদন দিয়েছে ২০১৭ সালে। এরপর স্থলবন্দরের জন্য প্রথমে ১০ ও পরে আরো ১৬ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয় প্রায় ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে এই বন্দরের নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে ঠিকাদারও নিয়োগ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সীমান্ত জটিলতার অভিযোগ তুলে গত জানুয়ারিতে নির্মাণকাজে বাধা দেয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। ঠিকাদার কাজ শুরুর প্রস্তুতি নিলে বন্ধ হয়ে যায় বন্দরের স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণকাজ।
সূত্রমতে, স্থলবন্দরের স্থায়ী কাঠামো তৈরি নিয়ে জটিলতার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় অস্থায়ী অবকাঠামোয় ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালু করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। জটিলতা নিরসন হলে বন্দর দিয়ে পণ্যবাহী গাড়িসহ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হবে বলেও জানান তারা। মূলত ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের আগে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শুরু করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করায় প্রথমে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালু করছে বাংলাদেশ বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রামগড়ে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত বাংলাদেশ-ভারত প্রথম মৈত্রী সেতু-১ উদ্বোধন করেন। ১৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৪.৮০ মিটার প্রস্থের মৈত্রী সেতু-১ নামে আন্তর্জাতিক এই সেতুটি নির্মাণ করে ভারত সরকার। প্রাথমিকভাবে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালু হলে দুদেশের নাগরিকরা ভিসা নিয়ে মৈত্রী সেতু-১ হয়ে যাতায়াতের সুবিধা পাবেন।
রামগড় পৌর মেয়র রফিকুল আলম কামাল বলেন, ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালু হচ্ছে এতে আমরা আশার আলো দেখছি। তবে বন্দর টার্মিনাল নির্মাণ ও পণ্যবাহী পরিবহন সুবিধা চালু হলে এ অঞ্চলের মানুষ লাভবান হবেন। তখন চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের জন্য নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি হবে। তবে এ বন্দরের সরচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো। তারা সহজে ও কম খরচে অল্প সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহনের সুবিধা পাবেন।
রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কার্বারি বলেন, রামগড়সহ পুরো দেশ এই বন্দরের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছে। সবাই আশা করে বন্দরের কাজ শেষ হলে বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও আত্মিক সম্পর্ক বাড়বে। কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং যোগাযোগ সুবিধা পাবে বাংলাদেশ ও ভারত।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমীন জানান, সীমান্ত জটিলতায় মূল অবকাঠামো নির্মাণ এখনো শুরু হয়নি। তবে এই জটিলতা নিরসনে দুদেশে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে।
রামগড় ৪৩ বিজিবির জোন কমান্ডার (সিও) লেফটেনেন্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান বলেন, নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো দেশের আন্তর্জাতিক সীমানার দেড়শ গজের মধ্যে কোনো স্থাপনা করতে হলে সেই স্থাপনার নকশায় অবশ্যই দুদেশের সীমান্ত বাহিনীর অনুমোদন নিতে হয়। ২০১৭ সালে সরকার রামগড় স্থলবন্দরের অনুমোদন দিয়েছে। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত বিজিবি দিয়ে ভারতের বিএসএফের কাছ থেকে নকশার অনুমোদনের বিষয়টি সমাধান করেনি। নকশা অনুমোদন হলে কাজ শুরু করতে দেরি হবে না।
রামগড় স্থলবন্দরের প্রকল্প পরিচালক মো. সারওয়ার আলম বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ২৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণে মনিকো লিমিটেড নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু সীমান্ত জটিলতায় নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে জটিলতা নিরসনে বাংলাদেশ-ভারতের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চলছে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বিষয়টি সমাধান হলে দ্রুত বন্দর অবকাঠামো নির্মাণ পুরোদমে শুরু হবে।
সারওয়ার আলম আরো বলেন, দীর্ঘ সময় বন্দর অবকাঠামো নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় প্রকল্পের মেয়াদ আরো এক বছর বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছি। তবে পুরো প্রকল্প শেষ করতে আরো বেশি সময় ও অর্থ লাগবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়