যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি

আগের সংবাদ

সংঘর্ষে চার জেলা রণক্ষেত্র : নারায়ণগঞ্জ মানিকগঞ্জ সিরাজগঞ্জ নেত্রকোনায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ : নিহত ১, আহত দুই শতাধিক

পরের সংবাদ

প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়নের টাকা লুটপাট!

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শুকদেব নাথ তপন, ফেনী থেকে : ফেনী জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কমিশন দিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ তুলে নেয়া হয়েছে। বিল তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে প্রকৌশলী ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। জেলার ১৪২টি বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামতে গত শিক্ষাবর্ষে বরাদ্দের ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা নয়-ছয় করে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর ফেনী জেলার ৫৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটিতে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির জন্য ১০ হাজার, স্লিপ প্রকল্পের জন্য ৫০ থেকে ৭০ হাজার, রুটিন মেরামতের জন্য ৪০ হাজার, ১৪২টি বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটিতে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ২ লাখ টাকা, ওয়াশব্লকের জন্য ২০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়। অথচ কোনো কাজ না করেই ৩০ জুন অগ্রিম বিল ভাউচার তৈরি করে বরাদ্দকৃত সব অর্থ তুলে নেয়া হয়। বরাদ্দ দেয়া টাকার সিকি পরিমাণ কাজও করা হয়নি।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, ওই বিদ্যালয়ে অপ্রয়োজনীয় একটি পুরনো ভবনের প্লাস্টার মেরামত করছেন দুজন মিস্ত্রি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের একাধিক অভিভাবক ও শিক্ষক বলেন, মেরামতের নামে সরকারি অর্থের অপচয় করা হচ্ছে। এসব বরাদ্দ কোনো প্রয়োজন ছিল না। অনেক বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য বরাদ্দ দেয়া ২ লাখ টাকার কোনো কাজ দৃশ্যমান হয়নি।
অনেক বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ২ লাখ টাকা, স্লিপ প্রকল্পের জন্য ৫০ হাজার টাকা ও প্রাক-প্রাথমিকের জন্য ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও অনেক বিদ্যালয় কাজ শুরু করেনি। ফেনী সদর উপজেলার উত্তর লেমুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্যম চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফাজিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ কাশিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোহামদ অলীবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অনেক স্কুলে ২ লাখ টাকা ক্ষুদ্র মেরামতের কোনো কাজ দৃশ্যমান হয়নি। অথচ ওই বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতের কোনো কাজই নেই।
অপর একটি সূত্র জানায়, প্রতিটি বিদ্যালয়ের বিল উত্তোলনের ক্ষেত্রে এলজিইডি অফিসে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলীকে ৫ হাজার টাকা, উপজেলা প্রকৌশলীকে ৫ হাজার, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়। টাকা দিলেই শতভাগ কাজ করার প্রত্যয়ন ও চেক দেয়া হয়।
অবশ্য ঘুষ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ফেনী সদর উপজেলা প্রকৌশলী দীপ্ত দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ৩১ জুলাই কাজের সময় শেষ হয়েছে। এ পর্যন্ত ক্ষুদ্র মেরামতের ৫২ স্কুলের মধ্যে ১টি স্কুলের প্রত্যয়ন দিয়েছি মাত্র। ফেনী সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমা বেগম বলেন, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ক্ষুদ্র মেরামত কাজ শুরু করতে না পারায় বরাদ্দের ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা আমার হিসাবে জমা রাখা হয়েছে। চেক দিতে এখন উপজেলা প্রকৌশলীর প্রত্যয়ন প্রয়োজন নেই। তিনি ইতোমধ্যে ৫২টি স্কুলের মধ্যে প্রায় ৩৫টি স্কুলের কাজ শেষ করায় চেক দিয়েছেন। ক্ষুদ্র মেরামতের বাকি স্কুলের চেকও বিতরণ কাজ চলছে।
সোনাগাজী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওহাদির রহমান বলেন, ১০২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষুদ্র্র মেরামতের জন্য ৭২ লাখ টাকা পেয়েছে। তাদেরকে কাজ শেষ করা হবে বলে অঙ্গীকার নিয়ে চেক দিয়ে দেয়া হয়েছে।
দাগনভূঞা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইসকান্দর নুরু বলেন, ১০২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯টি বিদ্যালয় ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ৩৮ লাখ টাকা পেয়েছে। তাদেরকে কাজ শেষ করায় চেক বিতরণ শেষ। কাজ দেখার দায়িত্ব উপজেলা শিক্ষা কমিটির। বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তার কথামতো ভুয়া বিল করে টাকা তুলে সিংহভাগ তাদের দিয়ে সামান্য পরিমাণ টাকা নিয়ে ফিরতে হয়েছে। আমরা তাদের অধীনস্থ হওয়ায় প্রতিবাদ করার সাহস পাই না। পরশুরাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা নাসরিন বলেন, ৫১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ২৬ লাখ টাকা পেয়েছে। স্কুল প্রধানদের চেক দেয়া হয়েছে। উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তারা বলেন, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের ঘুস নেয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।
তারা বলেন, কোনো বিদ্যালয়ে প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ না হলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়