যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি

আগের সংবাদ

সংঘর্ষে চার জেলা রণক্ষেত্র : নারায়ণগঞ্জ মানিকগঞ্জ সিরাজগঞ্জ নেত্রকোনায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ : নিহত ১, আহত দুই শতাধিক

পরের সংবাদ

পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক উত্থানে আশাবাদী বিনিয়োগকারীরা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : এই উত্থানের মধ্যে এখনো ঝিমুচ্ছে ব্যাংক ও মিউচুয়াল ফান্ড। লেনদেনে বস্ত্র সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেও বেশিরভাগ কোম্পানির, বিশেষ করে মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর দর এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে। এই কয় দিন সূচক বেড়েছে মূলত প্রকৌশল, ওষুধ ও রসায়ন, বহুজাতিক কয়েকটি কোম্পানি, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাতের কারণে। জুলাইয়ের শেষ দিন থেকে পুঁজিবাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর এক মাস পূরণ হলো। এর মধ্যে ২১ কর্মদিবসের মধ্যে ১৫ দিনে সূচক বাড়ল প্রায় ৫০০ পয়েন্ট। এর মধ্যে শেষ ৫ দিনে টানা বাড়ল ১৭৬ পয়েন্ট। আর ১২ কর্মদিবসে বাড়ল ৩০৮ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি লেনদেন দুই কর্মদিবস পর লেনদেন আবার দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়াল, যা চলতি ২০২২ সালে ঘটেছে দ্বিতীয়বারের মতো।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আবার এক মাস বাড়লেও এক বছর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর যে দর সংশোধনের কবলে পড়ে বাজার, সেই দিনের তুলনায় সূচক এখনো প্রায় ৮০০ পয়েন্ট কম। আর গত বছরের ১০ অক্টোববর গত এক যুগের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে প্রায় ৯০০ পয়েন্ট কম। গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা ৫ কর্মদিবসের উত্থানের মধ্যে চলতি সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবসে যোগ হলো আরো ২৪ পয়েন্ট। তবে এক পর্যায়ে সূচক আরো বাড়ার আভাস দিয়েছিল। লেনদেন শেষ হওয়ার ৪৫ মিনিট আগে বেলা ১টা ৫ মিনিটে সূচক ৫৩ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হচ্ছিল এবং তা ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তখন সূচকের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ৪৮৫ পয়েন্ট, যা ছিল গত ৬ জুনের পর সর্বোচ্চ। তবে সেখান থেকে হঠাৎ দেখা দেয় বিক্রয় চাপ। ফলে শেষ পৌনে এক ঘণ্টায় দিনের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে সূচক কমে যায় ২৯ পয়েন্ট। সূচকের এই অবস্থান ছিল গত ৯ জুনের পর সর্বোচ্চ। সেদিন ডিএসইর সার্বিক সূচক ছিল ৬ হাজার ৪৮০ পয়েন্ট। উত্থানের এই দিনে বেড়েছে ১৭৯টি কোম্পানির দর, কমেছে ১৩৫টির। অন্যদিকে ৬৬টি লেনদেন হয়েছে আগের দিনের দরে, যেগুলোর সিংহভাগই হাতবদল হয়েছে ফ্লোর প্রাইসে। দুই মাস ধরে লেনদেনে বস্ত্র খাতের যে প্রাধান্য দেখা গেছে, সেটি আরো বেড়েছে। এই খাতে হাতবদল হয়েছে পৌনে ৪০০ কোটি টাকার বেশি। তবে এই খাতে বেশিরভাগ কোম্পানির দর কমেছে। তবে দর বৃদ্ধির দিক দিয়ে খাতভিত্তিক সবচেয়ে ভালো দিন গেছে সাধারণ বিমায়। এই খাতের ৪১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৩৮টির। দুটির দর কমেছে আর একটির দর ছিল আগের দিনের সমান।
পর্যালোচনায় আরো দেখা গেছে, জ্বালানি, প্রকৌশল, ওষুধ ও রসায়ন এবং ব্যাংক খাতেও বেশিরভাগ কোম্পানির দর বেড়েছে। তবে ব্যাংকে দর বৃদ্ধির হার খুবই কম। ছোট খাতগুলোর মধ্যে সিমেন্ট ৭টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৬টির। প্রধান খাতগুলোর মধ্যে বেশিরভাগের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। সূচকের এই লাফের মধ্যে বিনিয়োগকারীরা তাদের আগের লোকসানের হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত। দরপতনের কারণে বিও হিসাব থেকে যত টাকা কমে গেছে, তার কত ফিরে আসছে, তা নিয়েই চলছে আলোচনা। এই উত্থানের মধ্যে এখনো ঝিমুচ্ছে ব্যাংক ও মিউচুয়াল ফান্ড। লেনদেনে বস্ত্র সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেও বেশিরভাগ কোম্পানির, বিশেষ করে মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর দর এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে। এই কয় দিন সূচক বেড়েছে মূলত প্রকৌশল, ওষুধ ও রসায়ন, বহুজাতিক কয়েকটি কোম্পানি, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাতের কারণে। টানা ছয় দিন উত্থানের পর গত ২৪ আগস্ট সংশোধন শেষে আবার টানা ৫ দিন সূচক বাড়ল পুঁজিবাজারে। গতকাল বুধবার এক পর্যায়ে সূচক ৫৩ পয়েন্ট বেড়েও একেবারে শেষ বেলায় কমে কিছুটা।
জানা গেছে, পুঁজিবাজার নিয়ে নানা স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের যেসব দাবি ছিল, তার প্রায় সবই পূরণ হয়েছে। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মতভেদের যে বিষয়গুলো এতদিন বাজারকে অস্থির করেছে, সেটিও দৃশ্যত এখন আর নেই। এই বিষয়গুলো স্পষ্ট হওয়ার পর হাত গুটিয়ে বসে থাকা ব্যক্তি শ্রেণির ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারে ফিরতে শুরু করেছেন। বাড়ছে লেনদেন, সেই সঙ্গে বাড়ছে সূচক। গত ১২ কর্মদিবসের মধ্যে মাঝে একদিন ৩৫ পয়েন্ট কমা ছাড়া সূচক বেড়েছে প্রতি দিনই। টানা চার কর্মদিবস লেনদেন দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। মাঝে একদিন চলতি বছরের সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে, যেদিন দুই হাজার কোটি টাকার বেশি হাতবদল হয়। ২০২০ সালের মাঝামাঝি থেকে পুঁজিবাজারে যে উত্থান শুরু হয়, তা চালু থাকে পরের বছরের জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। এরপর মার্জিন ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার বেঁধে দেয়াকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে এপ্রিলের শুরু পর্যন্ত দরপতনের মধ্য দিয়ে যায়। ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউনের ঘোষণা দেয়ার পর লেনদেন স্থগিত হওয়ার আতঙ্কে সংশোধনের মধ্যে শুরু হয় ধস। তবে যখন বিএসইসি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায় লেনদেন স্থগিত হবে না, তখন শুরু হয় উত্থান। সেটি চালু থাকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে ২০১০ সালের মহাধসের পর প্রথমবারের মতো লেনদেন ৩ হাজার কোটি টাকার কাছে যাওয়ার পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স ৭ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে যায়। ৮ হাজারের পথে যাত্রা শুরু করার যে স্বপ্ন, সেটি হোঁচট খায় ১২ সেপ্টেম্বর। ক্রমেই বাড়তে থাকা সূচক সেদিন এক পর্যায়ে ৭৮ পয়েন্ট বেড়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ৫৬ পয়েন্ট পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় লেনদেন। সূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে সর্বনি¤œ অবস্থানের মধ্যে ১২৪ পয়েন্টের পার্থক্যই সেদির দর সংশোধনের ইঙ্গিত দিয়ে রাখে। তবে এই সংশোধনে সিংহভাগ শেয়ার দর হারাতে থাকলেও সূচক ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়তে থাকে বড় মূলধনী বিএটিবিসি, লাফার্জ হোলসিম, বেক্সিমকো লিমিটেডসহ আরো কিছু কোম্পানির দর বাড়তে থাকার কারণে। এর মধ্যে অক্টোবরে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে মতভেদের বিষয়টি সামনে আসে। এই বিষয়টি বিনিয়োগকারীমের মনে এত বেশি দাগ কাটে যে, পুঁজিবাজারে লেনদেন ক্রমেই কমতে থাকে, সেই সঙ্গে কমতে থাকে মূল্য সূচক। এভাবেই চলে যায় ২০২১ সাল।
নতুন বছরের শুরুতে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিলেও শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর পুঁজিবাজার ঘিরে নানা গুজব, গুঞ্জনে আবার শুরু হয় দরপতন। এর মধ্যে ২৪ অক্টোবর ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর অর্থনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তার প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারে। শুরু হয় ধস। এক পর্যায়ে গত ২৮ জুলাই সূচক নেমে আসে ৬ হাজার পয়েন্টে। সেদিন বিকেলে বিএসইসি সব শেয়ারের সর্বনি¤œ দর বা ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দিলে পরদিন থেকে শুরু হয় উত্থান। উত্থান শুরুর সপ্তাহের টানা ৫ কর্মদিবসে ৩০৩ পয়েন্ট সূচক বাড়ার মধ্যে আরো একটি সুখবর আসে।
পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিট গণনাপদ্ধতি শেয়ারের ক্রয়মূল্যে করতে দীর্ঘদিনের যে দাবি ছিল, তা পূরণ হয়ে যায় ওই সপ্তাহে। বাংলাদেশ ব্যাংক জারি করে সার্কুলারও।
তবে পরের সপ্তাহে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়া নিয়ে আবার গুজবের কবলে পড়ে পুঁজিবাজার। ওই সপ্তাহে আবার টানা ৪ কর্মদিবসে ১৩৭ পয়েন্ট দরপতন নিয়ে তৈরি হয় বিস্ময়। তবে ১১ আগস্ট বিএসইসির পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয় যে, ফ্লোর প্রাইস উঠে যাচ্ছে না। যারা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর পরের কর্মদিবস ১৪ আগস্ট থেকে শুরু হয় উত্থানের নতুন সময়। টাকা ৬ দিনে ১৬৭ পয়েন্ট বাড়ার পর কেবল ২৪ আগস্ট এক দিন সংশোধন হয়। পরের ৫ দিনে আবার টানা বাড়ল সূচক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়