যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি

আগের সংবাদ

সংঘর্ষে চার জেলা রণক্ষেত্র : নারায়ণগঞ্জ মানিকগঞ্জ সিরাজগঞ্জ নেত্রকোনায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ : নিহত ১, আহত দুই শতাধিক

পরের সংবাদ

ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের রাজনীতি : এখনো ফুরায়নি বিএনপির গুরুত্ব > অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতির পরিবর্তন ও পরিমার্জন করতে হবে > ধর্মভিত্তিক দলের তকমা থেকে বের হতে চাইছে বিএনপি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : ‘সৃষ্টিকর্তার ওপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র’- এই চারটি মূলনীতির ভিত্তিতে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি নামক রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ৪৪ বছর পর বহু ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে বিএনপি আজো দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি। ২০০৬ সালে ক্ষমতা হারানোর পর দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে দলটি নানা সংকটে ধুঁকছে। তবুও দলের ঐক্য ও নেতাকর্মীদের মনোবল এখনো পোক্ত রয়েছে। ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদরে রাজনীতিতে বিএনপির গুরুত্ব এখনো কমেনি। ধর্মভিত্তিক অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বিএনপি জোটের সঙ্গে রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, নেতৃত্বের সংকট, সময়কে অনুধাবনের অক্ষমতা, একগুঁয়েমি, বিভিন্ন পর্যায়ে যোগ্য ও দক্ষ নেতা নির্বাচনে ব্যর্থতার কারণেই দীর্ঘ ১৪ বছর দলটি ক্ষমতার বাইরে।

ফলে সরকার, সংসদ, রাজপথ- কোথাও নেই তারা। বিপুল জনসমর্থন থাকার পরও সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে কৌশলে প্রতিপক্ষের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছে না বিএনপি।
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিএনপিকে ঘুরে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতাকর্মীদের ক্ষমতায়ন করে দলটির অভ্যন্তরে অধিকতর গণতান্ত্রিকভাব আনতে হবে। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতির পরিবর্তন, পরিমার্জন ও পরিশোধন করতে হবে। অভ্যন্তরীণ নীতি বলতে দলীয় কর্মসূচি প্রণয়ন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কে মাত্রা কী হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। এর পাশাপাশি বিএনপির নিজস্ব বুদ্ধিবৃত্তিক কাঠামো দাঁড় করাতে হবে।
রাজনীতে ধর্মের ব্যবহার করে সুবিধাভোগী : রাজনীতিতে ইসলাম ধর্ম তথা ধর্ম বিশ্বাসী দল হিসেবে বরাবরই সাধারণ জনগণের সহমর্মিতা অর্জন করে যাচ্ছে বিএনপি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অনেক কিছুই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোশকতায় ফিরিয়ে আনা হয়। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে জামায়াতে ইসলামীর ওপর থেকেও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। পাকিস্তানে লুকিয়ে থাকা জামায়াত নেতারা একে একে ফিরেও আসে। জামায়াতে ইসলামীর ‘পুনর্জন্ম’ না হলে বাংলাদেশে ধর্মের রাজনীতি এভাবে বিকশিত হতো না। পরবর্তীতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে জামায়াতকে রাজনৈতিকভাবে স্বীকৃতিও দেয় বিএনপি। এরপরই ধর্মভিত্তিক রাজনীতির লেবাসে দেশে ব্যাপকভাবে বিকাশ ঘটে জঙ্গিবাদের। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে জামায়াতের নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের দায়ে দেশি এবং আন্তর্জাতিক মহলের চাপে ধর্মভিত্তিক দলের তকমা থেকে বের হতে চাইছে বিএনপি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতিটি দেশেই রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের একটা গভীর যোগসূত্র রয়েছে। ধর্মে রাজনীতির বলয় আছে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি এই দুই দলের কেউই ধর্মের প্রশ্নে হস্তক্ষেপ করে না। সবাই চায় ধর্মের বিষয়ে সংঘাতে না জড়াতে। তবে বিএনপির উপর ধর্মের দায় ঠেলে দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও মিডিয়া।
তিনি বলেন, ইসলামের সঙ্গে রাষ্ট্রকে যোগ করা এবং রাষ্ট্রকে ইসলামে সঙ্গে যোগ করা দুইটা ভিন্ন জিনিস। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্টের দেশে ধর্মের সঙ্গে রাষ্ট্রকে যোগ করে। তবে বাংলাদেশে ইসলামপন্থি দলগুলো ছাড়া কেউ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করে না। দ্বিতীয়ত, মাঝে মাঝে যেসব ধর্মীয় বিষয়গুলো আসে সেই সব ইস্যুগুলোতে তারা তাদের চিন্তা ভাবনা মোতাবেক প্রতিক্রিয়া দেয়। আসলে এই দেশে অনেকে মনে করে ইসলামের নাম নিলেই সাম্প্রদায়িক হয়ে যাবে। বাস্তবে এমন না। জামায়াত কিংবা অন্যান্য ইসলামী দল বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত রয়েছে এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ বলেন, রাজনীতিতে অনেক রকম মিত্র থাকতেই পারে। বিএনপি না হয় তাদের একটি ব্রান্ড আছে যে তারা ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তাই বলে তো মন্দিরের ওপরে হামলা বন্ধ হয়নি। তাহলে কোনটাকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বলব?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিএনপি এখানো ধর্মের সুবিধাভোগী। কারণ, সরকারের নানা চাপের মুখেও বিএনপি যে এখানো টিকে আছে সেটার কারন এই নয় যে, দলটির কর্মীরা দলের জন্য নিবেদিত প্রান। কিংবা বিএনপি সাংগঠনিকভাবে খুব মজবুদ। বরং বিএনপি যে বার্তাটা সবসময় বহন করেন সেটা হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মীয় অনুভূতিকে তারা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। একই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে ধারণ করেই বিএনপি সুবিধা নেয়। এর বাইরে যে বাস্তবতা তা হলো সরকারি দলের যে ডাউন সাইটগুলো থাকে সেগুলো বিএনপির দিকে যায়। তবে আগামী নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার ভোটের মাঠে বিএনপি কতটা কাজে লাগাতে পারবে তা নির্ভর করবে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের পরিণতি কি হবে। তবে মনে হয় না জামায়াত বিএনপি আলাদা হবে। কারণ, আওয়ামী লীগের মতো শক্তিশালী সংগঠনের প্রচণ্ডচাপের মুখে বিএনপি এবং জামায়াতের টিকে থাকার কৌশলই হবে নিজেরা কাছাকাছি থাকা।
জাতীয়তাবাদের মূল চেতনা থেকে সরে গেছে বিএনপি! বিশ্লেষকরা বলছেন, জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক মূল চেতনা থেকে সরে আসাটাই বিএনপির সংকটের মূল কারণ। তারা বলছেন, জিয়াউর রহমান দলে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন এখনকার বিএনপি তা ভুলতে বসেছে। একের পর এক নীতিগত ভুল সিদ্ধান্তের কারণে দলটি রাজনীতির মাঠে এখন শক্তিহীন।
বিশ্লেষকদের মতে, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে বিএনপি তার মতো জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক মনা একজন নেতাও তৈরি করতে পারেনি, যিনি খালেদা জিয়ার অবর্তমানে গোড়ালি শক্ত করে রাজনীতির মাঠে বিএনপিকে সক্রিয়ভাবে টিকিয়ে রাখতে পারে। যদিও দলটির বর্তমান নেতৃত্বে যারা আছেন তারা এ কথা মানতে নারাজ।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি কঠিন দুঃসময় অতিক্রম করছে। তবুও জিয়াউর রহমানের নীতি এবং আদর্শ থেকে এক পাও নড়েনি। জিয়াউর রহমানের তৈরি করা গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে বিএনপি লড়াই করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সমালোচনার সুযোগ নেই। এখনকার বিএনপি অন্য সময়ের তুলনায় বেশি শক্তিশালী। এখন নেতাকর্মীরা জেগে উঠছে। গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি সংগ্রাম করছে। তিনি বলেন, আমাদের শপথ হচ্ছে, গণতন্ত্রের নেত্রী খালেদা জিয়াকে স্থায়ীভাবে কারামুক্ত করা। বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছে এবং দলে কোনো নেতৃত্বের সংকট নেই।
ভারতবিদ্বেষ নীতি থেকে সরে এসেছে বিএনপি : বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান তার শাসনামলের শেষদিকে সার্ক প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখে আঞ্চলিক সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করলেও দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আমল থেকে বিএনপি ভারতবিদ্বেষ রাজনীতিতে সরব হয়। ভারতবিদ্বেষের নামে সৃষ্টি হয় হিন্দুবিদ্বেষও। কিন্তু ভোটের হিসাব কষে পলিসিগত কারণে ভারতবিরোধী অবস্থান থেকে বর্তমানে সরে এসেছে দলটি। এ বিষয়ে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মতো ভারতও এ দেশে অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। একটি ভালো নির্বাচনের জন্য কী প্রয়োজন, সে সম্পর্কে বিএনপির চাওয়াগুলো তাদের জানানো হয়েছে।
রাজনৈতিক চর্চায় জিয়াউর রহমানকে ধরে রাখতে পারেনি : আওয়ামী লীগ যেভাবে বঙ্গবন্ধুকে সামনে রেখে রাজনীতি করছে, বিএনপি পারেনি জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও কর্মসূচিকে সামনে রাখতে। এমনকি তরুণ প্রজন্মের কাছেও পারেনি তাকে সেভাবে পরিচয় করাতে। বিএনপিতে জিয়াউর রহমানের সময়কালের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা হাতেগোনা দুয়েকজন নেতা থাকলেও তারা কোণঠাসা। এসব নেতাদের মতে- জিয়াউর রহমানের আদর্শ, লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যকে ধারণ করে দল ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর কর্মসূচি নেয়ার কোনো চেষ্টাই করেনি। ক্ষমতাসীন দলের রোষানলে পড়ে দলটির অনেক নেতার মধ্যে ভেতরে ভেতরে আপসকামী হয়ে উঠছে।
ভিশন-২০৩০ আলোকে কৌশল নির্ধারনে এখনো পিছিয়ে : ২০১৭ সালে উন্নয়নের রোডম্যাপ হিসেবে ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কথা ছিল রোডম্যাপ অনুযায়ী উন্নয়ন এবং সরকার পরিচালনার সুস্পষ্ট কৌশল নির্ধারণ করে তা পুস্তক আকারে জনগণের কাছে পৌঁছাবে। কিন্তু গত ৫ বছরেও এই কাজে হাত দিতে পারেননি দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ফলে এই ভিশন : ২০৩০ নিয়ে ক্ষমতাসীর মহল কটাক্ষ করে বলে- বিএনপির এই রোডম্যাপ ‘অস্পষ্ট এবং লেপা-মোছা’ প্রকৃতির। যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। এ বিষয়ে দলটির সিনিয়র নেতাদের বক্তব্য ভিশন-২০৩০ নিয়ে কাজ চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দেরি না করে এই মূহর্তেই ভিশন-২০৩০ আলোকে আগামীর কর্ম পরিকল্পনার ঠিক করার তাগিদ দিয়েছেন।
বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সমানে রেখে এই মূহর্তে দলটির কিছু করণীয় উল্লেখ করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, বিএনপিকে জিয়াউর রহমানের আদর্শে অটল থাকতে হবে। দেশের রাজনীতিতে দলটির গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে হবে। গনতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ দল হিসেবে জনগণের মধ্যে যে সচেতনা সৃষ্টি করেছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। সর্বোপরি খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ এর আলোকে ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। এই কাজে আরো দেরি করাটা ভুল হবে। পাশাপাশি বিএনপিকে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যেতে হবে।
খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বেই ভরসা : জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে ভয়াবহ দুর্দশার মধ্যে পড়েছিল বিএনপি। সাংগঠনিক অবস্থা বলতে ছিল না কিছুই। অনেক নেতা দল ছেড়ে তখন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দলে যোগ দেন। এমন অবস্থায় গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে বিএনপিকে টেনে তোলেন খালেদা জিয়া। জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও কর্মসূচি সামনে নিয়ে তিনি রাজপথে হাঁটতে থাকেন, মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যান। মানুষের মন জয় করে আপসহীন নেত্রী হয়ে ওঠেন। বর্তমানে তিনি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় নিভৃতে দিন কাটাচ্ছেন। টানা চার বছরের কারাবন্দি জীবনে দল তার মুক্তির জন্য রাজপথে শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। তার অবর্তমানে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যনের দায়িত্ব পালন করলেও নেতাকর্মীরা তাতে সন্তুষ্ট নন। তারেক রহমানের নেতৃত্বে নিয়ে সিনিয়র নেতারা মনে মনে ফুঁসলেও প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস নেই কারোরই। অনেক নেতা মাঝে মাঝে মুখ ফুসকে বলে ফেলেন এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিএনপিতে এখন জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদী রাজনীতি হারিয়ে গেছে। এখন বিদেশ থেকে তারেক রহমান নেতাকর্মীদের ওপরে সব চাপিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান এই নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি উদার গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই তারেক রহমান নেতৃত্ব ছাড়তে না পারলে বিএনপির ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে।
বিএনপি সময় অসময় গ্রন্থের লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপি জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর এবং এরশাদের সময়েও সংকটে পড়েছে। ওয়ান ইলেভেনের সময়েও একটা বড় সংকট তাদের গেছে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি জটিল। মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, যেহেতু এই দলগুলো এক ব্যক্তি কেন্দ্রিক। বিএনপির মতো দলে সেকেন্ড ম্যান বলে কিছু নেই। যাকে তারা সেকেন্ড ম্যান বলছেন তিনিও তো দৃশ্যমান না। সুতরাং এটা আরেক ধরনের সংকট। এবং এই সংকটটা আরো বড় মনে হবে যেহেতু নির্বাচনটা কাছে। সুতরাং নির্বাচনে এবার যদি বিএনপি খুব প্রস্তুতি নিযয়ে মোকাবেলা করতে না পারে তাহলে তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়তে হবে। তিনি মনে করেন, যে কোনো কিছু ঘটে যেতে পারে। এইটা সামাল দেয়ার জন্য যে ব্যক্তিত্ব, ক্যারিশমা এবং নেতৃত্ব দরকার সেটা কিন্তু দলের মধ্যে খালেদা জিয়া ছাড়া আর কারো নাই। দলে যদি নেতৃত্ব না থাকে, দলের পাঁচজন নেতা যদি পাঁচ রকমের কথা বলে, যেটা ইতোমধ্যে আমরা আলামত দেখছি তাহলে তো এই দলটা নির্বাচন করার মতো সামর্থ্য অর্জন করবে না।
প্রসঙ্গত, ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমানকে হত্যার পর সেনাবাহিনীতে চলছিল অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের পালা। সেই পটভূমিতে ৭ নভেম্বর ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন জিয়াউর রহমান। প্রথমে তিনি ১৯ দফা অর্থনৈতিক কর্মসূচির ভিত্তিতে জাগদল নামে রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করেন। ১৯৭৮ তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিভিন্ন রাজনৈতিক পথমতের অনুসারীদের এক প্লাটফর্মে এনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়