যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি

আগের সংবাদ

সংঘর্ষে চার জেলা রণক্ষেত্র : নারায়ণগঞ্জ মানিকগঞ্জ সিরাজগঞ্জ নেত্রকোনায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ : নিহত ১, আহত দুই শতাধিক

পরের সংবাদ

দেশের বিভিন্ন স্থানে আ.লীগ বিএনপি সংঘর্ষ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : কুমিল্লার নাঙ্গলকোট, মেঘনায়, বগুড়ার নন্দীগ্রাম, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ও নেত্রকোনার মদনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় মোটরসাইকেল, দোকানপাট ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ, পথচারীসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এছাড়া চৌমুহনী ও নাঙ্গলকোটে ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, লোডশেডিং, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গতকাল বুধবার বিএনপি দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশের আয়োজন করে। এ সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
কুমিল্লা : কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, বিএনপি অফিসসহ দোকানপাট ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৬ পুলিশ ও পথচারীসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এছাড়া জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজী এলাকায় বিএনপির একটি সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। গতকাল দিনভর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে ঘিরে এসব ঘটনা ঘটে।
জ্বালানি তেল, পরিবহন ভাড়াসহ সব দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধি এবং পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা নূরে আলম, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহিম হত্যার প্রতিবাদে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার বিকালে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজী এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে দলটি। পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগও একই সময়ে ওই এলাকায় সমাবেশের ডাক দিলে স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। এতে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বিএনপি সেখানে সমাবেশ করতে পারেনি। এদিকে একই দিন বেলা ১১টার দিকে নাঙ্গলকোট উপজেলা সদরে উপজেলা বিএনপি পৃথক একটি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং প্রধান বক্তা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও সমাবেশ শুরুর পূর্ব মুহূর্তে উপজেলা সদরে বিএনপির সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় দুইপক্ষে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। খবর পেয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আবদুর রহীমের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিএনপি নেতা মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাধায় আমরা সমাবেশস্থলে যেতে পারিনি। দেশে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ সাদেক হোসেন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পৌর এলাকায় অবস্থান নিই। বিএনপিকে বিক্ষোভের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না। তিনি এ হামলা-ভাঙচুরের জন্য বিএনপিকে দায়ী করেন। বিকালে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম তানভীর আহমেদ জানান, পুলিশের একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া পুলিশের কয়েকজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে কনস্টেবল জাহিদ হোসেনকে গুরুতর আহত অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুভাশিস ঘোষ বলেন, দুটি দল একই এলাকায় সমাবেশ আহ্বান করায় শান্তিভঙ্গের আশঙ্কায় বুধবার সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
মেঘনা (কুমিল্লা) : কুমিল্লা মেঘনায় পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল সকাল ১০টায় এ বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি। একই সময়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ মিয়া রতন শিকদারের নেতৃত্বে সব অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ভোর থেকে উপজেলার প্রধান প্রধান সড়কে অবস্থান নেয়। এ সময়ে উপজেলার রামপুর বাজারসহ কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি। রামপুর বাজারে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল্লাহ সরকারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সালাউদ্দিন সরকারের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ মিছিলে প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান সরকার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে মেঘনা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ছমিউদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণভাবে পুরো উপজেলায় অবস্থান নিলেও বিএনপির তেমন তৎপরতা চোখে পড়েনি। সব মিলিয়ে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
নোয়াখালী : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ কয়েক রাউন্ড শর্টগান ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে উভয়পক্ষকে ছাত্রভঙ্গ করে দেয়। ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির ৭ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে একলাশপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে বিএনপি-আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে ঘিরে চৌমুহনী পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা চলায় নরোত্তমপুর ইউনিয়নের পাটোয়ারী হাপা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে বিএনপি। দুই দলের এ পাল্টাপাল্টি সভা সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা এবং জনসাধারণের নিরাপত্তার স্বার্থে চৌমুহনী পৌর এলাকায় বুধবার ভোর ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি বলেন, একলাশপুর থেকে বিএনপির ৬-৭ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নন্দীগ্রাম (বগুড়া) : বগুড়ার নন্দীগ্রামে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সংঘর্ষে ৩ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ৩-৪টি মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে স্থানীয় প্রশাসন। গতকাল বুধবার দুপুরে নন্দীগ্রাম মাজগ্রাম এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াছিন আলী ও বুড়ইল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন মন্টু আহত হন। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কলেজ মাঠ ও বঙ্গবন্ধু চত্বরে অবস্থান নেয়। এদিকে ছাত্রলীগ নেতা আবু রায়হানের ওপর হামলার প্রতিবাদে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তুহিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শুভ আহমেদের সঞ্চালনায় এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তুহিন আহমেদ বলেন, পূর্বঘোষিত জাতীয় শ্রমিক লীগের শোকসভায় আসার পথে ছাত্রলীগের এক নেতাকে কুপিয়ে জখম করেছে বিএনপি নেতারা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলাউদ্দিন সরকার ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, দুই দলের কর্মসূচির কারণে সকাল থেকেই পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। দুপুরের পর উত্তেজনা বাড়ায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মদন (নেত্রকোনা) : নেত্রকোনার মদনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফেরদৌস আলমসহ দুই পক্ষের অন্তত ১৭ জন আহত হয়েছেন। বুধবার উপজেলার চানগাঁও ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামের ঈদগাহ মাঠে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সংঘর্ষে মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফেরদৌস আলম, এ এস আই খোরশেদ আলম, পুলিশ সদস্য আজিজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের কর্মী শরিফুল ইসলাম, রিপন, বুলবুল আহমেদ, রোকন মিয়া, আনোয়ার হোসেন, মোশারফ, সাগরকে মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এর সঙ্গে বিএনপির আহত সাতজন নেতাকর্মীদের স্থানীয় বিভিন্ন চিকিৎসকের নিকট চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সাধারাণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম আকন্দ জানান, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন কালে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। মদন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার খান এখলাছ জানান, আমাদের নেতাকর্মীদের দেখে বিএনপির নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলে তাদের ওপর ইট ছোড়া হয়। মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফেরদৌস আলম জানান, দুই পক্ষের উত্তেজনার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যেতেই বিএনপির নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর ইট-পাটকেল ছোড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়