যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি

আগের সংবাদ

সংঘর্ষে চার জেলা রণক্ষেত্র : নারায়ণগঞ্জ মানিকগঞ্জ সিরাজগঞ্জ নেত্রকোনায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ : নিহত ১, আহত দুই শতাধিক

পরের সংবাদ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ফের কারাগারে ঝুমন দাস

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি ও দিরাই প্রতিনিধি (সুনামগঞ্জ) : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘বিতর্কিত’ পোস্ট দেয়ার অভিযোগে সুনামগঞ্জের শাল্লা থানা পুলিশের দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আবারো গ্রেপ্তার হয়েছেন ঝুমন দাস। সাম্প্রতিক একটি পোস্টকে ঘিরে গত মঙ্গলবার সকালে শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের বাড়ি থেকে ঝুমন দাসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওইদিন রাতে পুলিশ বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গতকাল বুধবার দুপুরে সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লা জোন জুডিশিয়াল

ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ঝুমনকে হাজির করার পর বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। কোর্ট ইন্সপেক্টর বোরহান উদ্দিন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ঝুমন দাসের ফেসবুক আইডিতে ধর্মকে ইঙ্গিত করে ‘উসকানিমূলক’ পোস্ট দেয়া হয়। উসকানিমূলক এই পোস্ট দেয়ার পর তিন দিন এলাকায় পুলিশ মোতায়েন ছিল। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে তাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয় তার বিরুদ্ধে। শাল্লা থানার এসআই সুমননুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে জানান ওসি।
ঝুমনের ভাই নুপুর দাস বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক উসকানি’ দেয়ার অভিযোগে পুলিশ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ঝুমনকে থানায় নিয়ে যায়। এর আগে দুদিন ধরে তাকে ফলো করছিল পুলিশ। তার মোবাইল ফোন পুলিশ নিয়ে গেছে এবং কিছু পোস্ট মুছে দিয়েছে। নূপুর দাস জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঝুমনের স্ত্রী থানায় গেলে পুলিশ তাকে জানায়, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঝুমনকে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু মধ্যরাতে তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তিনি আরো জানান, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবি নিজের ফেসবুক আইডি থেকে শেয়ার করেছিলেন ঝুমন। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়।

ঝুমনের বিরুদ্ধে বারবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ অভিহিত করে তার স্ত্রী সুইটি গণমাধ্যমে বলেন, সা¤প্রদায়িকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে করা মামলাটি আপসের জন্য তাদের বারবার হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এখন এই অবস্থার মধ্যে আবারো আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আমাদের পরিবারকে হয়রানি করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে একটি ধর্মীয় সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম। এতে হেফাজত নেতা জুনায়েদ বাবুনগরী ও মামুনুল হক বক্তব্য রাখেন। ওই সমাবেশের পরদিন ১৬ মার্চ মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন শাল্লার নোয়াগাঁওয়ের ঝুমন দাস। স্ট্যাটাসে তিনি মামুনুলের বিরুদ্ধে ‘সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি নষ্টের’ অভিযোগ আনেন। তার ওই সমালোচনাকে ‘ইসলামের সমালোচনা’ বলে এলাকায় প্রচার চালাতে থাকেন মামুনুলের অনুসারীরা। এতে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা ১৬ মার্চ রাতে ঝুমন দাসকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পরদিন কয়েক হাজার লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে হামলা চালায় নোয়াগাঁও গ্রামে। তারা ভাঙচুর ও লুটপাট করে ঝুমন দাসের বাড়িসহ হাওড়পাড়ের হিন্দু গ্রামটির প্রায় ৯০টি বাড়িঘর ও মন্দির। ঝুমনের স্ত্রী সুইটিকেও পিটিয়ে আহত করা হয়। সে সময় পুলিশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে ঝুমনকে কারাগারে পাঠায়। পরে জামিনে মুক্ত হন ঝুমন। এছাড়া শাল্লায় হামলার ঘটনায় শাল্লা থানার এসআই আব্দুল করিম, স্থানীয় হাবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল ও ঝুমন দাসের মা নিভা রানী দাস তিনটি মামলা করেন। তিন মামলায় প্রায় ৩ হাজার আসামি। পুলিশ নানা সময়ে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। তারা সবাই এখন জামিনে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়