যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি

আগের সংবাদ

সংঘর্ষে চার জেলা রণক্ষেত্র : নারায়ণগঞ্জ মানিকগঞ্জ সিরাজগঞ্জ নেত্রকোনায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ : নিহত ১, আহত দুই শতাধিক

পরের সংবাদ

ছাত্রলীগের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী : টাকার পাহাড় গড়ে লাভ নেই

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : টাকার পেছনে না ছুটতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, টাকার পাহাড় গড়ে কোনো লাভ নেই। এক দিন খালি হাতেই চলে যেতে হবে। অর্থ-সম্পদের দিকে না দৌড়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে। জাতির পিতাকে আদর্শ হিসেবে নিতে হবে। যিনি সংগঠন গোছানোর জন্য মন্ত্রিত্ব পর্যন্ত ত্যাগ করেছেন। সেটা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্মরণে আয়োজিত স্মরণসভায় এসব কথা বলেন তিনি।
ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীব চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মেহেদি হাসান ও সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ। এ

সময় প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের দুটি প্রকাশনা ‘মাতৃভূমি’ এবং ‘জয়বাংলার’ মোড়ক উন্মোচন করেন। সভার শুরুতে জাতির পিতা ও বঙ্গমাতাসহ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের শহীদ এবং ৫২’র ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে সবাই দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে ত্যাগ স্বীকার করে এগোতে পারলে সঠিক নেতা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা যায়। কিন্তু গড্ডলিকা প্রবাহে অর্থ সম্পদের পেছনে ছুটলে ওই অর্থ সম্পদেই ভেসে যেতে হয়। তাতে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতাও থাকে না, দেশ এবং মানুষকেও কিছু দেয়া যায় না। ধনসম্পদ, টাকাপয়সা কাজে লাগে না। করোনার সময় অনেক ধনী মানুষের টাকার পাহাড়ও কিন্তু কাজে লাগেনি। মাথায় রাখতে হবে এটাই বাস্তবতা, এটাই সত্য।
ছাত্রলীগকে সতর্ক করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, গ্রুপ বাড়ানোর জন্য আলতু ফালতু লোক ঢোকানো যাবে না। তাতে নিজেদের, দলের ও দেশের বদনাম হয়। ছাত্রলীগ জাতির পিতার হাতে গড়া। আমি জানি ছাত্রলীগ সম্পর্কে অনেক কথা লেখা হয়। এত বড় একটা সংগঠন আর আমরা ক্ষমতায় আছি বলে অনেকেই ভেতরে ঢুকে যায় এবং নিজেরাই গোলমাল করে। বদনামটা পড়ে ছাত্রলীগের ওপর। আমাদের পেছনেতো লোক লেগেই আছে, লেগেই থাকবে। ছাত্রদল যত অপকর্ম করে গেছে, সেটা নিয়ে কথা নেই। কিন্তু ছাত্রলীগের একটু হলেই বড় নিউজ। নিজেদের ঠিক থাকতে হবে।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পড়াশোনার উপদেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার লেখা আমার দেখা নয় চীন, কারাগারের রোজনামচা, অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে অনেক কিছু জানা যাবে। সিক্রেট ডকুমেন্ট সবাইকে পড়ার অনুরোধ করছি। সেটা পড়ে অনেক কিছু শেখার আছে, জানার আছে। রাজনীতির অনেক জ্ঞান অর্জন করা যাবে।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নশীল থেকে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হবে। দেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। তাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বলব, যার যার এলাকা খুঁজে দেখতে হবে। একটি মানুষও যদি গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকে সঙ্গে সঙ্গে সে খবর আমাকে দিতে হবে। আমরা তাদের ঘর তৈরি করে দেব। জাতির পিতার বাংলাদেশে কোনো মানুষ গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের খুনিদেরকেই শুধু এদেশে পুরস্কৃত করা হয়নি, ৭ মার্চের ভাষণকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। একই সঙ্গে স্বাধীনতার পুরো ইতিহাসটা মুছে ফেলে দিয়ে আবিষ্কার হলো- এক মেজর হুইসেল দিলেন আর দেশ স্বাধীন হয়ে গেল। আর এজন্য সংগ্রামের যে পথ ও ইতিহাস সেটা তাদের জানা নেই। তাই আমি বলব, ছাত্ররাজনীতি করতে হলে ইতিহাস জানতে হবে। ইতিহাস না জানলে শিক্ষা নেয়া যায় না। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হয়। আগামী দিনে চলার পথ তৈরি করতে হয়। যদিও ইতিহাসের একই রকম পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, তবে সময়ের বিবর্তনে সেটা আসবে। আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি বলেই আমরা সেটা জানি। জাতির পিতার আদর্শ বুকে নিয়ে তার হাতে তৈরি করা সংগঠন ছাত্রলীগ বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্বভার নিয়ে সমগ্র বাংলাদেশে ঘুরে ঘুরে সংগঠনকে শক্তিশালী করার প্রসঙ্গ স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের পর আমরা ক্ষমতায় এসেছি। প্রথম একটা টার্ম গেছে। দ্বিতীয়বার এসে এখন এই থার্ড টার্ম পর্যন্ত অন্তত বাংলাদেশের উন্নতি আমরা করতে পেরেছি। আজ বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছি। যেটা জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের অনেক দূর যেতে হবে।
ডেল্টাপ্ল্যানের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ কেমন হবে? ২১০০ সালের বদ্বীপ বা ডেল্টা প্ল্যান- সেটাও তৈরি করে দিয়েছি। যারা আগামীতে আসবে, তারা এটা অনুসরণ করলে এই বাংলাদেশের অভিযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে তো ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি, বোমাবাজি। আমরা সেখান থেকে অন্তত ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি। শিক্ষার বিভিন্ন পরিবর্তন নিয়ে এসে আধুনিক শিক্ষা যাতে হয়, সেদিকে অনেক দূর এগিয়ে গেছি। খালেদা জিয়া বললেন যে, ছাত্রদল দিয়েই নাকি আওয়ামী লীগকে সিদা (সোজা) করে দেবে। অর্থাৎ তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেবে। এটা তো জিয়াউর রহমান শুরু করেছিল। আমি ছাত্রলীগের হাতে কাগজ-কলম-বই তুলে দিলাম যে, আগে লেখাপড়া শিখতে হবে। কারণ শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতিকে কেউ সেবা দিতে পারে না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ও শান্তি যাতে বজায় থাকে সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়ে সংগঠনটির সাবেক এই নেত্রী বলেন, করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা। উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। তাই প্রত্যেককেই সাশ্রয়ী হতে হবে। উন্নত দেশগুলোয় পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। তাই আমাদের আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। আমরা আগে থেকেই যদি সাবধানে থাকি, তাহলে অবস্থা সামাল দিতে পারব। বিশ্বে কিন্তু আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। পয়সা দিয়েও খাবার কেনা যাবে না। সেক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের খাবার নিজেদের উৎপাদন করতে হবে। আমাদের ছাত্রলীগ যেমন ধান কাটায় সাহায্য করেছে, দরকার হলে ধান রোপণেও সাহায্য করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়