ছাত্র অধিকার পরিষদ : গুমের শিকার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে

আগের সংবাদ

রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট

পরের সংবাদ

যানজটে কর্মঘণ্টা নষ্ট : অর্থনৈতিক বিপর্যয়

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কর্মস্থলে অবস্থানরত মহামূল্যবান মুহূর্তকে কর্মঘণ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। বর্তমান বাংলাদেশের সেরা সমস্যাগুলোর মধ্যে কর্মঘণ্টা অন্যতম। আর কর্মঘণ্টা নষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ হলো যানজট। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে অসহনীয় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজধানী মহানগর-খ্যাত ঢাকায় ৭৩টি মোড়ে আটকে যাচ্ছে যানবাহন। এতে প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। আর জ্বালানি পুড়ছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, চরম যানজটের কারণে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে ৯০ লাখের অধিক কর্মঘণ্টা। এই সর্বনাশা যানজটের কারণে প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে ১৫২ কোটি ৫৬ লাখের অধিক টাকা। এই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে প্রতি বছর সবমিলিয়ে ১ হাজার ৪০০ কোটি কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এতে প্রতি বছর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ১৪০ কোটি টাকা। কর্মঘণ্টার নষ্টের পেছনে রয়েছে যানজট, যা দেশবাসীর জন্য বড় শঙ্কার কারণ।
নানামুখী সমস্যার কারণে মানুষের স্রোত আর অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি রাজধানীতে যানজটের সৃষ্টি করছে। রাজধানীবাসীর কাছে যানজট একটি মূর্তিমান আতঙ্ক। প্রতিদিনের অসহ্য যানজটের কারণে স্থবির হয়ে পড়ে মানুষের জীবন ও জীবিকা। হুমকিতে পড়ে বেঁচে থাকার চিন্তা। তেমনিভাবে চাকরি, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা কিংবা অবরোধ, হরতালের দিনে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি সড়কে দেখা যায় তীব্র যানজট। জীবনাচরণ হয়ে পড়ে স্থবির, মানুষ হয়ে ওঠে নাকাল।
ঢাকাকে বিবেচনা করা হয় মেগাসিটি বা অতিমহানগরী হিসেবে। বাংলাদেশের মেগাসিটি খ্যাত এই শহরে প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার বসবাস করে। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ শতাংশ এই শহরে বসবাস করে বলে ধারণা করা হয়। জনসংখ্যার ঘনত্বের বিচারে ঢাকা শহর পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর। ৩০৬ বর্গকিলোমিটারের এই শহরের প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৩ হাজারের অধিক মানুষ বসবাস করে থাকে। পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকায় জনসংখ্যার অনুপাতে রাস্তা বাড়েনি, বরং বেড়েছে যানবাহন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব অনুযায়ী ঢাকা শহরে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ ৭৩ হাজার ১৬০টি। তার মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৫২ হাজার ৬৭৪টি। যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা প্রায় ৩৯ হাজার ৭৮২টি। এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ঢাকা শহরে চলাচলকৃত ৫০ শতাংশ ব্যক্তিগত যানবাহন। আর এই ৫০ শতাংশ গাড়ি বহন করে মাত্র ১২ শতাংশ যাত্রী। কিন্তু বাকি ৫০ শতাংশ গাড়ি বহন করে ৮৮ শতাংশ যাত্রী।
যানজট বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো ব্যক্তিগত যানবাহন বৃদ্ধি। যার ফলে বিপুলসংখ্যক যানবাহনের চাপে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। নগরীর জীবনমান, শিক্ষার উন্নতি ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় সুবিধা প্রভৃতির কারণে প্রতিনিয়ত রাজধানীতে মানুষের আগমন বাড়ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিশেষ করে বন্যাকবলিত এলাকা, নদীভাঙন ও দুর্ভিক্ষ অঞ্চলের গরিব এবং অসহায় মানুষের একমাত্র কর্মসংস্থানের জায়গা হিসেবে পছন্দ রাজধানী ঢাকা। সড়ক ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা, অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন চলাচল, যেখানে সেখানে ইচ্ছামতো গাড়ি পার্কিং, অবৈধ ফুটপাত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ প্রভৃতি যানজট বাড়িয়ে তুলছে।
রাজধানীজুড়ে অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর ও হাটবাজার গড়ে উঠছে, যার ফলে রাস্তাঘাট সরু হয়ে যাওয়ায় যানজট বাড়ছে দুর্ঘটনা ঘটছে। তাতে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঝরছে তাজা প্রাণ। তাছাড়া সড়কে একদিকে ধীরগতির রিকশা, ভ্যান ও অন্যদিকে দ্রুতগতিসম্পন্ন গাড়ি ও বাস-ট্রাকের যাতায়াতের কারণে গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে, যার ফলে ঘটে দুর্ঘটনা আর দুর্ঘটনার পর দুর্ঘটনাকবলিত এলাকায় শুরু হয় তীব্র যানজট।
মোটকথা এক বেসামাল অবস্থার সৃষ্টি হয় যানজটে। তাছাড়া যানবাহন চলাচলে ট্রাফিক নিয়ম অমান্য করার ফলে যানজটের ঘটনা নিয়মিতই রয়ে গেছে বছরের পর বছর। ঢাকার রাস্তায় যানবাহন বৃদ্ধির সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিনিয়ত বেড়ে যাচ্ছে যানজট। নগরীতে সাধারণ মানুষের জন্য একমাত্র ভরসা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট। প্রতিটি বাসে প্রায় ৫০-৬০ জন মানুষের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। চলমান মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে রাজধানীর সঙ্গে পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোর যোগাযোগ স্থাপিত হলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে ধীরগতি ও দ্রুতগতিসম্পন্ন যানের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা নিয়ে কাজ করতে হবে।

মিজানুর রহমান মিজান : লেখক, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়