ছাত্র অধিকার পরিষদ : গুমের শিকার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে

আগের সংবাদ

রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট

পরের সংবাদ

অর্থনীতির সুপারপাওয়ার চীন রাজনীতিরও কি?

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

‘চায়না’স রাইজ টু অ্যা পলিটিক্যাল এন্ড ইকোনমিক সুপারপাওয়ার’ নামের বইটির লেখক ওলরিখ বার্গার ও ক্রিস্টোফ স্টেইন। জার্মান ভাষায় লেখা বইটি ২০০৫ সালে ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে যখন প্রকাশিত হলো আমেরিকার সবকিছুই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং স্বর্গীয় যারা ভাবেন তারা প্রথমে দেঁতো হাসি হেসেছিলেন। বইটির ভেতরে বিশেষ করে চীনের অর্থনৈতিক উত্থানের যে যুক্তিতর্ক ও বিশ্বাসযোগ্য উৎসের হিসাব-নিকাশ দেখে তাদের দেঁতো হাসি মিলিয়ে যায়, তারা একটা ধাক্কা খান- চীন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরাশক্তি হয়ে উঠবে! আসলেই?
কোভিড-১৯ যখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুরক্ষিত হিসেবে চিহ্নিত দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে তছনছ করে দিচ্ছিল উহান ভাইরাস কিংবা চায়নিজ ভাইরাস নাম দিয়ে প্রাণভরে গালমন্দ করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাঁপিয়ে উঠেছেন, ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন ডিরেক্টর ক্রিস্টোফার রে বললেন, চীনই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বৃহত্তম হুমকি। চীনকে প্রতিহত করতে না পারলে যুক্তরাষ্ট্রের নিস্তার নেই। তিনি তার গোয়েন্দা প্রেক্ষাপট থেকে জানালেন, পরিস্থিতি কতটা নাজুক ও কতটা ভয়াবহ তা অনুধাবনের জন্য এটুকু বলাই যথেষ্ট যে প্রতি ১০ ঘণ্টায় একটি করে চীন সম্পর্কিত কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স মোকদ্দমার নথি খুলতে হচ্ছে। সারাদেশ সক্রিয় ৫০০০ কাউন্টার-ইন্টেরিজেন্স মোকদ্দমার অর্ধেকই চীন সংক্রান্ত।
ন্যাটো প্রধান নরওয়েজিয়ান রাজনীতিবিদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী জেনস স্টোলটেনবার্গ গোটা বিশ্বকেই সতর্ক করেছেন যে বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্য দ্রুত বদলে যাচ্ছে, সামনে দুঃসময়। নিউ নরমাল বা নতুন স্বাভাবিকের যুগে স্টোলটেনবার্গ ‘নতুন শত্রæ’ হিসেবে চীনকে শনাক্ত করেছেন এবং বলেছেন চীনের উত্থান অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষমতার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিযোগিতাকে উত্তপ্ত করে তুলেছে, মুক্ত সমাজ ও ব্যক্তি স্বাধীনতার হুমকিকে বহু গুণিতক বৃদ্ধি করছে, আমাদের পশ্চিম ও ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মূল্যবোধ ও জীবনপদ্ধতিকে ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিয়েছে। তিনি তার আশঙ্কা প্রতিষ্ঠিত করতে চীন-রাশিয়া নতুন অক্ষশক্তির নৈকট্যকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। তিনি চীনের সমরাস্ত্র সক্ষমতার দিকেও ইঙ্গিত করে বলেন তাদের সমরাস্ত্র কারখানায় যে মিসাইল তৈরি হচ্ছে তা ন্যাটোভুক্ত ও ন্যাটোবান্ধব দেশগুলোতে আঘাত করতে সক্ষম। চীনা শক্তি সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়েছে। ‘তাদের দেখতে পাচ্ছি আর্কটিকে, তাদের দেখতে পাচ্ছি আফ্রিকায়। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে তারা এখন বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে। তারা ক্রমাগত রাশিয়ার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শুরু করেছে’; স্টোলটেনবার্গ এতে দেখছেন বিশ্বের স্থিতিশীলতার জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি আর ন্যাটোভুক্ত দেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।
চীনের উত্থান ও সমর্থন রাশিয়াকেও পাশ্চাত্যের স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে ভয়ংকর আতঙ্কজনক শত্রæ মনে করা হচ্ছে। ন্যাটো প্রধান বলেন, চীন তো রয়েছেই, রাশিয়ার এসএসসি-৮ মিসাইল যে কোনো ইউরোপীয় শহরে আঘাত করতে পারে। চীনের সঙ্গে তুলনায় এখন আর যুক্তরাষ্ট্রকে সর্ববৃহৎ শক্তি বলার সুযোগ নেই, শুধু তা ‘বৃহত্তম অর্থনীতিই’ নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মতো অগ্রগামী প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের প্রশ্নে চীনই শীর্ষে।
ন্যাটো প্রধান যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয় দেশগুলোকে মনে করিয়ে দিয়েছেন চীনের অপ্রতিহত উত্থান রুখতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন, এখন সামরিক শক্তি সংকটের আংশিক সমাধান মাত্র- ন্যাটোকে এগোতে হবে আরো রাজনীতিঘনিষ্ঠ হয়ে। ২০৩০ নাগাদ অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘কমন এনিমি’ চীনের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিতে হবে। সবচেয়ে বিস্ময়কর হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউরোপের কোনো দেশ নয় কমিউনিস্ট চীন হচ্ছে ‘মুক্তবাণিজ্য অর্থনীতি’র বিশ্বনেতা, গেøাবাল লিডার।
আরো আশঙ্কার কথা বেরিয়ে এসেছে- মার্কিন কংগ্রেসে চীনকে শায়েস্তা করার মতো কোনো বিল পাস করিয়ে আনা সম্ভব হবে না কারণ রিপাবলিকান-ডেমোক্র্যাট নির্বিশেষে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কংগ্রেসম্যান কোনো না কোনো চীনা বাণিজ্যিক কোম্পানির উপদেষ্টা/পরামর্শদাতা হিসেবে তাদের পে-রোলে রয়েছেন। সিনেটরদের বেলাতেও সম্ভবত একই হিসেব। খোদ আমেরিকাতেই একদা কমিউনিস্ট চীন সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মনোজগতে অনপনেয় উপনিবেশ স্থাপন করে চলেছেন।
ওলরিখ বার্গার ও ক্রিস্টোফ স্টেইনের প্রকাশনার চার বছর পর মার্কিন জ্যাকস ২০০৯ সালে প্রকাশ করলেন ‘হোয়েন চায়না রুলস দ্য ওয়ার্ল্ড : দ্য এন্ড অব দ্য ওয়েস্টার্ন ওয়াল্ড এন্ড দ্য বার্থ অব দ্য নিউ গেøাবাল অর্ডার’। মার্টিন জ্যাকস জোর দিয়েছেন অস্থিতিশীল বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের বিস্ময়কর উত্থানের ওপর। তিনি দেখিয়েছেন আর্থিক শক্তির বলেই একবিংশ শতকের নির্মাতা হবে চীন। চীনের হাতেই দুশ বছরের পাশ্চাত্য আধিপত্যের বিনাশ ঘটবে। চীন পাশ্চাত্য সংস্কৃতির যতটুকু প্রয়োজন কেবল ততটুকুই গ্রহণ করবে, কাজেই সচ্ছল চীন কখনোই পশ্চিমা ধাচের ভোগবাদী সমাজে পরিণত হবে না।
স্মরণ রাখতে হবে চীন একটি প্রথাগত ‘নেশন স্টেট’ নয়; চীন হচ্ছে ‘সিভিলাইজেশন স্টেট’ যার অগ্রাধিকার, মূল্যবোধ এবং উদ্দেশ্য পাশ্চাত্য থেকে ভিন্ন। ‘চাইনিজ সেঞ্চুরি’ ও ‘ চাইনিজ রুল’-এ চীন এবং তার প্রতিবেশীদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলছে এবং ফেলবে মার্টিন জ্যাকস যেভাবে দেখছেন তার সারাংশ :
ক. পাশ্চাত্যের আধুনিকতা কোনো একক আধুনিকতা নয়, বহু আধুনিকতার সৃষ্টি ও মিশ্রণ ঘটেছে তাতে।
খ. চীনের আধুনিকতা পশ্চিমে আধুনিকতা থেকে অনেকটা ভিন্ন প্রকৃতির।
গ. আমরা একটি প্রতিযোগিতামূলক আধুনিকতায় প্রবেশ করতে যাচ্ছি, পাশ্চাত্যের আধুনিকতার একাধিপত্য ক্ষয় পেতে শুরু করেছে।
ঘ. চীন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে দ্রুত অনেক পেছনে ফেলে দেবে।
ঙ. গোটা পৃথিবীর ওপর চীনের প্রভাব কেবল আর্থিকই হবে না, গভীর রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আদর্শগত।
চ. হাজার বছর ধরে চীন ছিল পূর্ব এশিয়ার ট্রিবিউটারি স্টেট সিস্টেমের কেন্দ্রস্থলে। অন্য অনেক দেশ ছিল এক ধরনের করদ রাজ্য। উনবিংশ শতকে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের আগমনে সে পদ্ধতির অবসান ঘটে।
ছ. পূর্ব এশীয় অর্থনীতি চীনকে ঘিরেই প্রধানত আবর্তিত, ট্রিবিউটারি সিস্টেমের পুনরার্ভিভাব ঘটলে তা বিস্ময়ের কারণ হবে। দুর্বল রাষ্ট্রকে প্রতিরক্ষা প্রদানের বিনিময়ে কর আদায় করতে চাইতে পারে।
জ. চীন যে ‘সিভিলাইজেশন স্টেট’ এই ধারণটি ক্রমে আরো স্পষ্ট ও আরো প্রভাব সঞ্চারক হয়ে উঠবে।
ঝ. চাইনিজ স্টেট পাশ্চাত্যের স্টেট থেকে অবশ্যই ভিন্ন। চার্চ কিংবা বণিক সম্প্রদায় এর প্রতিদ্ব›দ্বী ছিল না। চীনারা দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে শ্রদ্ধা ও সমীহের চোখে রাষ্ট্রকে দেখে আসছে। রাষ্ট্র তাদের অভিভাবক এবং চীনা সংস্কৃতির রক্ষক।
ঞ. চীনারা তাদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে অন্য সব আইনকানুনের চেয়ে ঊর্ধ্বে স্থান দিয়ে থাকে।
ট. জাতিগত সংকট চীনে তুলনামূলকভাবে কম। ৯২ ভাগ চীনা মনে করে তারা হান চাইনিজ। এমনকি তাইওয়ানিজ চীনাদের বেলাতেও তাই।
ঠ. কনফুসিয়ান যুগ এবং কমিউনিস্ট যুগের চীনের মধ্যে বিশেষ কোনো তফাৎ নেই, সমাজ ব্যবস্থা ও কাঠামোতে বড় কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।
চীনে কাঠামোগতভাবে তেমন না বদলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পরিবর্তনে দ্রুত সাড়া দিয়ে উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে গেছে এবং এখন তাদের নিয়ন্ত্রণের মহাসড়ক নির্মাণ কাজে অনেকদূর এগিয়ে গেছে।
চীন পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করবে- নব্বইয়ের দশক থেকেই এই থিসিস প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। হাভার্ড অধ্যাপক জোসেফ নাই- এর মতো পণ্ডিতরা মনে করছেন একালের বিশ্লেষকরা যুক্তরাষ্ট্রকে অবমূল্যায়ন করছে আর চীনকে ফাঁপিয়ে ফুলিয়ে উপস্থাপন করছে।
সত্তরের দশকে পশ্চিমের ভাষায় ‘মাওয়িস্ট নাইটমেয়ার’-এর অবসান ঘটান দেং জিয়াও পিং বরং চীনকে বাজারের সামনে খুলে দেন এবং চীনের আধুনিকায়নে ব্রতী হন। উন্নয়ন চলাকালীন দুর্নীতির যে পাপ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে চীন তা থেকে মুক্ত ছিল না, কিন্তু কঠোর নিয়ন্ত্রণও ছিল। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় চীন বহু সংখ্যক দুর্নীতিপরায়ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে দীর্ঘমেয়াদে কারাগারে পুরেছে।
চীনের শতবর্ষ পূর্তি হতে যাচ্ছে ২০৪৯। চীনের কৌশলগত লক্ষ এই সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সবচেয়ে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়া। শিন জিন পিংয়ের কথায় চাইনিজ ভিশন হচ্ছে ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড ওয়ান ড্রিম’-প্রকৃতপক্ষে চীনের সাম্রাজ্য বিস্তারের স্বপ্নকে তুলে ধরে। তবে চীন যুক্তরাষ্ট্রের মতো আগ্রাসী নয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর প্রায় প্রতিটি যুদ্ধই যুক্তরাষ্ট্র প্রণোদিত, তাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার গচ্ছা দিতে হয়েছে, লক্ষ্য আমেরিকান যুবক কামানের খোরাকে পরিণত হয়েছে। চীন তার কোনো মিত্রের হয়ে যুদ্ধ করার প্রতিশ্রæতিও দেয়নি, যুদ্ধে জড়ায়ওনি। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আমারা চীনের ভূমিকা দেখেছি, নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের সমর্থনে ভেটো দিলেও একটি বুলেটও খরচ করেনি।
শিন জিন পিংয়ে চাইনিজ ড্রিম যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কাছে আশঙ্কার যে চিত্র তুলে ধরেছে তাতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চীন ‘আপার হ্যান্ড’ পেলে পাশ্চাত্যের গণতান্ত্রিক মডেল মার খেয়ে যাবে- মাথা তুলে দাঁড়াবে কর্তৃত্ববাদ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের নিয়ে কমিউনিজমের প্রসার ঠেকাবার এক অর্থহীন যুদ্ধে ট্রিলিয়ন ডলার ও লক্ষ জীবন বিসর্জন দিয়েছে। এখন তারা ঠেকাবে চীনের কর্তৃত্ববাদের রপ্তানি। রাশিয়া ও চীন ছাড়া পৃথিবীর সব বাঘা বাঘা দেশ এবং মিউ মিউ করা দেশ সর্বত্রই কারখানার উৎপাদন- ফ্যাক্টরি গ্রোথ, স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে নেমে এসেছে এবং বৈশ্বিক মন্দাবস্থার বিস্তার ও তীব্রতা বাড়াচ্ছে। বিশ্বব্যাধি কোভিড-১৯-এর লকডাউন সিনড্রৌম অনেক দেশই কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সূচনা চীনের উহানে হলেও অন্তত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাগুণে দেশটি যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে উত্তম তার নিশ্চয়নের জন্য জনসংখ্যা ও কোভিড মৃত্যুর অনুপাতের তুলনাই যথেষ্ট। চীন ঘুরে দাঁড়িয়েছে কোভিড সংকটের মধ্যেই এবং রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট জ¦ালানি সংকটের দিনে চীনা অর্থনীতির ‘পিক আপ’ অব্যাহত রয়েছে।
সাম্প্রতিক ব্লুমবার্গ স্পেশাল রিপোর্ট যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বলছে চীনের কাছ থেকে অর্থনীতি শেখো, মুদ্রাস্ফীতি ব্যবস্থাপনা শেখো। দক্ষিণ এশিয় অনেক দেশের মন্ত্রীদের মতো মিথ্যাচার করে, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে, সরকারি দপ্তর থেকে প্রেম বিজ্ঞপ্তি জারি করার পথে এগোয়নি চীন। ইউরোপ ও আমেরিকা সংকটের মোকাবিলায় প্রেস রিলিজ আর ভর্তুকির হাতিয়ার হাতে তুলে নিয়েছে। তেল ও কৃষিপণ্যের সর্ববৃহৎ আমদানিকারক চীনের জন্য ইউক্রেন সংকট মারাত্মক আঘাত এবং মূল্যবান শিক্ষা- প্রেসিডেন্ট শিন জিনপিং তার দেশকে খাদ্য ও কৃষিপণ্যে স্বনির্ভরতার দিকে ধাবিত করেছেন। জ¦ালানি প্রশ্নে নীতিগত সমঝোতা করে গ্রিন এনার্জি থেকে কিছুটা সরে এলেও কয়লা উৎপাদনে আবার মনোযোগী হতে তার দেশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
চীন কি আর্থিক সমৃদ্ধির সঙ্গে রাজনৈতিক দানব হয়ে উঠছে না? পালাও নামের ছোট দ্বীপদেশ চীন আতঙ্ক থেকে মুক্ত হতে যুক্তরাষ্ট্রকে এই দ্বীপে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এক চীন নীতির আওতায় তাইওয়ান যদি চীনের সামরিক দখলে চলে আসে বিস্মিত হবার কিছু থাকবে না। ভারত-আমেরিকান অক্ষ চীনের ভয়েই সবল হয়ে উঠতে পারছে না। চীনের কারণে বাংলাদেশেও পারছে না রোহিঙ্গাদের দেশ থেকে বের করে দিতে। আবার ভারতের সঙ্গে স্বামীর-স্ত্রীর সম্পর্ক দাবি করা ‘আলগাকথন’-প্রিয় বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে ‘থুক্কু’ বলে এক চীনের গুণগানও করতে হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশে চীন নিয়ে দ্বিধা ও আশঙ্কা এটাই প্রমাণ করে চীনকে নাখোশ করা সিদ্ধান্ত নিয়ে কেউই মার খেতে চায় না। রাজনীতিতেও চীন সুপারপাওয়ার হয়ে উঠছে আমেরিকার চীন-নীতি ও চীন-ভীতি নিঃসন্দেহে তারই সাক্ষ্য দেয়।

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়