গুলিস্তান : ভবনের ক্রেন থেকে রড পড়ে আহত ৫ পথচারী

আগের সংবাদ

আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ সমাবেশে নেতাদের ঘোষণা : খেলা হবে রাজপথে

পরের সংবাদ

সিআরবিতে হাসপাতাল চান না চট্টগ্রামের মন্ত্রী-এমপিরা

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন ও সর্বস্তরের নাগরিকদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে চট্টগ্রামের ফুসফুস হিসেবে পরিচিত ‘কালচারাল হেরিটেজ’ সিআরবিতে ইউনাইটেড হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টি স্থগিতের জন্য রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনকে অনুরোধ জানিয়েছেন চট্টগ্রামের মন্ত্রী ও এমপিরা। তারা হাসপাতালটি রেলের অন্য জায়গায় নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়নেরও অনুরোধ জানান রেলমন্ত্রীকে। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রেলমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চট্টগ্রামের সাবেক ও বর্তমান তিন মন্ত্রী এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রমুখ। এ ছাড়া চিঠিতে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি, মোস্তাফিজুর রহমান এমপি, মাহফুজুর রহমান মিতা এমপি, খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি স্বাক্ষর করেন।
চট্টগ্রামের সর্বস্তরের নাগরিকদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ঐতিহাসিক সিআরবি এলাকায় পিপিপির আওতায় হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটি রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সীতাকুণ্ডের কুমিরায় স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়ায় রেলমন্ত্রী ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের অভিনন্দন জানানো হয় চিঠিতে।
চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনি জানেন প্রাচ্যের রানি হিসেবে খ্যাত সাগর, পাহাড়, নদীবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি আমাদের চট্টগ্রাম। নান্দনিক সৌন্দর্যে ঘেরা এ নগরের রূপ মাধুর্যকে আরো সমৃদ্ধ করেছে চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত কেন্দ্রীয় রেলভবন তথা সিআরবি। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সিআরবি ভবনটি শুধু চট্টগ্রামেই নয়, পুরো দেশের মধ্যে স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শন। এখানে রয়েছে অসংখ্য রেইনট্রি। যেগুলোর কোনো কোনোটির বয়স পেরিয়ে গেছে শত বছরের বেশি। এটি ব্যস্ততম নগরী চট্টগ্রামের অক্সিজেন সরবরাহের উৎস হিসেবেও পরিচিত।
সম্প্রতি এক গবেষণায় সিআরবিতে প্রায় ২২৫টি দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে। শতবর্ষী বৃক্ষরাজি, পাহাড়, টিলা ও উপত্যকায় ঘেরা বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থান হিসেবে সিআরবি চট্টগ্রামের মানুষের মনে আলাদা স্থান করে নিয়েছে। এখানে বৃক্ষরাজির শীতল ছায়াতলে বিশেষ করে অনিন্দ্যসুন্দর শিরীষতলায় আয়োজিত হয় বাংলা নববর্ষ, বসন্ত উৎসব, রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তীসহ বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসমূহ।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদ হিসেবে আত্মোৎসর্গ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ। তিনিসহ ১১ জনের সমাধি রয়েছে এ সিআরবিতে। অপূর্ব নিসর্গ, শহীদদের সমাধিস্থল, মুক্তবায়ুতে নিরিবিলি পরিবেশে সকাল-বিকাল পরিবার পরিজন নিয়ে হাঁটাচলার এবং শারীরিক কসরতের অন্যতম নিরাপদ স্থান হিসেবে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের মাঝে সিআরবি এখন অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। সভ্যতার অগ্রগতি ও মানুষের লোভের আঘাতে প্রকৃতি আজ তার রূপ ও ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রণীত ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) এটিকে কালচারাল হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। ৮টি নির্দেশনার উল্লেখ রয়েছে। ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। উল্লেখযোগ্য নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সিআরবির কোনো অংশ ব্যবহার করা যাবে না এবং এখানে কোনো বহুতল ভবন নির্মাণ করা যাবে না। শুধু পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পাখির অভয়ারণ্য, জাদুঘর, প্রজাপতি উদ্যান প্রতিষ্ঠা করা যাবে। সব কিছু মিলিয়ে সিআরবি এখন চট্টগ্রামের সব মানুষের আবেগ ও ভালোবাসার জায়গায় পরিণত হয়েছে। এখানে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগটি সংশ্লিষ্ট গেজেটের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। বিষয়টিতে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের নাগরিকরা ভীষণভাবে কষ্ট পেয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতাল স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়ায় চট্টগ্রামবাসী আশান্বিত হয়েছেন, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।’
চিঠিতে চট্টগ্রামের সব জনসাধারণের পক্ষ হতে মন্ত্রী এমপিরা সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ স্থগিত করে রেলওয়ের অন্যত্র জায়গায় হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানান রেলমন্ত্রীকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়