গুলিস্তান : ভবনের ক্রেন থেকে রড পড়ে আহত ৫ পথচারী

আগের সংবাদ

আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ সমাবেশে নেতাদের ঘোষণা : খেলা হবে রাজপথে

পরের সংবাদ

রুবলে রাশিয়া থেকে তেল কেনার চিন্তা বাংলাদেশের

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** পর্যালোচনার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর ** সম্ভাব্য উৎস অনুসন্ধান করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় **
অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য : সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বর্তমানে জ¦ালানি তেল কিনলেও বাংলাদেশ এখন রাশিয়া থেকে তেল কেনার চিন্তাভাবনা করছে। রাশিয়া থেকে তেল কিনলে রাশিয়ান মুদ্রা রুবলে বাংলাদেশ দাম পরিশোধ করতে চাইছে বলে জ¦ালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে বাংলাদেশ ১৫ লাখ টন পর্যন্ত তেল পরিশোধনের ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া চলমান পরিস্থিতিতে ডলার সংকট থেকে রেহাই পেতে দ্বিপক্ষীয় মুদ্রায় বাণিজ্যের দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে ডলারের আকাশচুম্বী চাহিদা থাকবে না বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি নিজস্ব মুদ্রার মানও শক্তিশালী হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ¦ালানি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়ে বেশ কিছু দিন ধরে আলোচনা চলছে। গতকাল মঙ্গলবারের একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিকনির্দেশনা দেয়ায় রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়ে আলোচনাটি জোর পেয়েছে। তবে কবে থেকে এবং কোন প্রক্রিয়ায় রাশিয়া থেকে তেল কেনা শুরু করবে, বাংলাদেশ তা এখনো স্পষ্ট করেনি। এমনকি রাশিয়া থেকে সরাসরি তেল বাংলাদেশে আসবে, নাকি অন্য কোনো দেশের মাধ্যমে আসবে, তারও রূপরেখা তৈরি হচ্ছে বলে ওই কর্মকর্তা দাবি করেছেন।
তবে মন্ত্রণালয়ের আরেকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়া থেকে সরাসরি তেল কিনলে বাংলাদেশের লাভ হবে। কিন্তু প্রক্রিয়াটি খুব একটা সহজ নয়। কারণ রাশিয়া থেকে তেল কিনলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করবে। সেই চাপ বাংলাদেশ কীভাবে মোকাবিলা করবে, সেটি এখন বড় প্রশ্ন। তবে আরো কিছুদিন না গেলে রাশিয়া থেকে তেল কেনার পুরো প্রক্রিয়াটি পরিষ্কার হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, কয়েকটি দেশের ব্যবসায়ীরা জ¦ালানি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বলেছে, রাশিয়া থেকে তেল কিনে তৃতীয় আরেকটি দেশের ওপর দিয়ে বাংলাদেশে পাঠাবে। এমন চিঠির প্রেক্ষিতে

জ¦ালানি মন্ত্রণালয় থেকে ওই ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে সুস্পষ্ট প্রস্তাব জমা দিতে। কোন দেশের কোন ব্যবসায়ীরা এমন চিঠি দিয়েছেন, তা জানাতে রাজি হননি জ¦ালানি মন্ত্রণালয়ের ওই শীর্ষ কর্মকর্তা।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আয়োজিত একনেক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়টি পর্যালোচনার করার কথা বলেছেন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রাশিয়া থেকে তেল কেনা যাবে। ভারত পারলে আমরা কেন পারব না? রুবলের সঙ্গে টাকা বিনিময়ের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করা যায় কিনা, সেই বিষয়ে উপায় খুঁজে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, দ্বিপক্ষীয় মুদ্রা বিনিময় (কারেন্সি সোয়াপ) নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। রাশিয়া, চীন ও ভারত এই তিন দেশের সঙ্গে এমন হতে পারে। আমরা এসব দেশ থেকে আমদানি বেশি করি। তাহলে তারা আমাদের টাকা কী করবে? এ নিয়ে আলোচনা চলছে।
ওদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির বিষয়ে সম্ভাব্য উৎস অনুসন্ধান করার কথা জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, নির্দেশনা এসেছে। আমরা অন্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে অবশ্যই সম্ভাব্যতা অনুসন্ধান করব। রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির বিষয়ে তিনি বলেন, ভারতের যে সক্ষমতা আছে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করার সক্ষমতা যদি আমরা করে নিতে পারি, তাহলে অবশ্যই আমরাও আনতে পারব। তবে সেটি সময়সাপেক্ষ। হয়তো কয়েকজন বিশেষজ্ঞ আসবে এবং আমাদের পরিশোধনাগারগুলো উন্নত করার কাজ করবে।
ভারত থেকে তৃতীয় দেশ হিসেবে রাশিয়ার তেল আমদানির বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভারতের সঙ্গে এটি বলা হয়নি। জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলেছে কিনা আমি জানি না। তেল আমদানি করলে কূটনৈতিক সমস্যা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকে নিচ্ছে। তৃতীয় দেশ হিসেবে অনেকে নেয়। কিন্তু আমি যতদূর শুনেছি পরিশোধনাগারের একটি সীমাবদ্ধতা আছে। এটি যদি আমরা কাটিয়ে উঠতে পারি, তবে আমাদের পক্ষেও আনা সম্ভব হবে।
কীভাবে অর্থায়ন হবে জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সেটি বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় ঠিক করবে। তেল আমদানি করলে ঝুঁকিতে পড়ব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি এখনো অনেক দূরের বিষয়। সবে আমাদের অনুসন্ধান করার কথাটা এলো। সুতরাং আমরা অনুসন্ধান করে দেখব। যদি সে রকম কোনো ঝুঁকি থাকে, তবে অন্য যে বিকল্প সুযোগ আছে, সেটি দেখব। অন্য কোন কোন দেশ থেকে তেল আনা যাবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে। স¤প্রতি সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তারাও দিতে প্রস্তুত আছে। কাতারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো আছে। আমরা এলএনজি আমদানি করি। সুতরাং আমাদের বিকল্প অনেক আছে। ইরান থেকে তেল আমদানি করা যায় কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি আরেকটি বিকল্প সুযোগ। ইরানের ওপরও কিছু নিষেধাজ্ঞা আছে। ইরানের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর একটি আলোচনা চলছে। যদি এর ফল ইতিবাচক হয়, তাহলে নিষেধাজ্ঞাগুলো দ্রুতই তুলে নেয়া হবে। তখন আরেকটি সম্ভাবনা তৈরি হবে। তবে ইরানের যে তেল এখানে কতটুকু পরিশোধন করা যাবে, সেটি দেখতে হবে।
তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্য থেকে এখন পর্যন্ত আমরা তেল আমদানি করি। যেটা হাতে আছে, সেটাই আমাদের সংহত করা উচিত। সেটি যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়