গুলিস্তান : ভবনের ক্রেন থেকে রড পড়ে আহত ৫ পথচারী

আগের সংবাদ

আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ সমাবেশে নেতাদের ঘোষণা : খেলা হবে রাজপথে

পরের সংবাদ

নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তড়িঘড়ি করে কাজ : শিবালয়ে বছর না যেতেই আশ্রয়ণের ঘরে ফাটল

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সুরেশ চন্দ্র রায়, শিবালয় (মানিকগঞ্জ) থেকে : শিবালয়ের তেওতা ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বেশ কয়েকটি ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রী ও নামসর্বস্ব মিস্ত্রিদের কম টাকা দিয়ে তাড়াহুড়ো করে যেনতেনভাবে এসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আবাসনের বাসিন্দা ও স্থানীয়রা।
তেওতা এলাকার একজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের চোখের সামনে ওই সময়ে নি¤œমানের জিনিসপত্র দিয়ে ঝটপট কাজ করা হয়েছে। সরকার ভূমিহীনদের কথা চিন্তা করে স্থায়ীভাবে আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তুলেছেন। কিন্তু কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা এ মহৎ কাজে তাদের পকেট ভারী করেছেন।
শিবালয়ের তেওতা ইউনিয়ন পরিষদের পিছনে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, বেশ কিছু ঘরের দেয়াল ও পিলারে ফাটল, কোনো কোনো ঘরের দেয়ালের পলেস্তরা খসে পড়ছে। আবার কোনো কোনো ঘরের দরজা, জানালার ঝালাই খুলে গেছে, সামান্য বৃষ্টিতেই চালের টিন দিয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি। কয়েকজন রাজমিস্ত্রি তাদের সহযোগীদের নিয়ে দেয়াল ও পিলারের ফাটল মেরামত করতে দেখা গেছে। ঘরের পিলার ও দেয়ালে ফাটল এবং পলেস্তারা খসে পড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে রাজ্জাক নামে একজন মিস্ত্রিকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সাগর নামে অপর মিস্ত্রিকে ডাকেন। সাগর এ প্রতিবেদককে বলেন, এ কাজটি আমরা করিনি। তাই এ মুহূর্তে এর সঠিক কারণ বলা মুশকিল। আমরা এখন গ্যারাটিন দিয়ে ফাটলগুলো ভরাট করে দিচ্ছি। এ সময় পাশে অবস্থানরত পিআইও অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী সুবোধ কুমার মণ্ডল রাজমিস্ত্রিকে উদ্দেশ করে বারবার বলছিলেন, কাজের পরে পর্যাপ্ত পানি না দেয়ার কারণেই এমনটি হয়েছে।
২২নং ঘরের বাসিন্দা আব্দুল খান ও তার স্ত্রী রেনু খান বলেন, আমাদের ঘরে প্রথম থেকেই বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। এখন আবার দেয়ালের বিভিন্ন জায়গায় ফেটে গেছে। ছোট বাচ্চা নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে ঘরে বসবাস করছি।
৩১নং ঘরের মুক্তার হোসেনের স্ত্রী রেখা বেগম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে জমি ও ঘর পেয়ে আমরা অনেক খুশি। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই আমাদের ঘরের পিলার ফেটে গেছে। আমার প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে খুব ভয়ের মধ্যে রাত-দিন কাটাই।
এছাড়া আশ্রয়ণের ঘরপ্রাপ্ত মো. ইউনুস আলী ও শিপন সরদার বলেন, আমাদের ঘরের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। আমরা খুব চিন্তায় আছি।
৩৩ ও ৩৪নং ঘরের বাসিন্দা মৃত আবু তাহেরের স্ত্রী শিল্পী আক্তার ও স্বপন সরদারের স্ত্রী বর্ষা আক্তার বলেন, আমাদের ঘরের দেয়ালে, পিলারে ও ফ্লোরে ফাটলের অন্ত নেই। এ বিষয়ে তেওতা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের লোকজনকে অনেকবার বলেছি। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। টিউবওয়েলটিও দীর্ঘদিন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। একবার মিস্ত্রি এনে দেখিয়েছিলাম। কিন্তু এখন পানি ওঠে না।
শিল্পী আক্তার দুঃখ করে আরো বলেন, উপজেলা থেকে এক অফিসার এসে আমাদের বলেন, আমরা নাকি দেয়ালগুলো ইচ্ছা করে ভেঙেছি। আমাদের পায়ের নিচে মাটি ছিল না, প্রধানমন্ত্রীর কারণে আমরা ঘর পেয়েছি। এই ঘর কি আমরা নিজ হাতে নষ্ট করতে পারি?
সুবল সরদারের স্ত্রী মালেকা বেগম বলেন, আমার ঘরে অনেকগুলো ফাটল দেখা দিয়েছে এবং ঘরের নিচে একদিকের মাটি সরে গিয়ে ঘর কাত হয়ে গেছে। যে কোনো সময় আমার ঘর উপড়ে পড়ে যেতে পারে। ইট ও খোয়া দিয়ে আমি কোনোরকমে গর্ত ভরাট করে রেখেছি। ইট ভাঙা দিয়ে গর্ত ভরাট না করলে এতদিন আমার ঘরের আরা কাত হয়ে যেত। ওই সময়ে ইউএনও বলেছিলেন, আমার ঘরের পাশ মাটি ভরাট দিয়ে পাকা করে দেবেন। কিন্তু সেটি তিনি করেন নাই। পরে শুনলাম তিনি বদলি হয়ে চলে গেছেন।
ঘরের বিষয়ে জানতে শিবালয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুদেব কৃষ্ণ রায়কে ফোন করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে আমি আপনাকে বক্তব্য দিতে পারব না। অফিসে আসেন। পরের দিন বক্তব্য সংগ্রহ করতে তার অফিসে গেলে তিনি বলেন, এখন আমার সময় নেই।
পরক্ষণেই তিনি অনেকটা বিরক্তির সুরে বলেন, বক্তব্য লাগবে কেন? আপনি তো আশ্রয়ণ প্রকল্পে নিজেই গিয়েছিলেন, যা দেখেছেন লিখে দেন।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমান বলেন, আমি শিবালয়ে যোগদানের পূর্বেই এ আশ্রয়ণ প্রকল্পটি করা হয়েছে। আবাসনের ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে শুনে আমি উপজেলা প্রকৌশলী, পিআইও ও স্থানীয় চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তাৎক্ষণিকভাবে ফাটল ঘরগুলো মিস্ত্রি দিয়ে মেরামত করে দিয়েছি। পরবর্তী সময়ে যদি এ রকম সমস্যা আরো দেখা দেয় তবে সেগুলোও মেরামত করে দেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়