গুলিস্তান : ভবনের ক্রেন থেকে রড পড়ে আহত ৫ পথচারী

আগের সংবাদ

আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ সমাবেশে নেতাদের ঘোষণা : খেলা হবে রাজপথে

পরের সংবাদ

দখল-দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে বরিশালের ২২ খাল

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম কে রানা, বরিশাল থেকে : নগরীর জেলখালসহ ২২টি খাল পলিথিন আর প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে ঠাসা পুরো খাল। কোথাও কোথাও পলিথিনের বড় স্তূপ থাকার কারণে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। খালগুলো একদিকে পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যে একাকার হয়ে আছে। অন্যদিকে দখলে-দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে। অপচনশীল সর্বনাশা পলিথিনের যত্রতত্র ব্যবহারের ফলে ভরাট হচ্ছে নগরীর পয়ঃনিষ্কাশনের খাল ও নালা-নর্দমা। এমনই ভয়াবহ চিত্র নগরীর লাকুটিয়া খাল, জেলখাল ও পোর্ট রোড অংশের খালসহ ২২টি খালের। সচেতন নাগরিক ও পরিবেশবাদীদের মতে, পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধে কঠোরতার পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করার মাধ্যমে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, নিষিদ্ধ পলিথিন বন্ধে শিগগিরই কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হবে।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অভিজাত রেস্টুরেন্ট, মুদি দোকান, কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে ফুটপাতের প্রায় সব দোকানের পণ্যবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ। সহজলভ্য ও ব্যবহারে সুবিধা থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই ক্ষতির দিক বিবেচনা না করে পলিথিন ব্যাগ দেদার ব্যবহার করছেন। পলিথিন আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হলেও এক শ্রেণির অসচেতন অসাধু ব্যবসায়ী নানা কৌশলে প্লাস্টিক বস্তা ও পলিব্যাগে (পলিথিন) বিক্রি করছে চাল, ডাল, মাছসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। যে কারণে পলিথিন ব্যাগে সয়লাব বরিশাল জেলার সর্বত্র। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সংগৃহীত বর্জ্যরে বড় অংশই পলিথিন ব্যাগ। নগরবাসীর ব্যবহৃত এসব পলিথিনের বড় একটা অংশ সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয় সিটি করপোরেশন। ফলে এসব ব্যাগ যত্রতত্র পড়ে থেকে দূষণ ঘটাচ্ছে মাটিতে।
সূত্রমতে, ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ‘জনগণের জেলখাল, আমাদের পরিচ্ছন্নতা অভিযান’ এই স্লোগানে হাজারো মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমে নগরীর ২২টি খালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামানের উদ্যোগে পরিচ্ছন্ন অভিযানের আগে খালের দুই তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। ওই সময় ২৫৫ দখলদারের তালিকাও করা হয়েছিল। উচ্ছেদ এবং পরিচ্ছন্নতা অভিযানের পর কীর্তনখোলার ভরা জোয়ারে জেলখালের বুকে পানি থৈ থৈ করত। কিন্তু দুয়েক বছর না যেতেই ফের দখলদারদের আগ্রাসন এবং ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ হয়ে খালগুলো এখন মৃতপ্রায়। তৎকালীন জেলা প্রশাসন ওই খালগুলোর তীরে খালের নামসহ সাইনবোর্ডও স্থাপন করেছিল। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে সেই খালগুলো পলিথিন আর প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে ঠাসা হয়ে আছে। সাইনবোর্ডগুলোর অস্তিত্বও বিলীন। অথচ এসব খাল দিয়ে এক সময় যাত্রীবাহী ও পণ্যবোঝাই নৌকা চলাচল করত। বরিশাল সিটি করপোরেশনের একটি সূত্রে জানা যায়, দখল-দূষণে মৃতপ্রায় নগরীর ২২টি খাল খননের জন্য বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডও খাল খননে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। তবে দুই দপ্তরের ঠেলাঠেলিতে খাল খনন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে করে নগরবাসী ভোগান্তিতে রয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র নির্বাহী পরিচালক রফিকুল আলম জানান, সিটি করপোরেশনের প্রস্তাবনায় ২২টি খালের মধ্যে শুধু সাগরদী খালের নাম উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া সিটি করপোরেশনের প্রস্তাবনা কবে নাগাদ অনুমোদন হবে তা নিশ্চিত নয়। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল খনন কার্যক্রমের অনুমোদনের পাশাপাশি বরাদ্দও এসে গেছে। এমতাবস্থায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড খাল খননকাজ করতে না বরাদ্দকৃত টাকা ফেরত যাওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও জনপ্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে একমত না হলে নগরবাসীর ভোগান্তি ভবিষ্যতে আরো তীব্র হবে। তবে নগরীর ৭টি খালের ১৯ কিলোমিটার খননকাজ শিগগিরই শুরু হবে বলে জানালেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী। বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, প্রায়ই পলিথিনের ওপর আমাদের অভিযান চালানো হচ্ছে। খুব শিগগিরই আমরা পলিথিন বন্ধ করার জন্য কঠোর অভিযান পরিচালনা করব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়