গুলিস্তান : ভবনের ক্রেন থেকে রড পড়ে আহত ৫ পথচারী

আগের সংবাদ

আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ সমাবেশে নেতাদের ঘোষণা : খেলা হবে রাজপথে

পরের সংবাদ

খুলনা পাসপোর্ট অফিস : সেবায় খুশি জনসাধারণ, নেই দালালের উৎপাত

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আছাদুজ্জামান (ঢাকা), বাবুল আকতার (খুলনা) : খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের সেবার মান সন্তোষজনক বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। এক সময়ে এ অফিসে দালালের উৎপাত থাকলেও এখন দেখা যায় না বললেই চলে। তবে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা ভুয়া ঠিকানায় পাসপোর্ট করতে এলে খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ে থেকে তারা আটক হন। এদিকে বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গতকাল রবিবার ভোরের কাগজের অনুসন্ধানী দল সরেজমিনে অনুসন্ধানে গেলে এর সত্যতা খুঁজে পায়। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পাসপোর্ট সেবাগ্রহীতা থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের মতামত প্রকাশ করেন। তবে এর আগে যখন সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় এই বিভাগীয় কার্যালয়টি ছিল, তখন পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ মানুষ দিনের পর দিন হয়রানি আর ভোগান্তিতে পড়তেন। এমনকি প্রতিনিয়ত ছিনতাইকারীরদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার ছিনতারইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছেন। ভোরের কাগজের অনুসন্ধানী দলের কাছে এমন অভিযোগ করেছেন এনরোলমেন্ট করতে আসা একাধিক আবেদনকারী। স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন যে আবেদনগুলো এনরোলমেন্ট হয়, তার মধ্যে প্রায় ৬০ এর অধিক মিল-কারখানায় কর্মরত শ্রমিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় নেই স্থায়ী ঠিকানা। এমনকি অনেক মানুষই কর্মহীন। আবার অনেকের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের আবেদনগুলো এনরোলমেন্ট হলেও অধিকাংশ আবেদন পুলিশ তদন্তে আটকা পড়ে যাওয়ায় পাসপোর্ট পেতে ভোগান্তিতে পড়ছেন।
এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক নাসরিন পারভীন নুপুর ভোরের কাগজকে জানান, এ অফিসে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ শতাধিক আবেদন এনরোলমেন্ট হয়। তার মধ্যে এক চতুর্থাংশ আবেদন তথ্য পরিবর্তনের। তিনি বলেন, পাসপোর্টের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম-সনদের তথ্য অনুযায়ী আবেদন ফরম জমা নেয়া হয়। সব তথ্য ঠিক থাকলে খুব সহজেই আবেদনকারী পাসপোর্ট পাচ্ছেন বা পাবেন। তিনি আরো জানান, কোনো অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অযথা কেউ যদি কোনো হয়রানির স্বীকার হন তাহলে সরাসরি তাকে অবহিত করার অনুরোধ জানান বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের এ সহকারী পরিচালক।
এ বিষয়ে খুলনা মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক শফিকুর রহমান পলাশ জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দেশের মানুষকে প্রথম ই-পাসপোর্ট উপহার দিয়েছেন। এর মাধ্যমে ই-পাসপোর্টধারীরা বিমানবন্দর ও স্থল বন্দরে নির্বিঘেœ যাওয়া-আসা করছেন। এতে অনেক সুবিধা হয়েছে। পাসপোর্ট অফিসের সেবার মান জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, আমাদের খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের সেবার মান খুবই ভালো।
ই-পাসপোর্টের সেবার মান সম্পর্কে জানতে চাইলে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান ভোরের কাগজকে জানান, আমাদের এখানে সেবার মান অনেক ভালো। তেমন কোনো অভিযোগ এ পর্যন্ত কারো কাছে শুনিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, পুলিশের কর্মকর্তারা পাসপোর্টের তদন্তে গিয়ে যদি সব তথ্য যথাযথ পান, তাহলে অবশ্যই সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে হয়রানি ও ভোগান্তি ছাড়া তাদের তদন্ত কাজ শেষ করা উচিত। তবে ইতিপূর্বে লোকমুখে তাদের সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক মন্তব্যের কথা শুনেছি। এ বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যারা রয়েছেন তাদের সজাগ দৃষ্টি রাখার অনুরোধ করেন তিনি।
খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিয়াজ জানান, খুলনা পাসপোর্ট

অফিসে সেবার মান বাড়ানোর জন্য একটি হেলফ ডেস্ক খুবই প্রয়োজন। যাতে সাধারণ মানুষ পাসপোর্টর বিষয় নিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা পায়। তিনি বলেন, এ পাসপোর্ট অফিসে দালালের দৌরাত্ম্য ও আবেদন জমাকারীদের কোনো ধরনের ভোগান্তি নেই।
এর আগে ভুয়া নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্ট করতে এসে মিয়ানমার থেকে এ দেশে আশ্রয় নেয়া ২ রোহিঙ্গা খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে আটক হন। এর মধ্যে একজন নারী রোহিঙ্গাও ছিলেন। সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বিকালে শারমিন আক্তার (২২) নামে এক রোহিঙ্গা তরুণী তার প্রেমিক সাইফুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে আসেন। এ সময় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালকের সন্দেহ হলে তিনি পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আবেদনে তার দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর তরুণীকে আটক করে এবং তার প্রেমিক সাইফুল্লাহ চৌধুরীকে পুলিশ হেফাজতে রাখে। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা নুরুল কবির চৌধুরীর ছেলে সাইফুল্লাহ চৌধুরী রোহিঙ্গা তরুণী শারমিনকে ভালোবেসে পালিয়ে খুলনায় নিয়ে আসেন। শারমিনের পিতা হামিদুল্লাহ পরিবারসহ ওই সময় উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছিলেন।
অন্যদিকে ২০২০ সালের ২ মার্চ একরাম উল্লাহ নামের এক রোহিঙ্গা খুলনা সদরের রেলওয়ে গার্ড কলোনির ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্টের আবেদন করেন। ওই দিন বেলা ৩টার দিকে ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়ার সময় তাকে রোহিঙ্গা ডাটাবেজের মাধ্যমে শনাক্তের পর আটক করা হয়। একরাম উল্লাহ আনুমানিক দুই তিন বছর আগে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তিনি মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের মেরুল্লা এলাকার বাসিন্দা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়