সরকারি তিন ব্যাংকে নতুন এমডি

আগের সংবাদ

নিরাপত্তাহীন নির্মাণের খেসারত

পরের সংবাদ

উত্তরায় গার্ডার চাপায় নিহত ৫

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** প্রধানমন্ত্রীর শোক প্রকাশ ** বেঁচে আছেন নবদম্পতি ** তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন **

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের একটি গার্ডার চলন্ত প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে শিশুসহ একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হয়েছেন। তারা বৌভাত অনুষ্ঠান শেষে নবদম্পতিকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। গতকাল সোমবার বিকাল ৪টার দিকে জসীমউদ্দীন এলাকার আড়ং ভবন ও প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে এ হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন বরের বাবা রুবেল (৫০), কনের মা ফাহিমা (৪২), খালা ঝর্ণা (২৮) এবং ঝর্ণার দুই শিশু সন্তান জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। গাড়ির ভেতরেই চাপা পড়েছিলেন তারা। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশের পাশাপাশি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিআরটি।
এই দুর্ঘটনায় আহত নবদম্পতি হৃদয় ও রিয়া মনিকে উদ্ধার করে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছে পুলিশ। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, নিহত রুবেলের ছেলে হৃদয়ের সঙ্গে রিয়া মনির বিয়ে হয় শনিবার। গতকাল বৌভাত শেষে নবদম্পতিকে নিয়ে আশুলিয়ার খেজুরবাগান এলাকার বাসায় ফিরছিল পরিবারটি। তাদের গ্রামের বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায়।
এদিকে দুর্ঘটনার পরে উত্তরা এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়। ঘটনাস্থলের আশপাশে ভিড় জমায় উৎসুক জনতা। পরিবারের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে উত্তরার বাতাস। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৪০ টন ওজনের গার্ডারটি উপরে ওঠানোর

সময় ক্রেন হেলে যাওয়ায় মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। মূলত গার্ডারের ওজন বেশি হওয়ায় ক্রেনটি হেলে যায়। বিআরটি কর্তৃপক্ষ বলছে, যান্ত্রিক ত্রæটির কারণেই এ দুর্ঘটনা। তবে এর পেছনে ক্রেনচালকের দায় থাকতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, ক্রেন দিয়ে গার্ডার ওঠানোর কাজ চলছিল। এ সময় নিচ দিয়ে একটি প্রাইভেটকার যাচ্ছিল। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, হঠাৎ ক্রেনটির এক পাশ হেলে যাওয়ায় গার্ডারটি ছিটকে গাড়ির ওপরে পড়ে। ভারী গার্ডার মাঝ বরাবর পড়ায় প্রাইভেট কারটি একদম চ্যাপ্টা হয়ে যায়। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া গাড়িটি উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষও নানা চেষ্টা করতে থাকেন। প্রায় ৩ ঘণ্টা চেষ্টার পর সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে গার্ডার সরানোর পর প্রাইভেট কারে চাপা পড়া অবস্থায় পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, গার্ডারটি যখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরানোর কাজ চলছিল, তখনই ক্রেনটি বাম্পিং করছিল। গার্ডারের ওজন বেশি হয়ে যাওয়ায় একপর্যায়ে ক্রেনটি কাত হয়ে যায়। মূলত অতিরিক্ত ভারের কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটে। তারা এজন্য নির্মাণ সংস্থার অবহেলাকে দায়ী করছেন।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, গার্ডারের ওজন ক্রেনের ওজনের চেয়ে বেশি হওয়ার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এটি সরাতে হলে গার্ডারের চেয়ে বেশি ওজনের ক্রেন লাগবে।
উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন জানান, বক্সগার্ডার ওঠানোর সময় ভারসাম্য রাখতে না পারায় বহনকারী ক্রেন একদিকে কাত হয়ে যায়। তখন গার্ডারটি গাজীপুরগামী একটি প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে গেলে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ সময় সেখানে কোথাও কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল না।
এদিকে জনবহুল সড়কে কর্মব্যস্ত সময়ে কেন এ কাজ করা হচ্ছিল? এত ভারী একটি বস্তু তোলার সময় নিচ দিয়ে কীভাবে গাড়ি গেল? কেন ক্রেনটি নিয়ন্ত্রণ হারাল? কেনই বা নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল না এসব প্রশ্নের উত্তর মিলছে না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিরাপত্তার চর্চাগুলো অনুসরণ করা হলে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার কোনো কারণই নেই। এখানে প্রশাসনিক ব্যর্থতা ছিল। তিনি আরো বলেছেন, ঠিকাদার সঠিকভাবে সব সাবধানতা মেনে কাজ করছে কিনা, এটি তদারকির দায়িত্ব প্রশাসনের। সেটি করা হয় না বলেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অবহেলা করে থাকে।
বিআরটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের গার্ডারটি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেয়ার সময় সম্ভবত ক্রেন কাত হয়ে নিচে পড়ে যায়। ঘটনার জন্য কে দায়ী এবং কীভাবে ঘটল? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমি না জেনে কিছু বলতে পারব না। ক্রেন কাত হয়ে গেছে, এটা যান্ত্রিক সমস্যা। এটা নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত না জেনে কিছু বলতে পারব না। বিআরটি প্রকল্প পরিচালক (আরএইচডি) ইলিয়াস বলেন, এ ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এখানে এসেছি; কেন, কী কারণে ঘটেছে এমন মর্মান্তিক ঘটনা- সেটা খুঁজে বের করতে একটু সময় লাগবে। এ বিষয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সেতু ভবনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিআরটি প্রকল্পের কাজ বেশ কয়েকটি ধাপে হচ্ছে। উত্তরা হাউজ বিল্ডিং থেকে চেরাগ আলী পর্যন্ত সেতু বিভাগের আন্ডারে। আর হাউজ বিল্ডিং থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়ক বিভাগের আওতায়। দুর্ঘটনা যেখানে ঘটেছে, সেটা সড়ক বিভাগের আওতায়।
প্রধানমন্ত্রীর শোক : এ হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রধানমন্ত্রী নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুলাই গাজীপুরে একই প্রকল্পের ‘লঞ্চিং গার্ডার’ চাপায় এক নিরাপত্তারক্ষী নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় এক শ্রমিক ও একজন পথচারী আহত হন। এছাড়াও ফ্লাইওভার নির্মাণের সময় ঢাকার তেজগাঁও ও মালিবাগ মোড় এবং চট্টগ্রামেও প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে ২০১২ সালে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়ে ২৯ জনের প্রাণহানি হয়। এসব ঘটনায় কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা গণমাধ্যমে আসেনি।
২০১২ সালে বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৭ সালে। তবে নানা জটিলতায় বারবার পিছিয়েছে কাজ। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে ৬৮ শতাংশ। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়