ঢাবি সাংস্কৃতিক : সংসদের আয়োজন চিঠি লেখা যাবে ‘প্রিয় বঙ্গবন্ধু’কে

আগের সংবাদ

নান্দনিক বঙ্গবন্ধু

পরের সংবাদ

মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও : সংকটে-সম্ভাবনায় সবার আগে অগ্রণী ব্যাংক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : দেশের যে কোনো সংকট কিংবা প্রয়োজনে বিগত বছরগুলোতে সবার আগে এগিয়ে এসেছে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ের কঠিন জ¦ালানি সংকট- দেশের সব প্রয়োজনে মোহম্মদ শামস-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন অগ্রণী ব্যাংক সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। গত প্রায় ছয় বছর ধরেই দেশের উন্নয়নে নির্ভরযোগ্য সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটি। একই সঙ্গে প্রধান সূচকগুলোতে উঠে এসেছে শীর্ষস্থানে। জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়েও কর্পোরেট সংস্কৃতির বিকাশের মাধ্যমে বড় অঙ্কের মুনাফা করতে সক্ষম হচ্ছে ব্যাংকটি। এসবই সম্ভব হয়েছে দেশের প্রতি ব্যাংকটির নেতৃত্বের সর্বোচ্চ আনুগত্যের কারণে।
বর্তমানে সারাবিশ্বে চলমান জ¦ালানি সংকটের মাঝেও বাংলাদেশ যে এখনো সংকটে পড়েনি এর বড় অবদান অগ্রণী ব্যাংকের। ব্যাংক খাতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডলার সংকটের কারণে দেশের অনেক ব্যাংক জ¦ালানি তেল, গ্যাস আমদানির এলসি খুলতে চায়নি, এমনকি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) এলসিও খুলতে চায়নি। তখন দেশের প্রয়োজনে এগিয়ে এসেছে অগ্রণী ব্যাংক।
পাশাপাশি দেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণের জন্য ১৫টি পাওয়ার প্লান্টে ২ হাজার ৩৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২৭ হাজার ৭২৫ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছে ব্যাংকটি। পায়রা বন্দরে নির্মাণাধীন এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্লান্টে ২ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুরি প্রদান করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম ভোরের কাগজকে জানান- দেশের সব সংকটে অগ্রণী ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পেট্রোবাংলার এলসি অনেক ব্যাংক ফিরিয়ে দিয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। কোনো ধরনের হয়রানিমুক্তভাবে তাদের সব ধরনের ব্যাংকিং সুবিধা দিয়ে দেশের জ¦ালানি খাত সচল রাখতে সাপোর্ট দিয়েছি।
আমরা মাত্র ৫ শতাংশ বন্ড নিয়ে লোকসান দিয়েও এসব ব্যাংকিং করেছি। শুরু থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের পাশে ছিল। তারা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ডলার সরবরাহ করেছে। মুনাফার জন্য নয়, দেশের জন্য আমরা এসব বিনিয়োগ করছি, যা এখনো চলমান। একমাত্র ব্যাংক হিসেবে জ¦ালানি খাতে আমরা যে ভূমিকা রেখেছি অন্য যে কোনো ব্যাংকের তুলনায় তা অনেক বেশি।
বাঙালি জাতির আত্মমর্যাদার প্রতীক যে সেতুটি, সেই পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রত্যক্ষ অংশীদার অগ্রণী ব্যাংক। বিশ্বব্যাংকসহ ঋণদাতা সংস্থাগুলো যখন মিথ্যা অজুহাত তুলে সেতুটির অর্থায়ন থেকে সরে গেল, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। আর এই সেতুর জন্য প্রয়োজনীয় সব বৈদেশিক মুদ্রা এককভাবে সরবরাহ করে অগ্রণী ব্যাংক। ইতোমধ্যে ব্যাংকটি পদ্মা সেতু প্রকল্পে নিজস্ব উৎস থেকেই ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করেছে।
দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনের সব খাতে বিনিয়োগ করেছে অগ্রণী ব্যাংক। সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বর্তমানে রেমিট্যান্স আহরণে ১ নম্বর, আমদানিতে ১ নম্বর, অফশোর ব্যাংকিংয়ে ১ নম্বর, রপ্তানিতে শীর্ষে, গ্রিন অর্থায়নে শীর্ষে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে অর্থায়নে শীর্ষে রয়েছে অগ্রণী। পাশাপাশি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা মুনাফা করার ঘোষণা দিয়েছেন অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম, যিনি বঙ্গবন্ধু কর্নারের রূপকার হিসেবে দেশব্যাপী সমাদৃত।
অগ্রণী ব্যাংকের কার্যক্রম সম্পর্কে মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, দেশের বৃহৎ শিল্প, ক্ষুদ্র শিল্প ও কৃষিতে অগ্রণী ব্যাংকের বিনিয়োগ সব ব্যাংকের চেয়ে বেশি। দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপে আমরা বিনিয়োগ করেছি। একসময় শিল্প গ্রুপগুলো সরকারি ব্যাংক এড়িয়ে চলত। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর তাদের অগ্রণী ব্যাংকে নিয়ে এসেছি। তারা এই ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসা করে দ্রুত সেবা পাচ্ছে। দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পে বিনিয়োগ করে যাচ্ছি। সরকারি ব্যাংকের মধ্যে সর্বপ্রথম এবং একমাত্র ব্যাংক হিসেবে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছি। অফশোর ব্যাংকিংয়ে বর্তমানে মোট বিনিয়োগ ১৪ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা।
সাম্প্রতিক সময়ে অগ্রণী ব্যাংকের এই ম্যাজিক্যাল উত্থানের কারণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে ৪৫ বছরে ব্যাংকটিতে যা কাজ হয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই তার তুলনায় বেশি কাজ হয়েছে ২০১৭ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত। যে কারণে গত ৫ বছরে অগ্রণী ব্যাংকের ইতিহাসে সাফল্য ধরা দিয়েছে সবচেয়ে বেশি। করোনা মহামারিসহ নানামুখী প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সাম্প্রতিক সময়ে আর্থিক খাতের আইকনিক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
অগ্রণী ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে, ১৯৭২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪৫ বছরের তুলনায় ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে ব্যাংকটির আমানত বেড়েছে ১০৪ শতাংশ, ঋণ ও অগ্রিম বেড়েছে ১২৫ শতাংশ, বিনিয়োগ বেড়েছে ৭২ শতাংশ, মোট সম্পদ বেড়েছে ৯২ শতাংশ, গ্রামীণ ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৫৮ শতাংশ, শিল্প ঋণ বেড়েছে ১০৬ শতাংশ এবং এসএমই খাতে অগ্রিম বেড়েছে ১৬০ শতাংশ। পাশাপাশি লোকসানি শাখা কমেছে ৭৭ শতাংশ; শ্রেণিকৃত ঋণের হার ২৯ শতাংশ থেকে কমে ১৩ শতাংশে নেমেছে। অর্থাৎ অনেক ক্ষেত্রেই ৪৫ বছরে, যা অগ্রগতি হয়েছে তার চেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে গত ৫ বছরে।
নানা অনিয়মের অভিযোগে পর্যুদস্ত অগ্রণী ব্যাংকের সংকট মুহূর্তে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পান মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম। দায়িত্ব নিয়ে ব্যাংকটিকে দেশসেরা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করার ঘোষণা দেন তিনি। মাত্র ৬ বছরের মধ্যেই নিজের প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন তিনি। দায়িত্বকালে অনিয়মের অভিযোগ থেকে মুক্ত করে একটি সুশাসনের ব্যাংক হিসেবে শীর্ষে নিয়ে গিয়েছেন অগ্রণীকে। সম্প্রতি তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেছেন, চলতি বছর আমি দায়িত্বে থাকি আর না থাকি ডিসেম্বরের মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করবে অগ্রণী ব্যাংক।
বিভিন্ন সূচকে অসামান্য অগ্রগতির কারণে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড গত ৫ বছরে অনেকগুলো সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালে অ্যারাবিয়ান ব্যাংকার অ্যাওয়ার্ড, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড, সিটিব্যাংক এনএ পারফরমেন্স এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড, ২০১৯ সালে আইসিএমএবি বেস্ট করপোরেট অ্যাওয়ার্ড উল্লেখযোগ্য। প্রথমবারের মতো অগ্রণী ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি ২০১৯-২০২০ এর মূল্যায়নে প্রথম স্থান অর্জন করে।
আর বৈদেশিক রেমিট্যান্স আহরণে অগ্রণী ব্যাংক বিগত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে ১ম এবং দেশের সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আছে। ২০২০ সালে দেশীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবুজ অর্থায়নে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। এছাড়া ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের সিএমএসএমই ঋণ বিতরণে প্রথম হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংককে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। অগ্রণী ব্যাংক রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকসমূহের মধ্যে অনলাইন ব্যাংকিংয়ে প্রথম, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে প্রথম, রেমিট্যান্স আহরণে ধারাবাহিকভাবে প্রথম হয়ে আসছে। অগ্রণী ব্যাংক পরপর ৪ বছর আইসিএবি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহম্মদ শামস-উল ইসলামকে ‘বেস্ট ব্যাংকার’ হিসেবে ‘৮ম ইন্টারন্যাশনাল গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড-২০১৮’-তে ভূষিত করেছে ড. ওয়াজেদ মিয়া মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন।
সবকিছুর সঙ্গে প্রযুক্তিবান্ধব সেবা প্রদানেও এগিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। বর্তমানে ৯৬২টি শাখায় রিয়েলটাইম অনলাইন ব্যাংকিং সেবা রয়েছে, যা সংখ্যার বিবেচনায় বাংলাদেশে প্রথম স্থানে। ব্যাংকটি বর্তমানে সব শাখার মাধ্যমে বিইএফটিএন, আরটিজিএস, ই-টেন্ডারিং, ই-জিপি, ই-চালান সেবা দিচ্ছে। সারাদেশে ৩ হাজার ১৯৭টি এটিএম বুথে ২৪ ঘণ্টা ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। এছাড়া ২৪ ঘণ্টা বিকাশের মাধ্যমে ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করা যাচ্ছে। পাশাপাশি ডিজিটাল লোন প্রোডাক্ট চালু করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়