ঢাবি সাংস্কৃতিক : সংসদের আয়োজন চিঠি লেখা যাবে ‘প্রিয় বঙ্গবন্ধু’কে

আগের সংবাদ

নান্দনিক বঙ্গবন্ধু

পরের সংবাদ

মাছ মাংস ডিম সবজিও চড়া

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় শীর্ষে থাকে ডিম। পুষ্টিবিদদের মতে, ডিম পুষ্টি উপাদানে ভরপুর একটি প্রাকৃতিক খাদ্য। একটি সেদ্ধ ডিম থেকে সাধারণত ৭৭ ক্যালরি পাওয়া যায়, যা দীর্ঘ সময় শক্তি জোগায় এবং ক্ষুধা কমায়। কিন্তু সেই ডিমের দামও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। একটি ডিম কিনতে এখন ব্যয় করতে হচ্ছে ১৩ টাকা। মাংসের অগ্নিমূল্যের সময়ে যারা পুষ্টির অভাব পূরণে ডিমের ওপর নির্ভরশীল, তাদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
ডিমের দাম বৃদ্ধি নিয়ে এগ প্রডিউসার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী ভোরের কাগজকে বলেন, একদিন বয়সি বাচ্চা মুরগি প্রয়োজনমতো আলো পাচ্ছে না। ওর আলো দরকার ১৬ ঘণ্টা, কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে

আলো পাচ্ছে ৪-৫ ঘণ্টা। পাশাপাশি উৎপাদন খরচ বেড়েছে, খাদ্যের দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, বড় খামারিরা নয় বরং প্রান্তিক খামারিরাই সিংহভাগ ডিম উৎপাদন করে থাকে। গ্রামে বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। হিটস্ট্রেসের কারণে মুরগির ডিম পাড়ার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অনেক মুরগি মারা যাচ্ছে। এতে একদিকে উৎপাদন কমছে অন্যদিকে খামারির লোকসান বাড়ছে। পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ পেলে ডিমের দাম আবার কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
জানা গেছে, প্রতিদিনই লাগামহীনভাবে বাড়ছে কোনো না কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। তেল, চিনি, চাল, ডাল, সবজির পর এবার অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে মুরগি ও ডিমের দাম। এছাড়া রাজধানীর বাজারগুলোতে চলছে ছোট মাছের আকাল। আবার বড় মাছে হাত দেয়া যাচ্ছে না। ইলিশের দাম ভরা মৌসুমেও ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই বললেই চলে। নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম প্রসঙ্গে কনজিউমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরকারকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে বাজারের সাপ্লাই চেইন উন্নত করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে সরকারি পর্যায়ে ট্যাক্স সমন্বয় বা আমদানির মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করা এ সময় ঠিক হয়নি। সরকার লাভ করতে পারে না। তারা জনগণকে সেবা দেবে। এখন নতুন করে পরিবহন খরচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নি¤œ আয়ের মানুষরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। নি¤œ ও মধ্যবিত্তরা এখন চাপে আছেন।
তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ ও ২০১০ সালে ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছিল। কারণ ছিল বার্ড ফ্লু। তখন এ রোগের কারণে অনেক খামার বন্ধ হয়ে সরবরাহ সংকট তৈরি হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ২০০৮-০৯ ও ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে মুরগির ডিমের হালির গড় দাম ছিল ২৭ টাকার কাছাকাছি। সর্বশেষ গত জুলাইয়ে গড় দাম ছিল ৪০ টাকার কিছু কম। ডিমের দাম যখন কম থাকে, তখন ফার্মের মুরগির বাদামি ডিম সাধারণত প্রতি হালি ৩০ থেকে ৩২ টাকায় বিক্রি হয়। যখন বাড়ে, তখন তা ৪০ টাকা পর্যন্ত ওঠে।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সপ্তাহখানেকের মধ্যে প্রথমবারের মতো ফার্মের মুরগির ১ ডজন ডিমের দাম রেকর্ড মূল্য ১৫০-১৫৫ টাকায় উঠেছে। হালিতে বেড়েছে কমপক্ষে ১০ টাকা। ৪০ টাকা হালি মুরগির ডিম (লাল) ৫০-৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর একাধিক বাজারে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ আগে খুচরা দোকানে লাল ডিমের ডজন যেখানে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই ডিমের ডজন গতকাল ছিল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। প্রতি ডজন ডিমের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। আর হালিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা। বাজারে একটি ডিমের দাম পড়ছে প্রায় ১৩ টাকা। অন্যদিকে, পাইকারি বাজারে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকায়। আর প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪৪ টাকায়। দেশে এর আগে কখনো এত দামে মানুষকে ডিম কিনতে হয়নি বলে জানিয়েছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
বাজারে বাড়তি দামের কারণে সংসার খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে সীমিত আয়ের পরিবারগুলো। অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার খরচ চালাতে তাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় মাছ, ডিম, মাংস ও সবজি কেনা কমিয়ে দিয়েছে। পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় থাকেন রফিকুল আলম। একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন তিনি। মালিবাগ কাঁচাবাজার এলাকায় কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, সংসার চালাতে যা প্রয়োজন সবকিছুর দাম বেড়েছে, কিন্তু আয় বাড়েনি। এজন্য এখন মাছ, মাংস, ডিম খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি। আগে ৪ কেজি মুরগি কিনতাম মাসে, এখন কেনা হয় ২ কেজি। ডিম ১২টির জায়গায় ৪টি কিনি। তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েকদিন ধরে লাফিয়ে বাড়ছে ব্রয়লার মুরগির দামও। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকায় ছুঁয়েছে।
অন্যদিকে, মুরগির ডিমের পাশাপাশি বেড়েছে হাঁসের ডিমের দামও। হাঁসের ডিমের প্রতি ডজন ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। হালি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকায়। প্রতিটি হাঁসের ডিম ১৫ থেকে ১৬ টাকা দিয়ে একজন ক্রেতাকে কিনতে হচ্ছে। প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৫ টাকা, বাজারে এখন ৫২ টাকা কেজির নিচে চাল নেই। বেশির ভাগ সবজি এক সপ্তাহের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ৫০ টাকা থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের ভান্ডারী ফার্মার আড়তদার মোহম্মদ আলী বলেন, কুষ্টিয়া থেকে বেগুন, কচু, কাঁচামরিচসহ সবজি আসে। আগে যে ট্রাক ভাড়া ছিল ১৩ হাজার টাকা, এখন সেটি হয়েছে ১৭ হাজার টাকা। কারওয়ান বাজারের রিফাত স্টোরের বিক্রেতা মোহম্মদ রিফাত বলেন, প্রতিটি পণ্যের দাম কেজিতে অন্তত ৫ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি খোলা আটা ৩৮ টাকায় কিনে ৪০ টাকা বিক্রি করেছি। এখন সেই আটা আমাদেরই পাইকারি কিনতে হচ্ছে ৪৬ টাকায়। মসুর ডালের দাম ৮ টাকা বাড়ায় বিক্রি করছি ১৪০ টাকায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়