ঢাবি সাংস্কৃতিক : সংসদের আয়োজন চিঠি লেখা যাবে ‘প্রিয় বঙ্গবন্ধু’কে

আগের সংবাদ

নান্দনিক বঙ্গবন্ধু

পরের সংবাদ

প্রভাবশালীদের মালিকানায় অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : প্রথম ঘটনাটি ২০১৭ সালের। সরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন- এমন ১০ চিকিৎসকের পাশাপাশি ব্যবসায়ী, স্থানীয়সহ ২১ জন মিলে স্যার সলিমুল্লহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের দেয়াল ঘেঁষে গড়ে তুলেছিলেন মেডিলাইফ স্পেশালাইজড হাসপাতাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন পাওয়ার আগেই হাসপাতালটি চালু করা হয়েছিল। হাসপাতালটির চেয়ারম্যান ছিলেন ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের ডা. মোশাররফ হোসেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং মিটফোর্ড হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিরাও এই প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, সরকারি চাকরিরত অবস্থায় কোনো ব্যক্তি বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় থাকতে পারেন না। যদি কেউ এমনটি করে থাকেন, তা চাকরিবিধির লঙ্ঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।
দ্বিতীয় ঘটনাটি চলতি বছর ৯ আগস্টের। নিবন্ধন ছাড়া ভুয়া চিকিৎসক দিয়ে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে এসপিএ রিভার সাইড মেডিকেল সেন্টার নামের এক ক্লিনিক চালাচ্ছিলেন ডা. এইচ এম উসমানী। অবৈধ এই প্রতিষ্ঠানে ভুয়া চিকিৎসক দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়- এমন খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন ইনডিপেনডেন্ট টিভির সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মিসবাহ, ক্যামেরাপারসনসহ গাড়ির চালক। নিজের সন্ত্রাসী বাহিনী, কামরাঙ্গীরচর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিলনসহ এই ঘটনায় অংশ নেন উসমানী নিজেও। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন হাসান মিসবাহ।
তৃতীয় ঘটনাটি ঘটেছে চলতি বছরের ৬ জুন। মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া বাজারে প্রশাসনের বন্ধ করে দেয়া মা প্রাইভেট হাসপাতাল নামক একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে এক রোগীর মৃত্যু হয়। হাসপাতালটির মালিক মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স কারিমন নেছা।
চতুর্থ ঘটনাটিও চলতি বছরের। ২৯ মে; তখন সারাদেশে অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান চলছিল বেশ জোরেশোরেই। নারায়ণগঞ্জের পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিয়েছেন, এমন এক নারীকে তার সদ্যোজাত সন্তানসহ অপারেশন

টেবিলেই ফেলে রেখে পালিয়ে গিয়েছিলেন চিকিৎসক-নার্সসহ ক্লিনিকের সবাই। কারণ বৈধ কাগজপত্র থাকা তো দূরের কথা কোনো ধরনের কাগজপত্রের জন্য আবেদনই করেনি এই প্রতিষ্ঠানটি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুটিকয়েক ঘটনা দিয়ে অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক পরিস্থিতি হয়তো বোঝা যাবে না। তবে দেশের অসংখ্য অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অধিকাংশের মালিক স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎক, টেকনিশিয়ানসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী কিংবা তাদের স্ত্রীরা। এই পরিস্থিতি হঠাৎ করে হয়েছে এমনটি নয়।
গত ২৫ মে থেকে অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালিত অভিযানে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে করা হয়েছে জেল-জরিমানাও। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এই অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। চলমান ওই অভিযানের মোবাইল কোর্ট সূত্র ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের তথ্যও বলছে, বেশির ভাগ অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই অব্যবস্থাপনার শেকড় চলে গেছে অনেক গভীরে। প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রোগীকে জিম্মি করে তারা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাঝে সাময়িক বন্ধ করে দিলেও কয়েকদিন পর সমঝোতার ভিত্তিতে আবার চালু হয় সেই প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), সিভিল সার্জন কার্যালয় ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর আঁতাতে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তারা নিয়মিত মাসোহারাও পাচ্ছেন সেখান থেকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু কর্মকর্তা, পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় এসব অবৈধ ক্লিনিক চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এছাড়া সিটি করপোরেশন, কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর- এসব প্রতিষ্ঠানকেই ম্যানেজ করে অবৈধ ক্লিনিক মালিকরা তাদের ব্যবসা চালাচ্ছেন।
অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চিকিৎসক, রাজনৈতিক নেতা ও ক্ষমতাসীনদের জড়িত থাকার প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ভোরের কাগজকে বলেন, অবৈধ হাসপাতালের এই যে বিস্তৃতি- তা একদিনে হয়নি। প্রশাসনকে আমরা তাগিদ দিয়েছি। সীমিত জনবল দিয়ে এত সংখ্যক সেবা প্রতিষ্ঠানের কাজ তদারকির কাজটিও কঠিন হয়ে পড়ে। তদারকির বিষয়টি আরো শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। সেই চেষ্টাই আমরা করছি। শক্তিশালী ৪টি কমিটি করা হয়েছে। তারা প্রথমে ২০টি জেলাকে সুপারভিশন করবে। আমরা কাউকে হেনস্তা করতে চাই না। কিন্তু অবৈধভাবে স্বাস্থ্যসেবার মতো একটি সেবা কেউ দিতে পারে না। যারাই এমন কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা চাই স্বাস্থ্যসেবার মানসম্মত উন্নয়ন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়