কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর তুরাগ আবাসিক এলাকায় অনুমোদনহীনভাবে বহুতল ভবনে গড়ে উঠেছে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য মজুতের গুদাম। এর পাশেই রিকশা গ্যারেজের ভেতরে গড়ে উঠেছে ভাঙ্গাড়ি দোকান। কোনো ধরনের সতর্কতা অবলম্বন না করায় সেখানে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটলে ৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। কামারপাড়া রাজাবাড়ি পুকুরপাড়ে ভাঙ্গাড়ির দোকানে বিস্ফোরণের সূত্রপাত কন্টেইনারে রাখা মেয়াদোত্তীর্ণ জীবাণুনাশক (হ্যান্ড স্যানিটাইজার) থেকে। গত ৬ আগস্ট ‘ড. রাজেশ জার্ম কিল স্প্রে ফোম’ বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছিলেন ৮ জন। এই জীবাণুনাশক ভারত থেকে আমদানি করে লাফজ ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের গুদাম থেকেই কন্টেইনারগুলো ভাঙ্গাড়ির দোকানে আসে। রিকশার গ্যারেজ মালিক গাজী মাজহারুল ইসলাম বাড়তি আয়ের আশায় গ্যারেজের সঙ্গে ভাঙ্গাড়ির দোকান দেন। সেখানেই বিস্ফোরণ ঘটে।
পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম গতকাল শনিবার ভোরের কাগজকে বলেন, ওই ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কাউকে দোষী পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া গুদামটি সেখান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ ধরনের দাহ্য পদার্থ যে কোনো জায়গায় রাখা যায় না। এর একটি প্রক্রিয়া আছে। এ ধরনের কিছু গুদামের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। তুরাগ থানার ওসি মেহেদী হাসান বলেছেন, তদন্তে কেউ দোষী হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, প্রায় ৩০ বছর ধরে তুরাগের রাজাবাড়ি এলাকায় রিকশা গ্যারেজ মাজহারুলের। দগ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় বেঁচে থাকা সর্বশেষ ব্যক্তি শাহীন মিয়াও (২৪) মারা গেছেন। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া আটজনের মধ্যে ছয়জনই রিকশাচালক। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক এস এম আইউব হোসেন বলেন, শাহীনের শরীরের ৩৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। শাহীনের ভাতিজি তামান্না রহমান জানান, শাহীনের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায়। বাবার নাম হাসান মিয়া। তিনি তুরাগের রাজাবাড়ি এলাকায় থাকতেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে শাহীনের লাশ স্বজনরা গতকাল শনিবার সকালে নিয়ে গেছেন।
তুরাগ থানা পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় কয়েকজন মেয়াদোত্তীর্ণ ‘ড. রাজেশ জার্ম কিল স্প্রে ফোম’-এর কন্টেইনার থেকে ফোম বের করে সেগুলো খালি করছিলেন। এতে করে ভাঙ্গাড়ির দোকানটি একটি গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়। সেখানে কোনোভাবে ‘স্পার্ক’ হলে এই বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে কয়েকশ গজ দূরে একটি ছয়তলা ভবনের তিনটি তলা ভাড়া নিয়ে গুদাম বানিয়েছে লাফজ। সেখানেই মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য মজুত করে তারা। ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ধরনের পণ্য কার্টনে মজুত করা হয়। দুটি তলার বাইরের দেয়ালে সাঁটানো কাগজে লেখা রয়েছে, যে কোনো মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বাধ্যতামূলকভাবে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানকে যথাসময়ে অবহিত করে এবং সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করে ধ্বংস করতে হবে। এ কাজে যথাযথ নিরাপত্তা নীতিমালা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। ওই কাজে যদি কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়, তবে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এমন নির্দেশনার পরও মেয়াদোত্তীর্ণ দাহ্য পদার্থ কীভাবে পাশের গ্যারেজে গেল- এ বিষয়ে ভবনের ভেতরের দায়িত্বশীল কেউ কথা বলতে চাননি। গুদামের ব্যবস্থাপক ও লাফজের প্রতিনিধি মো. তৌফিক সটকে পড়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৬ আগস্ট দুপুরে এ বিস্ফোরণে দগ্ধ ৮ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। ওই দিন রাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় নূর হোসেন (৬০), গাজী মাজহারুল ইসলাম (৪৫) ও আলমগীর হোসেন (২৩) মারা যান। পরদিন ৭ আগস্ট রাতে মারা যান মিজানুর রহমান (৩৫) ও শরিফুল ইসলাম (৩২)। আর ৮ আগস্ট রাতে মারা যান মাসুম আলী (৩৫) ও আল আমিন (৩০)। মাজহারুল ইসলাম ভাঙ্গাড়ি দোকান ও পাশের রিকশার গ্যারেজের মালিক ছিলেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।