বাড়িসহ বিপুল সম্পদ : অনুসন্ধান চেয়ে ওসি মনিরুলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট

আগের সংবাদ

শ্রমিক ধর্মঘটে ‘অচল’ চা শিল্প

পরের সংবাদ

সুকান্ত ভট্টাচার্য : মেধা ও মননে এক বিস্ময়কর প্রতিভা

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সুকান্ত ভট্টাচার্য রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কাব্যের তরুণ কবি। তার কাব্যের মূল সুর অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে শ্রমজীবী সাধারণ মানুষকে বিদ্রোহ ও নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম। তার কবিতা প্রকৃতপক্ষে গণ-আন্দোলনের সংগ্রামী মানুষের চিত্ত-চেতনার সঙ্গে নিবিড় একাত্মতায় লীন। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় সুকান্তের কবিতা বাঙালির মনে সাহস ও শক্তি যুগিয়েছে। বাঙালির প্রতিটা আন্দোলন-সংগ্রামে এ ধারা আজো অব্যাহত। বিপ্লবী বলতে যা বোঝায় সুকান্ত-প্রতিভা তাই। বামপন্থি বিপ্লবী কবি হিসেবে শোষিত মানুষের জীবন-যন্ত্রণা, বিক্ষোভ ও বিদ্রোহের হুঙ্কার তার কবিতায় বলিষ্ঠভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। সুকান্ত জনগণের মধ্যে জীবনের আকাক্সক্ষাকে মুখর করে তোলার তপস্যায় তার বাক্সময় জীবনকে আহুতি দিয়েছেন।
সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯২৬ এর ১৫ আগস্ট বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়া উপজলোর উনশিয়া গ্রামে পৈতৃক নিবাসে। পিতা-নিবারণ ভট্টাচার্য, মা-সুনীতি দেবী। কলকাতার বেলেঘাটা দেশবন্ধু স্কুল থেকে ১৯৪৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হন। এ সময় ছাত্র আন্দোলন ও বামপন্থি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ায় তার আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। সুকান্তের বাল্যবন্ধু ছিলেন কবি অরুনাচল বসু। সুকান্তসমগ্রতে লেখা সুকান্তের চিঠিগুলোর বেশিরভাগই অরুনাচল বসুকে লেখা। অরুনাচল বসুর মাতা কবি সরলা বসু সুকান্তকে পুত্রস্নেহে দেখতেন। সুকান্ত ছেলেবেলায় মাতৃহারা হলেও সরলা বসু তাকে সেই অভাব কিছুটা পূরণ করে দিতেন। কবির জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছিল কলকাতার বেলেঘাটার ৩৪ হরমোহন ঘোষ লেনের বাড়িতে। সেই বাাড়িটি এখনো অক্ষত আছে। পাশের বাড়িটিতে এখনো বসবাস করেন সুকান্তের একমাত্র ভাই বিভাস ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সুকান্তের আপন ভ্রাতুষ্পুত্র।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের মম্বন্তর, ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতির বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেন। ১৯৪৪ সালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। সেই বছর ‘আকাল’ নামক একটি সংকলনগ্রন্থ তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। কৈশোর থেকেই সুকান্ত যুক্ত হয়েছিলেন সাম্যবাদী রাজনীতির সঙ্গে। পরাধীন দেশের দুঃখ দুর্দশাজনিত বেদনা এবং শোষণ মুক্ত স্বাধীন সমাজের স্বপ্ন, শোষিত মানুষের কর্মজীবন এবং ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য সংগ্রাম তার কবিতার মূল প্রেরণা। ১৯৪১ সালে সুকান্ত কলকাতা রেডিওর গল্পদাদুর আসরে যোগদান করেন। সেখানে প্রথমে তিনি রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করেন। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর সেই আসরেই নিজের লেখা কবিতা পাঠ করে তাকে শ্রদ্ধা জানান। গল্পদাদুর আসরের জন্য সেই বয়সেই তার রচিত গান মনোনীত হয়েছিল আর তার সেই গান সুর দিয়ে গেয়েছিলেন সেকালের অন্যতম সেরা গায়ক পঙ্কজ মল্লিক। সুকান্তকে আমরা কবি হিসেবেই জানি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যেমন কেবল মাত্র কবি ছিলেন না, সাহিত্যের সকল ক্ষেত্রে তার ছিলো অবাধ বিচরণ। তেমনি সুকান্তও ওই বয়সেই লিখেছিলেন কবিতা ছাড়াও, গান, গল্প, নাটক এবং প্রবন্ধ। তার ‘ছন্দ ও আবৃত্তি’ প্রবন্ধটি পাঠেই বেশ বোঝা যায় ওই বয়সেই তিনি বাংলা ছন্দের প্রায়োগিক দিকটিই শুধু আয়ত্বে আনেননি, সে নিয়ে ভালো তাত্ত্বিক দক্ষতাও অর্জন করেছিলেন।
আট-নয় বছর বয়স থেকেই সুকান্ত লিখতে শুরু করেন। স্কুলের হাতে লেখা ‘সঞ্চয়’ পত্রিকায় একটি ছোট্ট হাসির গল্প লিখে আত্মপ্রকাশ করেন। তার ক’দিন পরে বিজন গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘শিখা’ কাগজে প্রথম ছাপার মুখ দেখে তার লেখা বিবেকানন্দের জীবনী। মাত্র এগারো বছর বয়সে ‘রাখাল ছেলে’ নামে একটি গীতিনাট্য রচনা করেন। এটি পরে তার ‘হরতাল’ বইতে সংকলিত হয়। বলে রাখা ভালো, পাঠশালাতে পড়বার কালেই ‘ধ্রæব’ নাটিকার নাম ভূমিকাতে অভিনয় করেছিলেন সুকান্ত। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাল্য বন্ধু লেখক অরুনাচল বসুর সঙ্গে মিলে আরেকটি হাতে লেখা কাগজ ‘সপ্তমিকা’ সম্পাদনা করেন। অরুণাচল তার আমৃত্যু বন্ধু ছিলেন। মার্কসবাদী চেতনায় আস্থাশীল কবি হিসেবে সুকান্ত কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান করে নেন। সুকান্তকে বলা হয় গণমানুষের কবি। অসহায়-নিপীড়িত সর্বহারা মানুষের সুখ, দুঃখ তার কবিতার প্রধান বিষয়। অবহেলিত মানুষের অধিকার আদায়ের স্বার্থে ধনী মহাজন অত্যাচারী প্রভুদের বিরুদ্ধে নজরুলের মতো সুকান্তও ছিলেন সক্রিয়। যাবতীয় শোষণ-বঞ্চনার বিপক্ষে সুকান্তের ছিল দৃঢ় অবস্থান। তিনি তার কবিতার নিপুণ কর্মে দূর করতে চেয়েছেন শ্রেণি বৈষম্য। মানবতার জয়ের জন্য তিনি লড়াকু ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। অসুস্থতা অর্থাভাব তাকে কখনো দমিয়ে দেয়নি। মানুষের কল্যাণের জন্য সুকান্ত নিরন্তর নিবেদিত থেকেছেন। তিনি মানবিক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন। তার অগ্নিদীপ্ত সৃষ্টি প্রণোদনা দিয়ে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে প্রয়াসী ছিলেন। মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বাংলা কাব্যধারার প্রচলিত প্রেক্ষাপটকে আমূল বদলে দিতে পেরেছিলেন। তার কবিজীবনের মধ্যে ঘটেছে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ আর যুদ্ধজনিত হাহাকার। দরিদ্র আর ব্যর্থতার হতাশা বুকে নিয়ে অক্ষম দেহে তিন অক্লান্ত ভঙ্গিতে লিখে গেছেন। তার পারিবারিক পরিবেশ মানসিক বিকাশের অনুকূলে ছিল না, তার উপরে ছিল নি¤œবিত্তের বাঙালি পরিবারের অভাব অনটন।
সুকান্ত কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা দৈনিক স্বাধীনতার (১৯৪৫) ‘কিশোর সভা’ বিভাগ সম্পাদনা করতেন। মার্কসবাদী চেতনায় আস্থাশীল কবি হিসেবে সুকান্ত কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান করে নেন। তার কবিতায় অনাচার ও বৈষ্যমের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ পাঠকদের সংকচিত করে তোলে। গণমানুষের প্রতি গভীর মমতার প্রকাশ ঘটেছে তার কবিতায়। তার রচনাবলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো: ‘ছাড়পত্র’ (১৯৪৭ খ্রি.), ‘পূর্বাভাস’ (১৯৫০ খ্রি.), ‘মিঠেকড়া’ (১৯৫১ খি.), ‘অভিযান’ (১৯৫৩ খ্রি.), ‘ঘুম নেই’ (১৯৫৪ খ্রি.), ‘হরতাল’ (১৯৬২ খ্রি.), ‘গীতিগুচ্ছ’ (১৯৬৫ খ্রি.) প্রভৃতি। পরবর্তীকালে উভয় বাংলা থেকে সুকান্তসমগ্র নামে তার রচনাবলি প্রকাশিত হয়।
সুকান্ত ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পিসংঘের পক্ষে ‘আকাল’ (১৯৪৪) নামে একটি কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনা করেন। সুকান্তের কবিতা বিষয় বৈচিত্র্যে ও লৈখিক দক্ষতায় অনন্য। সাধারণ বস্তুকেও সুকান্ত কবিতার বিষয় করেছেন। বাড়ির রেলিং, ভাঙা সিঁড়ি উঠে এসেছে তার কবিতায়। সুকান্তের কবিতা সব ধরনের বাধা-বিপত্তিকে জয় করতে শেখায়। যাপিত জীবনের দুঃখ-যন্ত্রণাকে মোকাবেলা করার সাহস সুকান্তের কবিতা থেকে পাওয়া যায়। তারুণ্যের শক্তি দিয়ে উন্নত শিরে মানুষের মর্যাদার জন্য মানুষকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান সুকান্তের কবিতায় লক্ষণীয়। সুকান্তের কবিতা সাহসী করে, উদ্দীপ্ত করে। তার বক্তব্যপ্রধান সাম্যবাদী রচনা মানুষকে জীবনের সন্ধান বলে দেয়। স্বল্প সময়ের জীবনে তিনি বাংলা সাহিত্যকে অনেক কিছু দিয়ে গেছেন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, জীবনানন্দ দাশসহ সে সময়ের বড় বড় কবির ভিড়ে তিনি হারিয়ে যাননি। নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন নিজ প্রতিভা, মেধা ও মননে। সুকান্ত তার বয়সিক সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করেছেন তার পরিণত ভাবনায়। ভাবনাগত দিকে সুকান্ত তার বয়স থেকে অনেক বেশি এগিয়ে ছিলেন।
তিরিশের বাংলা কবিতায় যে নন্দনতাত্ত্বিক শিল্পভাষা ও সুকুমার জীবনচারিতার স্বপ্নবিমুগ্ধতা লক্ষ করা যায়, তারই প্রতিবাদী চেতনা সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতায় সোচ্চার। শিল্পের জন্য শিল্প নয়, জীবনের জন্যই শিল্প-জীবনানুগ শিল্পবোধ সুকান্তর সমস্ত চেতনা ও বিশ্বাসের আকর ছিল। তাই জীবন ও কবিতাকে তিনি আলাদা করে দেখেননি। বাংলা কবিতায় যে ভাববাদী রোমান্টিক ইলিউশনের প্রচলিত ধারা ছিল, সে প্রথাগত ধারায় সুকান্ত প্রচণ্ড ধাক্কা দিলেন। অবশ্য প্রথম আঘাতটি দিয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। সুকান্ত কবিতার অবয়বে ও অন্তরে ¯িœগ্ধতা ও কুসুমপেলব ন¤্রতাকে ছুটি দিয়ে ক্ষুধাময়, যুদ্ধময়-সাম্প্রদায়িকতা ও আত্মকলহে মগ্ন এক অসুখী-অশান্ত পৃথিবীকে বাস্তব দৃষ্টি দিয়ে দেখেছিলেন। একারণে তিনি লিখেছেন, ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’ তার কবিতার বক্তব্যে কোনো কৃত্তিমতা নেই। সহজ, সরল, স্বচ্ছন্দ ভাব আমদানি করে কবিতাকে দুর্বোধ্যতা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। কবিতায় বাক-প্রতিমা, রূপক, উপমা, প্রতীক ইত্যাদি প্রয়োগে কোন কৃত্রিম জড়তা নেই। একবারে সোজাসুজি বাঁধা-বন্ধহীন দুর্বার গতিতে তার কবিতা জনতার হৃদয়কেন্দ্রে গিয়ে পৌঁছেছে। আমাদের চারপাশে অহরহ অনাদরে অবহেলায় পড়ে থাকা বস্তুকে তিনি কবিতায় তুলে এনেছেন। সুকান্ত ভট্টাচার্য মুক্তিকামী মেহনতি জনতার কথা বলতে গিয়ে অতি তুচ্ছ বিষয়কে কবিত্বমণ্ডিত করে পরিবেশন করেছেন প্রতীকী ব্যঞ্জনায়। বাংলাকাব্যের এটা এক ধরনের নবজন্ম বলা যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন, ‘জীবনে যেমন, কাব্য-সাহিত্যে সরলতা বিশেষণটিতে রিক্ততার ইঙ্গিতটাই আমাদের কাছে বড় বেশি জোরালো। গভীরতা, ব্যপ্তি, তীব্রতা, ভাবৈশ্বর্য ইত্যাদি সবকিছুর ধারক ও বাহক হিসেবে সাদামাটা স্পষ্টভাষী সার্থক কবিতা কল্পনা করতে আমরা পটু ছিলাম, আমাদের অভিজ্ঞতা ও স্বীকৃতি গীতিকবিতা পর্যন্ত। সুকান্তের কবিতায় বাংলা কাব্যসাহিত্যে নবজন্মের সূচনা ছিল।’
সুকান্ত এক নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং এজন্যেই তিনি যুদ্ধ করে গেছেন। তিনি মুক্তিকামী জনতার পাশে থেকে সংগ্রাম করেছেন। তার সংগ্রামী জীবনের পরিচয় ছড়িয়ে আছে তার কাব্য ও পত্রগুচ্ছে। এক চিঠিতে কবি লিখেছিলেন, ‘আমি কবি বলে নির্জনতাপ্রিয় হব, আমি কি সেই ধরনের কবি? আমি যে জনতার কবি হতে চাই, জনতা বাদ দিলে আমার চলবে কি করে?’
সুকান্তের কবিতায় স্লোগান আছে। হাজার হাজার কণ্ঠে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত যে ভাষা হাজার হাজার মানুষের মনে আবেগের তরঙ্গ তুলেছে, তাকে কবিতায় সাদরে গ্রহণ করতে পেরেছিল বলেই সুকান্ত সার্থক কবি। তিনি প্রতীক ও সূ² শ্লেষধর্মী উপমার সাহায্যে তার কবিতায় তুলে ধরেছেন শ্রেণি-বৈষম্য, অত্যাচারী আর অত্যাচারিতের সম্পর্ক। ‘সিঁড়ি’, ‘সিগারেট’, ‘দেশলাই কাঠি’, ‘মোরগের কাহিনী’ প্রভৃতি কবিতায় সামাজিক বেদনাকীর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার কবি। এ পৃথিবীকে ভাবি বংশধরদের জন্য সুন্দর করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তিনি। কবি অঙ্গীকার করেন, এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি নবজাতকে কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
কবিতার প্রতি সততা, সৌন্দর্যের প্রতি নিষ্ঠা আর সমাজজীবনের প্রতি ভালোবাসা কবিকে নিয়ে গেছে সাধারণ মানুষ, মজুর, চাষি আর বিপ্লবী সমাজকর্মীদের কাতারে। এ কারণে এত জনপ্রিয়, তার কবিতা মুখে মুখে উচ্চারিত। এর মধ্যে নিহিত তার কবিসত্তার নতুনত্ব ও চিরত্ব।
একাধারে বিপ্লবী ও স্বাধীনতার আপসহীন সংগ্রামী কবি সুকান্ত ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সার্বক্ষণিক কর্মী। পার্টি ও সংগঠনের কাজে অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে নিজের শরীরের উপর যে অত্যাচারটুকু তিনি করলেন তাতে তার শরীরে প্রথম ম্যালেরিয়া ও পরে দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৪৭ সালের ১৩ মে মাত্র ২১ বছর বয়সে কলিকাতার ১১৯ লাউডট ট্রিস্ট্রের রেড এড কিওর হোমে মৃত্যুবরণ করেন। সুকান্ত ভট্টাচার্যের জীবন মাত্র মাত্র ২১ বছরের আর লেখালেখি করেন মাত্র ৬/৭ বছর। সামান্য এই সময়ে নিজেকে মানুষের কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তার রচনা পরিসরের দিক থেকে স্বল্প অথচ তা ব্যাপ্তির দিক থেকে সুদূরপ্রসারী।
সুকান্ত উঠে এসেছিলেন এদেশের মাটির বুক থেকে। এদেশেরই মাটির রসে তার দেহ-আত্মা পরিপুষ্ট। তার কাব্যবাণী শোনার জন্য রবীন্দ্রনাথ এক সময় কান পেতেছিলেন। ‘সৌখিন মজদুরি’ নয় কিষাণের জীবনে তিনি ছিলেন আত্মার আত্মীয়। তাই তো কবিতায় উচ্চারণ করেছেন: সাবাস বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়; জ্বলে-পুড়ে-মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়!

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়