বাড়িসহ বিপুল সম্পদ : অনুসন্ধান চেয়ে ওসি মনিরুলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট

আগের সংবাদ

শ্রমিক ধর্মঘটে ‘অচল’ চা শিল্প

পরের সংবাদ

সাক্ষাৎকার : ড. আতিউর রহমান > নির্মোহ ও সত্যাশ্রয়ী প্রতিবেদন হবে জাতির জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের এই অধ্যাপক ২০১৯ সালে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাবি বঙ্গবন্ধু চেয়ার হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণা এবং প্রকাশনার কাজ করেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি তিনি করেছেন তা হলো ‘নান্দনিক বঙ্গবন্ধু’। শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরের কাগজকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কমিশন গঠন, বঙ্গবন্ধু সরকারের অর্থনীতি, বঙ্গবন্ধুর নান্দনিক দিক, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়নি। জাতি নেপথ্যের ষড়যন্ত্র জানতে পারেনি। কি করা উচিত বলে আপনি মনে করেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ড.

আতিউর রহমান বলেন, নিঃসন্দেহে এমন একটি কমিশন হতেই পারে। এমন সব মানুষকে নিয়ে এই কমিশন গঠন করা উচিত- যাদের ন্যায় নিষ্ঠতা, পেশাদারত্ব এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকার আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত। ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে প্রচুর তথ্যের উৎস খুলে গেছে। আন্তর্জাতিক ও দেশের ভেতরে অনেক বই লেখা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় প্রচুর তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এসবের চুলচেরা বিশ্লেষণ সাপেক্ষে আগামী প্রজন্মের জানার জন্য নির্মোহ এবং সত্যাশ্রয়ী একটি প্রতিবেদন যদি প্রস্তাবিত কমিশন তৈরি করে যেতে পারে সেটিই হবে জাতির শ্রেষ্ঠ উপহার।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে এই গবেষক বলেন, বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশ। তিনিই উদারনৈতিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও সাম্যের বাংলাদেশ ধারণার প্রবক্তা। আর সেই বাংলাদেশের জন্য সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ করার অনুপ্রেরণা এবং নির্দেশ তিনিই দিয়েছিলেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি অকাতরে রক্ত ঢেলে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছে। সেই আদর্শিক বাংলাদেশের যারা বিরোধী ছিলেন, মনেপ্রাণে অনৈতিক ও সা¤প্রদায়িক পাকিস্তানের ভাবাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন, তারাই বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু বৈশ্বিক ঠাণ্ডাযুদ্ধের মধ্যেও আপন মানসিক শক্তি বলে জোটনিরপেক্ষ স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি এবং নয়া বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পক্ষে ছিলেন। তাই বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের মদত দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক শক্তির হস্তক্ষেপও ছিল। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের যোগসাজশেই এই মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ড।
বঙ্গবন্ধু সরকারের অর্থনীতি কেমন ছিল? ৫১ বছরের বাংলাদেশ কি সেই পথেই এগিয়ে যাচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর অর্থনীতির মূলে ছিলেন সাধারণ মানুষ। সারাজীবন তাদের কল্যাণেই তিনি ছিলেন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে নিবেদিত। স্বাধীন বাংলাদেশের পুনঃনির্মাণ এবং আগামীর বাংলাদেশ গড়ার অর্থনৈতিক কৌশলে একথা স্পষ্ট, তিনি তার সোনার বাংলা গড়ার জন্য মানুষের ওপর বিনিয়োগে পূর্ণ বিশ্বাসী ছিলেন। তার দেয়া সংবিধান এবং পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বিনিয়োগের বিন্যাস থেকে বোঝা যায়, তিনি কৃষি খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতেন। পাশাপাশি শিল্পের জাতীয়করণ করলেও ব্যক্তি খাতের বিকাশের দরজা খোলা রেখেছিলেন। সমবায়কেও গুরুত্ব দিতেন। মোট কথা কৃষক, শ্রমিক ও উদ্যোক্তা অন্তঃপ্রাণ বঙ্গবন্ধু সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক সংস্কারে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি বলেন, জনকল্যাণে বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধু তার মতো করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসহ সমাজতন্ত্র তথা সামাজিক সাম্যের অর্থনীতি পরিচালনায় বিশ্বাসী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অর্থনীতিতে উদ্যোক্তাদের স্থান ছিল গভীরভাবে প্রোথিত। বঙ্গবন্ধু মানুষের অসাধ্য সাধন ও সৃষ্টিশীলতায় বিশ্বাসী ছিলেন। উন্নয়নেও তিনি সব মানুষকে প্রীতির বন্ধনে বাঁধতে চেয়েছিলেন। আমাদেরই দুর্ভাগ্য এই মহামতির আদর্শিক অর্থনৈতিক পদ্ধতি দ্বিতীয় বিপ্লবের মর্মকথা বাস্তবে রূপায়ন করার সুযোগ দিল না বিশ্বাসঘাতকের দল।
নান্দনিক বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গে ড. আতিউর রহমান বলেন, সব অর্থেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন এক নান্দনিক নেতা। রফিক আজাদের ভাষায় বলতে পারি, ‘সবচেয়ে রূপবান দীর্ঘাঙ্গ পুরুষ/ তার ছায়া দীর্ঘ হতে হতে, সস্নেহে, আদরে/ তাঁর রক্তে প্রিয় মাটি উর্বর হয়েছে-/ তাঁর রক্তে সবকিছু সবুজ হয়েছে।’ বঙ্গবন্ধুর দেহ ভঙ্গি, অঙ্গুলি হেলন, শিরদাঁড়া টানটান করে দাঁড়ানো, প্রমিত ও আঞ্চলিক ভাষার সম্মিলন ঘটিয়ে হৃদয়ের গহিন তলদেশ থেকে গণমুখী মেঘনাদ উচ্চারণ তাকে বাংলাদেশের হৃদয়ে পরিণত করেছে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও জীবনানন্দের কাব্যিক অনুভূতির অনুভবে তিনি হয়ে ওঠেন আরো শৈল্পিক। আরো নান্দনিক। তাই তো তিনি বাঙালির কাছে এক বিস্ময়কর জাদুকর। নীল আকাশ ভেদ করে তিনি এসেছিলেন আমাদের জাগাতে। তার বিদায়ে বাঙালি ফের তার চলার পথে নোঙর হারিয়ে ফেলে। দেশ চলতে থাকে অন্ধকার পানে এক ‘অদ্ভুত উঠের পিঠে’।
তিনি বলেন, অনেক ত্যাগ, সংগ্রাম ও রক্তের বিনিময়ে ফিরে পাই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে তার কন্যার হাত ধরে। তবে এখনো ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নেই। নানামাত্রিক সংকট তৈরি করতে তাদের জুড়ি নেই। এই ক্রান্তিকালে সাধারণ মানুষের অঙ্গীকার ও সমর্থনই একমাত্র ভরসা। আমরা যেন এমন কিছু না করি- যাতে ষড়যন্ত্রকারীদের হাত শক্তিশালী হয়। বঙ্গবন্ধুর দেখানো সত্য, সুন্দর এবং কল্যাণের পথে বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে হলে সমাজের সর্বত্র দুর্নীতিবিরোধী, অস্বচ্ছতাবিরোধী, অসাম্যবিরোধী এবং জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়